এইদিন ওয়েবডেস্ক,চট্টগ্রাম,২৫ ডিসেম্বর : নিজের ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের কট্টরপন্থী মানসিকতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইসলাম ত্যাগের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভারত এবং দুই ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশে । চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৪ নম্বর বাহারছড়া ইউনিয়নের দিঘীর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের শাহেদ বিন কাশেমও একই কারনে নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন । কিন্তু একারনে তাকে পড়তে হয়েছিল ইসলামি জিহাদিদের হুমকির মুখে । ফলে প্রাণ বাঁচাতে তিনি ১০ মাস আগে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ।
এদিকে তার অনুপস্থিতির সুযোগে তাদের জায়গা- জমি দখলের চেষ্টা ছাড়াই তার বৃদ্ধ মা,ভাই- বোনদের উপর প্রতিনিয়ত প্রতিনিয়ত হুমকি ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী মুসলিমরা । প্রতিবেশীদের প্রতিনিয়ত কু’কথা শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে রবিবার তার প্রতিবাদ করেছিলেন শাহেদ বিন কাশেমের বিধবা মা দিলরুবা বেগম (৬০) । আর সেই অপরাধে তার উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল প্রতিবেশী আহমদ মিয়ার (৬৫) বিরুদ্ধে । লাঠির আঘাতে বৃদ্ধার বাম হাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় । তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন ।
আহত দিলরুবা বেগম সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন,’আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়ি । তবুও আমাকে বিগত ১০ মাস ধরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কু’কথা শুনতে হচ্ছে । আমি ঘর থেকে বের হলেই আমাকে উদ্দেশ্য করে ‘নাস্তিক’, ‘কুলাঙ্গার’ প্রভৃতি কথা বলে গালিগালাজ করা হয় । রবিবার সকালে যথারীতি আমাকে গালিগালাজ করলে আমি প্রতিবাদ করি । আর তখনই আহম্মদ মিয়া আমার উপর হামলা চালায়। আমাকে লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে লাথি মারে ।’
জানা গেছে,শাহেদ বিন কাশেমের বাবা আবুল কাশেম বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন । বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা দিলরুবা বেগম,এক ভাই জাহিদুল ইসলাম ও এক বোন । শৈশবে শাহেদ বিন কাশেমের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মানসিকতার পরিবর্তন হতে শুরু করে । সম্প্রতি কিছু সময় ধরে কোরান ও হাদিস থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি তুলে ধরে ইসলামের নবীর সমালোচনায় সরব হতে দেখা যায় তাকে । আর এতে বেজায় ক্ষিপ্ত হয় স্থানীয় মৌলবাদীরা । মৌলবাদীরা তাকে ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি দিতে শুরু করলে বাধ্য হয়ে তিনি অজ্ঞাতবাসে চলে যান । দাবি করা হচ্ছে যে শাহেদ বিন কাশেম দেশত্যাগী হয়েছেন ।
এদিকে শাহেদের খুড়তুতো ভাই বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল মুনসুরের পরামর্শে তার বাবা আহম্মদ মিয়া শাহেদ বিন কাশেমদের জমি দখল করে নেয় । যদিও স্থানীয় কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের হস্তক্ষেপে সে ওই জমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় । কিন্তু শাহেদের পরিবারের উপর মানসিক নির্যাতন অব্যাহত থাকে ।
সংবাদ মাধ্যমকে ফোনে শাহেদ বিন কাশেম বলেছেন,’আমি স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করায় আমাকে নির্বাসিত হতে হয়েছে। ওরা আমার সম্পর্কে যা ইচ্ছে বলুক, কিন্তু আমার মা এবং পরিবার তো ধার্মিক। তাদের কেন এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে? এটা দেশের কোন সংবিধানে পড়ে ? এটা কি কোন সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে ? আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার চাই ।’।