এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ ডিসেম্বর : ১৩ ডিসেম্বর সংসদে ‘স্মোক বোমা’ দিয়ে হামলার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা-এর সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের একটি পুরনো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে । যা ঘিরে তোলপাড় চলছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে । ললিত ঝা-এর সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের ‘যোগসূত্র’ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে বিজেপি । নিজের ফেসবুক পেজে ওই ছবিটি পোস্ট করে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, ‘পার্লামেন্টের ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ঘটনার কিংপিন তথা পরিচালক “ললিত ঝা” আসলে কি তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় ঘনিষ্ঠ? কোনো ইস্যু না পেয়েই কি তৃণমূল গনতন্ত্রের পবিত্র মন্দিরকে বদনাম করার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটালো? পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের অনুরোধ জানাই।’
এদিকে তদন্তে দিল্লি পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে যে সংসদে হামলার ঘটনায় যুক্ত ছিল মোট ৬ জন । তারা রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালায় । তবে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা এখনো ফেরার । পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ললিত ঝা-এর কলকাতাতে একাধিক ডেরা রয়েছে । ললিতের বাবা কলকাতা- ৪৯, মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে থাকতেন । ললিত নিজে কলকাতা-২১৮, রবীন্দ্র সরণিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করত । কোভিড মহামারীর সময় বাবার কাছে চলে যায় ললিত ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দিল্লি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,’ললিত ঝা সবাইকে গুরুগ্রামে নিজের বাড়িতে বৈঠকের জন্য ডেকেছিল। ঘটনাটি ঘটানোর আগে ললিত নিজেই চার অভিযুক্তের ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে করে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল । ললিত ঝা তার ৫ বন্ধুদের সাথে সংসদে ‘স্মোক বোমা’ আক্রমণের ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তার নির্দেশনায় পুরো পরিকল্পনাটি কার্যকর হয়েছিল । ললিত ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলার দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছিল কারণ এটি সংসদ সন্ত্রাসী হামলার ২২ তম বার্ষিকী ছিল,যাতে দেশ এবং বিশ্বের আরও মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় তাই ওই দিনটি বেছে নিয়েছিল ললিত ।
সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ললিত ঝাকে শেষবার রাজস্থানের নীমরানায় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই সে পালিয়ে যায় । পুলিশ সূত্রে আরও বলা হয়েছে যে পলাতক অভিযুক্ত অন্য চার অভিযুক্তের মোবাইল ফোন থেকে প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করতে,যে ফোনগুলি ললিত নিজের সাথে নিয়ে গেছে । ললিত ঝা হামলার ঘটনার একটি ভিডিও এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা নীলাক্ষা আইচকেও পাঠিয়েছে । যিনি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় উপজাতি শিক্ষা নিয়ে কাজ করা নীলক্ষা আইচ একটি এনজিও পরিচালনা করেন । তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে ললিত ঝা আমাদের সংস্থার সদস্য ৷ অভিযুক্তের আচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ললিত কখনই আমাকে নিজের সম্পর্কে কিছু জানায়নি। সে সবকিছু গোপন রাখত । সে কখনই তার হদিস বা তার পরিবারে কে আছে তা উল্লেখ করেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহিংস হতে দেখিনি ।
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে,সংসদ ভবনে হামলার ঘটনায় সব অভিযুক্ত সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ‘ভগত সিং ফ্যান ক্লাব’-এর সাথে যুক্ত। প্রায় দেড় বছর আগে সবাই মহীশূরে দেখা করেন। অন্যতম অভিযুক্ত সাগর শর্মা জুলাই মাসে লখনউ থেকে দিল্লি এসেছিল কিন্তু তখন সে সংসদ ভবনে ঢুকতে পারেননি। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর ললিত গ্যাংয়ের সব সদস্য একে একে দিল্লি পৌঁছোয় । ইন্ডিয়া গেটে সবাই মিলিত হল যেখানে সবাইকে ‘স্মোক বোমা’ বিতরণ করা হয় । সংসদের ভেতরে হামলাকারী সাগর শর্মা, সংসদের বাইরে স্মোক বোমা হামলাকারী নীলম আজাদ ও আনমোলসহ সংসদে হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত মোট ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । বৃহস্পতিবার ললিত ঝাও গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে । দাবি করা হচ্ছে যে ললিত ঝা এবং নীলম আজাদ উভয়েই কংগ্রেসের প্রবল সমর্থক । বছর চল্লিশের নীলম ছাত্রাবস্থা থেকেই কংগ্রেসে সাথে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে ।।