পুলককাকু সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। সকাল বিকেল কেমন ভাবে যেন তাকায় আত্মিকার দিকে। আত্মিকা যে কিছুই বোঝে না তা নয়। জাস্ট পাত্তা দেয় না। একবিংশ শতাব্দীতে এসব নিয়ে কেউ ভাবেও না মাথাও ঘামায় না। এদিকে পাড়ার সত্তরোর্ধ সেনাপতি কাকুর দজ্জাল বউ শোভনা কাকিমাও আত্মিকাকে যেন আড়চোখে দেখে আর মনে মনে বিড়বিড় করে। আত্মিকা কিন্তু এসবের ধারও ধরে না। নিজের কাজটুকু সততার সঙ্গে মন দিয়ে করে যায়।
গতকাল বিকেলে পুলককাকুর সঙ্গে হঠাৎ মুখোমুখি দেখা। একগাল হেসে জিজ্ঞাসা করলেন –
-কেমন আছো বৌমা?
-ভালো আছি কাকু। আপনি কেমন আছেন?
-আর বলো না। তোমার কাকিমাও হঠাৎ ইহলোক ছেড়ে… আর এই বয়সে নানান সমস্যা। তা বৌমা তোমাদের নতুন কোনো খবর ..
- মানে? ঠিক বুঝলাম না।
- বলছিলাম বাচ্চাকাচ্চা, মানে বুঝতেই পারছো… প্রায় দশ ব ছ র…
-জানেন কাকু তেলের খুব দাম।
-আহা! বাচ্চার সঙ্গে তেলের কী সম্পর্ক বৌমা?
-আচ্ছা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। আসলে আপনার চরকা’টা শুকিয়ে গেছে অথবা জং ধরে গেছে। আদৌ কখনো ছিলো কি? আর আপনিও সদ্য অবসর নিয়েছেন। তা তেলটা কি আমি কিনে দেবো নাকি আপনি কিনে নেবেন।
-বৌমা, এটা কেমন ধরনের ভদ্রতা।
-ঠিক আপনি, যেমন আয়না বাড়িতে লাগিয়েছেন। এটাও বোঝেননি তো? যান বাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করুন আপনার চার মেয়ে দুই ছেলে আপনাকে কেউ এই বয়সে দেখে না কেনো। আসলে শিক্ষক হয়েও ঘরেই শিক্ষার অভাব আপনার।
-মানে, এসব তুমি…
- নিজের জং পড়া চরকায় তেল দিন। আর আমার ইস্যু নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। সুগার, প্রেসার দুইই বাড়বে। আত্মিকা এসব বলে হাসতে হাসতে পাশ কাটিয়ে পা বাড়ায় বাড়ির দিকে। বাড়ির দোর গোড়ায় ঢোকার আগেই দেখা সেনাপতি কাকিমার সঙ্গে। মাথায় ভিজে গামছা বেঁধে পাড়ার টিউবকলে জল নিচ্ছিলেন দজ্জাল মহিলা। হঠাৎই গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে আত্মিকার সাথে।
-আরে সোনা মা যে , কোথায় যাওয়া হয়েছিলো।
- এই তো কাকিমা একটু বাজার গেছিলাম চকলেট বোমা কিনতে। একটু বোমাবাজি করবো তো তাই। এবার একটু কাছে এগিয়ে আসে কাকিমা। এসে জিজ্ঞাসা করে কেমন আছে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জবাব দেয় আত্মিকা…
-বিন্দাস আছি কাকিমা।
-আচ্ছা সোনা মা একটা কথা অনেকদিন ধরেই ভাবছি জিজ্ঞাসা করবো।
-করেই ফেলুন না কাকিমা। তার জন্য পঞ্জিকা দেখার তো দরকার নেই।
-আচ্ছা আচ্ছা অভয় দিচ্ছো যখন তখন বলেই ফেলি। তোমাদের দুটিতে সারাদিন হেসেখেলে কাটাও আমার ঘর থেকেই দেখতে পাই। পয়সাও তো কম কিছু নেই। কিন্তু সন্তান নিচ্ছো না কেন সোনা মা। এতগুলো…
-ও হ হ। তা এই প্রশ্নটা করতে বছর দশেক লেগে গেলো? একটু আগেই পুলককাকুর সঙ্গে দেখা হলো কাকিমা। তারও আমাদের নিয়ে প্রচুর কৌতূহল।
-ওহ আচ্ছা। তাই বুঝি। তা কী বললে ওনাকে?
পুলককাকুকে বলে এলাম যে আপনি আপনার ওভারিটা পুলককাকুকে ভাড়া দেবেন বলেছেন। পুলককাকুও ইস্যু চান আপনিও চাইছেন। তা দুজনে মিলে একটু...
এসব শুনে কাকিমা আর সেখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার সাহস পায় না। চোখ নামিয়ে চলে যায়।
পাঠককুলের কানে কানে একটা কথা বলি। সৌম্যদীপ আর আত্মিকা বিয়ের আগেই ঠিক করেছিল যে তারা নিজেদের কোনো ইস্যু নেবে না বরং তারা হতে চায় বহু সন্তানের পিতামাতা। সেই মত তারা রসুলপুরের একটা অনাথাশ্রমের প্রায় সাড়ে তিনশ বাচ্চার বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর। গোটা পৃথিবী থেকে অনুদান সংগ্রহ করা, সরকারি সাহায্য জোগাড় করা এবং নিজেদের সমবেত মাসিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার ষাট শতাংশ দিয়ে চালায় এই আশ্রম।
ওহে শিক্ষিত অপগন্ড মূর্খের দল- কার ইস্যু হলো কার হলো না সেসবে মাথা না ঘামিয়ে নিজের শুকিয়ে যাওয়া ঘুণধরা চরকায় তেল দিন কাকু ও কাকিমা, বন্ধু ও বান্ধব, আত্মীয়স্বজন। একটু ছাপ ফেলে যান। আগামী প্রজন্মের গর্বিত পিতামাতা হয়ে উঠুন। অন্যের বাড়ির ভাতের হাঁড়ির চাল নিয়ে নাই বা ওই মোটা মাথাগুলো ঘামালেন। তাতে আপনারও শান্তি পাড়ার কাকগুলোরও শান্তি। কে বলতে পারে কখন কে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেবে।।