প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ ডিসেম্বর : জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ে বর্ধমান স্টেশনে স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে রেল দফতরের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন স্বামী। শুধু বিদ্রোহ ঘোষনা করেই খান্ত থাকেন নি মৃত মফিজা বেগমের স্বামী আব্দুল মফিজ শেখ। স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য রেলের গাফিলতিকে দায়ী করে তিনি বর্ধমান জিআরপিতে এফআইআর দায়ের করে গাফিলতিতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি করেছেন । জিআরপি মামলা রুজু করে সেই অভিযোগের তদন্ত শুরে করেছে।
আব্দুল মফিজ শেখের কথা অনুযায়ী তাঁর নিজের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারির হাটপুকুরে । আর তাঁর শ্বশুর বাড়ি শহর বর্ধমানের লাকুড্ডি এলাকায়। সেখান থেকে শালিকার মেয়ে মেহেরুনিশার দিল্লি যাওয়ার কথাছিল।সে দিল্লিতে পড়াশোনা করে । তাই মেহেরুনিশাকে ট্রেনে তুলতে বুধবার দুপুর ১২ টার আগেই তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বর্ধমানের লাকুড্ডির বাড়ি থেকে বর্ধমান স্টেশনে পৌছে যান । সঙ্গে তাঁদের ছয় বছর বয়সী মেয়ে মেহেতাজও ছিল । প্রথম তাঁদের সকলের যাওয়ার কথা ছিল হাওড়া স্টেশন । সেখান থেকে মেহেরুনিশাকে হাওড়া – রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনে চাপিয়ে দিয়ে তাঁরা রাতেই বাড়ি ফিরে পড়বেন বলে ঠিক ছিল।
মফিজ জানান,হেরিটেজ স্টেশন বর্ধমানের ২ নম্বর প্ল্যটফর্মের শেডের নিচে বসে হাওড়া যাবার ট্রেন আসার জন্যে তাঁরা সবাই অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় বেলা ১২টা খানিক পর আচমকাই স্টেশনে থাকা শতাব্দী প্রাচীন জলের ট্যাঙ্ক স্টেশনের ২ এবং ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে ভেঙে পড়ে ।জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার ঘটনায় অনেকের মত তিনি এবং তাঁর স্ত্রী আহত হন ।তাঁদের নিজের মেয়ে মেহেতাজের পায়ে মারাত্মক চোট লাগে । তবে বরাত জোরে রক্ষা পেয়ে যায় শালিকার মেয়ে মেহেরুনিশা। দুর্ঘটনার পর তাঁদের বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয় । চোখের জল মুছতে মুছতে মফিজ এদিন বলেন,’হাসপাতালে যখন তাঁর চিকিৎসা চলছিল তখনই তিনি জানতে পরেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর স্ত্রী মফিজাকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন ।’
মেয়েকে ট্রেনে তুলতে হেরিটেজ স্টেশন বর্ধমানে গিয়ে স্ত্রীকে যে এইভাবে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে প্রাণ হারাতে হবে তা কল্পনাও করতে পারেন নি আব্দুল মফিজ শেখ। তাই তিনি মনে করছেন,১৮৯০ সালে তৈরি ৫৩ হাজার ৮০০ গ্যালন জল ভর্তি ট্যাঙ্ক স্টেশন প্ল্যাটফর্ফের উপর ভেঙে পড়ার ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে রেলের গাফিলতি । সে কারণেই ঘটেছে এতবড় দুর্ঘটনা । তাই তিনি এই গাফিলতির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি গাফিলতিতে জড়িতদের শাস্তির দাবি করে বর্ধমান জিআরপিতে এফআইআর দায়ের করেছেন বলে জানান ।
মফিজা বেগম ও তার পরিবার বৃহস্পতিবার দাবি করেন, দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনার পর মৃত ও জখমদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণর দেবার ক্ষেত্রেও রেল তাদের গাফিলতির নিদর্শন রেখেছে। এ প্রসঙ্গে মৃতার দাদা রাজু শেখ বলেন,আমার বোন মফিজার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়ে যাবার পরিবার আমরা দেহ বাড়ি নিয়ে যাই । তখনও রেল কর্তৃপক্ষের তরফ ফোন আসেনি আমাদের পরিবারের কাছে। অনেকটা পরে জানানো হয়, ক্ষতিপূরণের জন্যে মফিজার মৃতদেহ হাসপাতালে আনতে হবে। এমনকি মফিজার ডকুমেন্টসও সঙ্গে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বলা হয় ।এরপরে আমরা পরিবারের সবাই মিলে ফের মফিজার মৃতদেহ নিয়ে বর্ধমান হাসপাতালে যাই । কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে সেখানে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও রেলের তরফে ঘোষণা করা সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ অর্থ মেলে না । উল্টে রেলের তরফে জানানো হয়, “এখন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে । বাকিটা তিন চারদিন পর দেওয়া হবে।“ এমনটা জানার পর বেজায় চটে যান মৃতার দাদা রাজু শেখ ।ক্ষতিপূরণের পূর্ণ অর্থ মিললে তবেই মফিজার মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে তিনি সহ পরিবারের সবাই জেদ ধরেন।পরিবারের অনেকে রল দফতরের এমন ঘোষণার কথা শুনে
হাসপাতাল চত্ত্বরে ক্ষোভ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন । তা দেখে পরিস্তিতি সামাল দিতে আসরে নামেন বর্ধমান থানার আই সি সুখমর চক্রবর্তী এবং বর্ধমান দক্ষিনের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস। । শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যস্থতায় ক্ষোভ বিক্ষোভ মেটে । এর পর রাতে মফিজার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যান বলে রাজু শেখ জানান ।
যদিও রেল দফতর এইসব অভিযোগকে মান্যতা দেয় নি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র স্পষ্ট জানান,বর্ধমান স্টেশনে হওয়া হওয়া দুর্ঘটনায় তিরিশ জনের মত জখম এবং তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রাজ্য সরকার আমাদের জানিয়েছে। রেল মন্ত্রী প্রত্যেক মৃতর পরিবারাকে ৫ লক্ষ টাকা এবং জখমদের সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন। আর যাঁরা সামান্য আহত হয়েছেন তাদের পাঁচ হাজার টাকা দেবার কথাও রেল মন্ত্রীর ঘোষনায় রয়েছে । এই ঘোষনা মতই সরকারী তালিকায় নাম থাকা মৃতদের পরিবার ও জখমরা ক্ষতিপূরণ অর্থ পেয়ে যাবেন।।