প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ ডিসেম্বর : স্ত্রী ও শিশুপুত্র নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন স্বামী।সেই সূযোগকে কাজে লাগাতো বিন্দুমাত্র কশুর করেনি প্রতারকরা । নিখোঁজ হওয়া স্ত্রী ও ৫ বছরের ছেলেকে খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শিশুর বাবা সুমন্ত সাঁতরার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারণা চক্রের এক পাণ্ডা। তবে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি।প্রতারিত সুমন্ত সাঁতরার অভিযোগে ভিত্তিতে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার পুলিশ প্রতারক জাকির আলি খান ওরফে বসি কে গ্রেপ্তারর করেছে। প্রতারণার একাধীক ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ শনিবার বাঁকুড়ার জয়পুর থানার বিক্রমপুরের বাসিন্দা ওই প্রতারককে বর্ধমান আদালতে পেশ করে ।এখন প্রাতারক জাকিরের ঠাঁই হয়েছে রায়না থানার লকআপে ।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে,প্রতারিত
সুমন্ত সাঁতরার বাড়ি রায়না থানার শ্যামসুন্দর বাজার এলাকায় । তাঁর স্ত্রী মমতা সাঁতরা ও তাঁদের ৫ বছর বয়সী ছেলে সৌম্যদীপ গত ১০ সেপ্টেম্বর
হঠাৎতই নিখোঁজ হয়ে যায় । স্ত্রী ও সন্তানকে হারিয়ে সুমন্তবাবু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। তবুও হাল ছেড়ে না দিয়ে হন্যে হয়ো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তিনি তাঁর স্ত্রী ও শিশু সন্তানের খোঁজ চালাতে থাকেন। তারই মধ্যে গত ২২ অক্টোবর হুগলির আরামবাগ শহরে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় জাকির আলি খানের । পরিচয় একটু জমতেই সুমন্ত বাবু তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নিখোঁজ হওয়ার কথা জাকির কে বলেন।
প্রতারক জাকির যেন এমন একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সমন্ত বাবুকে সঙ্গে সঙ্গে জাকির জানায় বর্ধমানে তার এক পুলিস বন্ধু আছে। বলে সেই পুলিস বন্ধুকে বললেই উনি সুমন্তর হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী ও ছেলেকে খুঁজে দেবেন বলে জাকির আশ্বাস দেয়। এরপর পরিকল্পনা মতই জাকির মোবাইলে সুমন্তর সঙ্গে পুলিস পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তির কথা বলিয়ে দেয় ।সেই ব্যক্তিও সুমন্ত বাবুকে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে খুঁজে বের করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি তার জন্য ৫০ হাজার টাকা লাগবে বলেও পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি সুমন্ত বাবুকে জানায়। পুলিশ বলে কথা।
তাই সেই কথা বিশ্বাস করে সুমন্ত বাবুর একটি কাফেতে গিয়ে পেমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে সেই টাকা দিয়ে দেন।এরপর জেলা শাসকের অফিস,এসপির
অফিস প্রভৃতি জায়গায় কাগজ করতে হবে বলে জানিয়ে কয়েক দফায় সুমন্ত বাবুর কাছ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আদায় করে । কিন্তু এত কিছুর পরেও সমন্ত বাবুর তাঁর নিখোঁজ স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে ফিরে পাওয়া আর হয় না ।
হতাশা নিয়েই সুমন্ত সাঁতরা দিন কাটাচ্ছিলেন।
তারই মধ্যেই ২০ ডিসেম্বর স্ত্রী ও ছেলেকে খুঁজে পান সুমন্ত বাবু ।তবে স্ত্রী ও ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি তিনি জাকিরকে জানান নি।তাই ফের টাকা আদায়ের ফন্দি আঁটে জাকির।সেইমত শুক্রবার বিকেল ৪টে নাগাদ সুমন্তর বাড়িতে আসে জাকির। সেই সময় সুমন্ত বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে ফোন করে জাকির জানায়, টোকেনের জন্য ১ হাজার ৩০০ টাকা দিতে হবে। সেই টোকেন দেখিয়ে তবেই সুমন্ত বাবু শক্তিগড় থানার বামবটতলা এলাকার একটি হোম থেকে তাঁর ছেলেকে ফেরত পাবেন।জাকিরের কাছ থেকে এমন কথা শুনে সুমন্ত বাবু বুঝতে পারেন তিনি এতদিন আসলে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এরপরেই সুমন্তবাবু ফোন করে বিষয়টি রায়না থানায় জানান। ততক্ষণে জাকির অবশ্য সুমন্তর বাড়ি থেকে কেটে পড়ে।তবে বেশী দূর সে পালাতে পারে নি শ্যামসুন্দর বাজার এলাকা থেকে পুলিশ জাকিরকে পাকড়াও করে ফেলে । রাতেই সুমন্ত বাবু প্রতারণার সবিস্তার লিখিত ভাবে রায়না থানায় জমা দিলে পুলিশ জাকিরকে গ্রেপ্তার করে ।
পুলিশের দাবি ,ধৃত জাকির আলি খান প্রতারণার
ঘটনায় জড়িত থাকার কথা কবুল করেছে । এমনকি আরও অনেককে এইভাবে ফাঁদে প্রতারিত করার কথাও জাকির জেরায় স্বীকার করেছে। মেমারির এক বাসিন্দা চক্রের মূল পাণ্ডা বলে পুলিল ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে ।
হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার এবং চক্রের পাণ্ডা সহ দলের বাকিদের হদিশ পেতে তদন্তকারী অফিসার শনিবার ধৃতকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায়।ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ধৃতের ৫ দিনের পুলিসি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ।।