প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৩ ডিসেম্বর : ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন বর্ধমান রেল স্টেশনে অপেক্ষারত রেলযাত্রীরা । দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের । আহত হয়েছেন আরও ৮-৯ জন । আহতরা বর্তমানে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । জানা গেছে,আজ বুধবার দুপুর সোয়া বারোটা নাগাদ রেল স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মের মাঝে যাত্রীদের জন্য নির্মিত ছাউনির উপর ভেঙে বিশালাকৃতির জলের ট্যাঙ্ক হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে । সেই সময় প্রচুর যাত্রী ওই ছাউনির নিচে ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন । জল ট্যাঙ্কের ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়ে যান অন্তত ১০-১২ জন যাত্রী । তাদের উপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় জলের স্রোত । ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয় । পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরও একজনের । এখনো পর্যন্ত দু’জনের নাম জানা গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজনের নাম মফিজা খাতুন এবং অপরজন হলেন ক্রান্তি কুমার বলে জানা গেছে । তৃতীয়জনের নাম জানা জায়নি।
রেলযাত্রী শেখ জানে আলমের অভিযোগ, ‘সম্প্রতি রেলস্টেনে রঙ করার কাজ হয়েছিল । সেই সময় বহু পুরনো ওই জলের ট্যাঙ্কটিকে উপরে উপরে রঙ করে দেওয়া হয়,সংস্কারের কাজ কিছুই হয়নি ।’
জানা গেছে,স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের পাশেই রয়েছে আরপিএফ ব্যারাক । খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসে আরপিএফ কর্মকর্তারা, আসে দমকলবাহিনী । তারপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান । তবে বর্ধমান রেল স্টেশনে দূর্ঘটনার নজির এই প্রথম নয় । এর আগে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বর্ধমান স্টেশনের ঝুল বারান্দা ।
এদিকে এদিনের দুর্ঘটনার পর কেন্দ্রের শাসকদলকে নিশানা করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক খোকন দাস কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন,’কেন্দ্র সরকার দেশ জুড়ে কেবল মন্দির করবে । কে রেল দেখবে,কে সরকারি ভবন দেখবে? কিছু কি করছে কেন্দ্র সরকার ?’ রেলের ভবনের কোনো রক্ষনাবেক্ষণই হয় না বলে অভিযোগ তৃণমূল বিধায়কের । বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ পোদ্দার বলেন,’এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা । তবে যদি কারোর গাফেলতি থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র সরকার ।’ তবে তিনি জানান যে বিধ্বস্ত হওয়া জলের ট্যাঙ্কটি অনেক দিন আগেই সংস্কার করা করা উচিত ছিল ।
এদিকে আজকের এই দুর্ঘটনার পর বর্ধমান রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজারকে দুষছেন রেলযাত্রীরা । তাদের অভিযোগ যে দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল ওই জলের ট্যাঙ্কটি । জল উপচে যাত্রীদের গায়ে পড়ত । বিষয়টি স্টেশন ম্যানেজারকে বারবার জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের । যদিও এই বিষয়ে রেলদপ্তরের তরফে কোনো অফিসিয়ালি বিবৃতি পাওয়া যায়নি ।।