প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ জানুয়ারী : শীতের মরশুম মানেই চারিদিকে বনভোজনের ঘনঘটা।কিন্তু বাড়ির সবাই বনভোজনে বেরিরে গেলে বাড়িতে থাকা আরাধ্য দেবতা গোপাল ঠাকুরের মন খারাপ হবে।এ কথা ভেবে গোপালকে একা ফেলে রেখে বাইরে বনভোজনে যাওয়ার বাসনা পরিত্যাগ করে ফেলেন শহর বর্ধমানের লাকুড্ডির সাহা পরিবার। পরিবর্তে সাহা পরিবার নজিরবিহীন ভাবে গোপাল ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়েই বনভোজনে মাতোয়ারা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন ।যে বনভোজন গোপালের বনভোজন মহোৎসব নামেই এখন খ্যাত । শুধু সাহা পরিবার নয়,দূর দূরান্তে থাকা গোপাল ঠাকুরের অনেক ভক্ত তাঁদের বাড়ির আরাধ্য দেবতা গোপালকে সঙ্গে নিয়ে এই বনভোজন মহোৎসবে সামিল হন।
বর্ধমান শহরের লাকুড্ডি জলকর পাড়ায় সহা পরিবারের বসবাস। পরিবারের প্রবীণ কর্তা তপন সাহা জানান,“বাড়ির আরাধ্য দেবতা গোপাল ঠাকুরকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে কোথাও বনভোজনে যাওয়ার কথা আমরা ভাবতেই পারি না। আমরা তাই বাড়ির গোপাল ঠাকুর কে সঙ্গে নিয়েই বনভোজনের আয়োজন করে থাকি। প্রতিবছর ইংরেজি ডিসেম্বর মাসের শেষ রবিবার গোপালের বনভোজন মহোৎসবের আয়োজন করা হয়। মাঝে দুটো বছর কোভিড অতি মারির কারণে গোপালের বনভোজন মহোৎসবের আয়োজনে ছেদ পড়ে। এ বছর গোপালের বনভোজন মহোৎসব ১৩ তম বর্ষে পদার্পণ করলো । অন্যান বছরের মতো এবছরও শতাধীক ভক্ত তাঁদের বাড়ির আরাধ্য দেবতা গোপালকে সঙ্গে নিয়ে গোপালের বনভোজন মহোৎসবে যোগ দিয়েছেন বলে তপন সাহা জানান।
কি ভাবনা থেকে এমন জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে গোপালের বনভোজন মহোৎসব আয়োজনের শুরু
? এর উত্তরে সাহা পরিবারের কন্যা সম্বৃদ্ধা সাহা বলেন,“ আমাদের পরিবারের সবাই শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ গোপাল ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত।গোপালই আমাদের পরিবারের আরাধ্য দেবতা। সেই গোপালকে বাদ দিয়ে কোথাও যাওয়া বা কিছু করার কথা আমরা বাবতেই পারি না।তেমনই গোপাল ঠাকুরকে বাড়ির সিংহাসনে একা বসিয়ে রেখে কোথাও বনভোজনে যাওয়ার কথাও আমরা ভাবতে পারি না । গোপালকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে আমরা কোথাও বনভোজনে গেলে বাৎসল্য রসের ঠাকুর গোপালের মন খারাপ হবে বলেই আমরা মনে করি । তাই গোপাল ঠাকুরের যাতে মন খারাপ না হয়, তাই আমরা সকল গোপলা ভক্তরা নিজের নিজের বাড়ির ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়েই শীতে বনভোজনে সামিল হই।আমাদের এই বনভোজন তাই গোপালের বনভোজন মহোৎসব নামেই খ্যাত।
শীত পড়তেই ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরুকরে ইংরেজি নববর্ষ শুরুর দিনে বনভোজনে মাতোয়ারা হন বহু
মানুষ। সেইসব বনভোজনে নজর কাড়ে তারস্বরে ডিজে বাজিয়ে চটুল গানের তালে নাচানাচি। পাশাপাশি আহারেড় মেনুতে সুরা থেকে শুরু করে মাছ, মাংস তো থাকেই। কিন্তু গোপালের বনভোজন মহোৎসবে এসবের কোন বালাই থাকে না । সহা পরিবারের অপর কন্যা সীমা সাহা বলেন,’গোপালের বনভোজন মহোৎসবে মাইকে গান বাচনা হয় ঠিকই।তবে তাতে শোনা যায় গোপালের নাম সংকীর্তন ও পুজো পাঠ । আর গোপাল এবং গোপালের ভক্তদের খাবারের মেনুও থাকে সন্পূর্ণ আলাদা।গোপালের বনভোজন মহোৎসবে মাছ, মাংস বা সুরার কোন স্থান নেই। বনভোজন মহোৎসবে গোপালের অন্নভোগের মেনুতে থাকে লাবড়া, বিভিন্ন ভাজাভুজি,কচু শাকের তরকারি ও মোচার তরকারি । আর গোপালের সকল ভক্তদের খাওয়ার জন্য খিচুড়ি রান্নাকরা হয় ।’ এলাকাবাসীর কথায়, গোপালের বনভোজন মহোৎসবের মাহাত্মটাই আলাদা ।এই বনভোভন কে এক কথায় বলা যায় ’একমেবাদ্বিতীয়ম’।।