এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,১৫ ডিসেম্বর : ইসরায়েলে নাশকতা চালানোর সুবিধার জন্য গাজার তলদেশে সুড়ঙ্গের সুবিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস । ভূগর্ভে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার জন্য এবারে হামাসের ওই ‘ইঁদুরের গর্তে’ পাম্প করে সামুদ্রিক জল ঢোকাতে শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনা । এটাকে “যুদ্ধের নতুন কৌশল” হিসাবে দেখছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স(আইডিএফ) । কিন্তু এর ফলে গাজার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা । তাদের আশঙ্কা যে সমুদ্রের জলের প্রভাবে একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ পানীয় জল দুষিত হবে,অন্যদিকে গাজার বহু ভবন ধসে পড়বে । এছাড়া গাজা উপত্যকায় ফসল উৎপাদনেও এর সুদুরপ্রসারি প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা ।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মঙ্গলবার রিপোর্ট করেছে যে আইডিএফ হামাসের ভূগর্ভস্থ টানেল সিস্টেমে সমুদ্রের জল পাম্প করা শুরু করেছে, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্যাসেজ এবং আস্তানাগুলির ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ককে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এবং তাদের অপারেটিভদের গর্ত থেকে বের করার লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ নিয়েছে আইডিএফ ।
আইডিএফ চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি গত সপ্তাহে বলেছিলেন,টানেল গুলিতে সমুদ্রের জল ঢুকিয়ে দেওয়া হল “একটি ভাল পরিকল্পনা”৷ তবে এর বেশি তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান । বৃহস্পতিবার হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদানকে এই বিষয়ে সাংবাদিকরা মতামত জানতে চেয়েছিল । তিনি দাবি করেছেন যে টানেলগুলি জল ঢোকানোর উদ্দেশ্য হল অন্যান্য “সম্ভাব্য বিপদ প্রতিরোধ করার জন্য কৌশলী পদক্ষেপ । তবে এই কৌশলী পদক্ষেপে ইসিরায়েলি পনবন্দিদের ক্ষতি করতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন । কারন কয়েকজন পনবন্দিকে হামাসের সুড়ঙ্গে রাখা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে । যদিও আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাড ড্যানিয়েল হাগারি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন যে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ করছে আইডিএফ এবং পনবন্দিদের ক্ষতি হোক এমন কাজ তারা করবে না ।
গত সপ্তাহে আইডিএফ ঘোষণা করেছে যে অক্টোবরের শেষের দিকে হামাসকে লক্ষ্য করে শুরু হওয়া স্থল আক্রমণের শুরু থেকে সৈন্যরা স্ট্রিপে ৮০০ টিরও বেশি টানেল শ্যাফ্ট আবিষ্কার করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ টি ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে । দিন দুয়েক আগে,একটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল যে আইডিএফ গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরের কাছে পাঁচটি বড় জলের পাম্প স্থাপন করেছে, যা প্রতি ঘণ্টায় হাজার হাজার ঘনমিটার জল পাম্প করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে টানেলগুলিকে প্লাবিত করতে সক্ষম । এতে বলা হয়েছে,বিমান হামলা,তরল বিস্ফোরক ব্যবহার এবং প্রশিক্ষিত কুকুর, ড্রোন,রোবট প্রেরণের মতই টানেলগুলিতে সমুদ্রের জল ভর্তি করে দেওয়া হল আইডিএফের একটি যুদ্ধ কৌশল ।
এদিকে মার্কিন জো বাইডেন সরকারও ইসরায়েলের এই কৌশলকে সমর্থন করেছে । তারা জানিয়েছে যে টানেল ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলের এছাড়া কোনো উপায় ছিল না । মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল । তিনি বলেন,’টানেলগুলিতে সমুদ্রের জল ঢোকানোর বিষয়ে … এমন দাবি করা হচ্ছে যে এই সুড়ঙ্গগুলির কোনওটিতেই কোন পনবন্দি নেই, তবে এর বাস্তবতা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই ।’
সংবাদপত্রের দ্বারা উদ্ধৃত উদ্বেগের মধ্যে ছিল গাজার জলজ এবং মাটির সম্ভাব্য ক্ষতি, যদি সমুদ্রের জল এবং টানেলে বিপজ্জনক পদার্থগুলি তাদের মধ্যে প্রবেশ করে, সেইসাথে ভবনগুলির ভিত্তির উপর সম্ভাব্য প্রভাব পড়বে ।
যদিও ২০১৫ সালে, মিশরীয় সামরিক বাহিনী গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণ সীমান্তের নীচে বেশ কয়েকটি গোপন সুড়ঙ্গে এভাবেই সমুদ্রের জল ঢুকিয়ে বুজিয়ে দিয়েছিল ।
বৃহস্পতিবার ইসলায়েল সেনাবাহিনী একটি ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যাতে আইডিএফ-এর অভিজাত ইয়াহালোম যুদ্ধ প্রকৌশলী পুনঃসূচনা ইউনিটের বাহিনীর দ্বারা হামাস অপারেটরদের একটি টানেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে । ফুটেজে সুড়ঙ্গের মেঝেতে বেশ কয়েকজন হামাস অপারেটিভের মৃতদেহ দেখা যায় ।
আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাড. ড্যানিয়েল হাগারি বলেন,’হামাসের সুড়ঙ্গে, সৈন্যরা বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছিল… আমরা একটি ক্যামেরা দিয়ে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করেছি এবং এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছি ।’
তিনি আরও বলেন,’হামাস সন্ত্রাসীরা, বিশেষ করে এর সিনিয়র সদস্যরা আন্ডারগ্রাউন্ডে লুকিয়ে থাকা বেছে নিয়েছিল । এটি হামাসের পরিচালনার পদ্ধতি, লুকিয়ে বেসামরিক লোকদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার সময় আমাদের উপর হামলা চালাচ্ছিল ।’ তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে সুড়ঙ্গে হামাস অপারেটরদের হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনীর নতুন যুদ্ধ কৌশল রয়েছে । আমরা সুড়ঙ্গে প্রবেশ করব, সন্ত্রাসীরা যেখানে আছে সেখানে বিস্ফোরক লাগিয়ে দেব এবং মাটির নিচে তাদের হত্যা করার জন্য আমরা সঠিক মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করব।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,সন্ত্রাসীরা ভূগর্ভে নিরাপদ থাকবে না ।।