এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৬ ডিসেম্বর : দেড় দশকের অধিক সময় পর ফের বাংলাদেশে সক্রিয় হচ্ছে ‘বাংলার সর্বহারা পার্টি’ নামে মাও চরমপন্থী সংগঠন । বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের অন্ধকারব ওই সংগঠনের দলীয় পতাকা ও লিফলেট সাঁটিয়ে দেওয়া হয় । লাল রঙের পতাকায় কাস্তে হাতুড়ির চিহ্নের পাশাপাশি লেখা রয়েছে ‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি’ । মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের হাউসদী বাজারে একটি দোকানের সামনে ওই সমস্ত পতাকা টাঙানো ও লিফলেট সাঁটানো দেখা যায় । কম্পিউটারে টাইপ করা লিফলেটে লেখা হয়েছে, ‘ভারতের পা চাটা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করুন’ । পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির লিফলেটে লেখা আছে,’৭ জানুয়ারি ফ্যাসিবাদী হাসিনা–মার্কা নির্বাচনে জনগণের ভোট দেওয়া না দেয়া সমান কথা। এতে জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই, স্বার্থও নেই। বরং তারা নতুন করে ক্ষমতায় এলে জনগণের ওপর আরও বর্ধিত রুপে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন জেঁকে বসবে। দ্রব্যমূল্যের চাপে জনজীবন হবে আরও দুর্বিষহ। বিদেশি শয়তানরা, বিশেষত ভারত এদেশে তাদের থাবা আরও জোরালো ভাবে বসিয়ে দেবে।’
লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশালকে হাসিনা–আওয়ামী লীগ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। মাদারীপুরের এক সময়ের কুখ্যাত খুনী জাসদ পান্ডা, বর্তমানে আওয়ামী সন্ত্রাসের গডফাদার শাজাহান খান, শিবচরের চৌধুরী পরিবার, বরিশালের সেরনিয়াবাত পরিবার ও গোপালগঞ্জের শেখ পরিবার—এই চার পরিবার মিলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।’
লিফলেটে কৃষক-শ্রমিক-দরিদ্র-মধ্যবিত্তের বিপ্লবী রাষ্ট্র-ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য মাওবাদী গণযুদ্ধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুধখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় । এবার সর্বহারা পার্টির পতাকা ও লিফলেট ঘিরে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা ।
প্রসঙ্গত,পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির স্থাপনা হয়েছিল ১৯৭০ সালের ৭ নভেম্বর । প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিরাজ সিকদার । স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমর্থনে সশস্ত্র গণযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ওই বামপন্থী সংগঠনটি । কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা হতেই দলটি অছ্যুৎ হয়ে পড়ে । সংগঠনটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চীনমুখী প্রবণতা থেকে গড়ে ওঠে । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সিরাজ সিকদার মাও সেতুং চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে । কিন্তু ইসলামি চরমপন্থী দল জামায়াতে ইসলামির দ্বারা বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয়েছিল ওই কেন্দ্রটি । প্রায় ১৮ বছর আগেও ‘বাংলার সর্বহারা পার্টি’র অস্তিত্ব ছিল বাংলাদেশে । তারপর থেকেই হঠাৎ করে সংগঠনের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায় । ফের বাম চরমপন্থী সংগঠনটি সক্রিয় হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে বাংলাদেশে।
এই বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন,’পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সদস্যদের অপতৎপরতা বন্ধে পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে ।’।