এইদিন ওয়েবডেস্ক,চট্টগ্রাম,০ জানুয়ারী : বাংলাদেশের চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ১১৫২ ফুট বা ৩৬৫ মিটার উচ্চতায় রয়েছে হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান- ৫১ তম সতীপীঠের অন্যতম পীঠ চন্দ্রনাথ মন্দির । অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যে ভরপুর এই শক্তিপীঠে রয়েছে পৌরাণিক স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য মঠ-মন্দির । হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র ও ঐতিহ্যবাহী এই তীর্থস্থানটির উপর বাংলাদেশি কট্টরপন্থী মুসলিমদের নজর দীর্ঘদিনের । সতীপীঠটিকে দখল করতে তারা দীর্ঘ দিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । সতীপীঠটি দখলের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে অপতৎপরতা আরও বেড়ে গেছে । চলছে গভীর ষড়যন্ত্র ।
জানা গেছে,গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে চন্দ্রনাথ ধামের এক নম্বর গেটের সামনে বেশ কয়েকজন মুসলিম যুবক জড়ো হয়ে মন্দিরে হামলা চালায় । তারা মন্দিরের আশপাশে লাগানো ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে দেয় । ইসলামি জিহাদিদের মারধরে আহত হয়েছেন ১০ জন হিন্দু । তাদে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । গত ৩০ ডিসেম্বর, শনিবার ‘টাইগার তামিম’ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী জুতো পরে মাথার ওপর পা তুলে চন্দ্রনাথের একটি মন্দিরের দরজায় ছবি তুলেন পোস্ট করেছিল । যা ঘিরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় হিন্দুদের মধ্যে । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে ওই জিহাদি যুবকের নাম মাহমুদুল হাসান তামিম । কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা ওই যুবক পেশায় কুংফু প্রশিক্ষক । চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন,’অভিযুক্তকে আটক করে জেরা করা হলে সে দাবি করে যে ছবিটি তিন বছর আগের এবং সে আবেগের বশে এমন ছবি তুলেছে ।’ এছাড়া দিন কয়েক আগে ইসলামি জিহাদিদের বিরুদ্ধে পবিত্র ওই তীর্থস্থানে গিয়ে গোমাংস খাওয়া ও ‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল । এমতবস্থায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দুদের পবিত্র সতীপীঠটি কতদিন আগলে রাখা সম্ভব তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন হিন্দুরা ।
হিন্দু পবিত্র গ্রন্থ অনুসারে দেবী সতীর দক্ষিণ হস্তার্ধ পতিত হয়েছিল চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে । কথিত আছে,নেপালের এক রাজা স্বপ্নে দেবীর নির্দেশ পেয়ে পৃথিবীর পাঁচ কোণে পাঁচটি শিবমন্দির নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শিবমন্দির অন্যতম । এখানে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন । অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তাঁর বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। তাঁরা আসবেন জানতে পেরে মহামুনি ভার্গব এখানে স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন। দেবী সীতা তার মধ্যে একটি কুণ্ডে স্নান করেন। এরপর থেকেই ওই কুন্ডের নামকরণ করা হয় সীতাকুণ্ড । ভগবান রান যে কুন্ডটিতে রাম স্নান করেছিলেন সেটির নামকরণ করা হয় রামকুণ্ড। তবে বর্তমানে কুণ্ডগুলো শুকিয়ে গেছে। ইটের দেয়াল দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে স্থানগুলোকে। চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাদদেশে আছে উল্টা পাতালকালী মন্দির, ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রম।
আশেপাশে রয়েছে কাছারি বাড়ি, গিরিশ ধর্মশালা, বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটি, মহাশ্মশানভবানী মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দিরসহ আরও অনেক সনাতনী স্থাপনা। চন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়ার পথে ব্যাসকুণ্ডের পশ্চিম পাড়ে এবং ভৈরব মন্দিরের বাম পাশে একটি বিশাল বটবৃক্ষ আছে । এটি অক্ষয় বট নামে পরিচিত । চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই চন্দ্রনাথ শিব মন্দির দেখা যাবে । ২২০০ এরও বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠে মন্দিরে যেতে হয় । মিনিট ১৫ ওঠার পর একটি ছোট ঝর্ণা দেখতে পাওয়া যায়। যার দুই পাশে দুটি পথ যা উঠে গেছে একদম পাহাড়ের চূড়োয় । পাহাড়ের চারদিকে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য । সিড়ি বেয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আরোহণের পর চন্দ্রনাথ মন্দির পৌঁছানোর আগে বিরুপাক্ষ নামের আরেকটি মন্দির পড়বে। চন্দ্রনাথ শিবটি মন্দিরটি হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থানগুলির মধ্যে অন্যতম । মন্দিরের ভিতরে রয়েছে প্রাচীন শিবলিঙ্গ । এর আশেপাশে অনেক সাধু-সন্নাসীরা বসে ধ্যান করেন। । কেউ কেউ পূজো করে থাকেন ।
এছাড়া পৌরাণিক স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য মঠ-মন্দির আছে এই পাহাড়ে । প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে শিবচতুর্দশী মেলা হয় চন্দ্রনাথ পাহাড়ে । ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু-সন্ন্যাসী আসেন এই তীর্থস্থানে । শিবচতুর্দশী মেলায় ১০-২০ লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীর আগমণ ঘটে বলে দাবি করা হয় । চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানে অবস্থিত হিন্দুদের এই পবিত্র তীর্থস্থানটির । পৌরানিক স্মৃতি বিজড়িত এই তীর্থস্থানের অস্তিত্ব আজ সঙ্কটের মুখে । তীর্থস্থানটির অস্তিত্ব ও পবিত্রতা রক্ষায় দাবি তুলছেন বাংলাদেশি হিন্দুরা ।
অনন্ত ঘোষাল ফেসবুকে লিখেছেন,’আমরা হারাতে বসেছি চন্দ্রনাথ । কারন আমাদের ড্রিম প্লেস শুধু কেদারনাথ, নিজের দেশের চন্দ্রনাথের কি হলো কি হলো না কে দেখে?আমরা হারাতে বসেছি চন্দ্রনাথ…
কারন মন্দির কমিটির দায়িত্বে আছে স্রাইন কমিটি যারা টাকা নিয়ে চুপ থাকবে। আমরা হারাতে বসেছি চন্দ্রনাথ….কারন মন্দিরের আশে পাশের জায়গা গুলো লিজ দেওয়া হয়ছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের।
আমরা হারাতে বসেছি চন্দ্রনাথ..প্রতিনিয়ত মন্দিরে কত পাপ কাজ হচ্ছে দেখে ও না দেখার ভান করে থাকছি।আমরা হারাতে বসেছি চন্দ্রনাথ কারন….
আমাদের হিন্দুদের মধ্যে একতা নেই।আমরা বহুভাগে বিভক্ত। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির আমাদের তীর্থস্থান। এটা কোন ট্যুরিস্ট স্পট নয়। পাহাড় থেকে ভিউ দেখার জন্য ট্যুর দিতে মন চাইছে? বান্দরবান রাঙামাটি,খাগড়াছড়ির অনেক পাহাড় রয়েছে। সেখানে গিয়ে ভিউ উপভোগ করুন।সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় কোন ভিউ উপভোগ/পিকনিক স্পট/ গ্রুপ ট্যুরের জায়গা না। এটা শিবপীঠ। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ করুন । ওঁ নমঃ শিবায়। হর হর মহাদেব ।’
কেউ কেউ দাবি তুলছেন,’সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথে হিন্দু ব্যতীত অন্য কোন জাতির প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হোক।’।