প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ ডিসেম্বর : অসময়ে হওয়া একটানা বৃষ্টির জলে ডুবে যায় বীজ বপন করা আলু জমি ।তা দেখে চুড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এই রাজ্যেরই শস্যগোলার ঋণগ্রস্ত আলু চাষি রূপসনাতন ঘোষ(৪৬)। কিভাবে দেনার টাকা শোধ করে ফের আলু চাষ করবেন সেই দুঃশ্চিন্তাই তাঁর পিছু তাড়া করে বেড়াচ্ছিল।কিন্তু,পরিত্রাণের কোন উপায় আর খুঁজে না পেয়ে শেষমেষ আত্মহননের পথই বেছে নিলেন প্রান্তিক চাষি রুপসনাতন। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে এদিনই কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় । চাষির এমন অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পূর্বস্থলীর উত্তরপাড়া গ্রাম ।
পুলিশ ও স্থানীয় সৃত্রে জানা গিয়েছে ,পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নিমদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম ছাতনি উত্তরপাড়া । এই গ্রামের বেশীরভাগ মানুষই কৃষিজীবী।রুপসনাতন ঘোষ তাঁদের মতাই একজন প্রান্তিক চাষি। রুপসনাতনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর ভাই অমল ঘোষ এদিন কালনা মহকুমা হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমকো তিনি জানান, লাভের আশায় আমার দাদা রুপসনাতন ঋণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ শুরু করেছিলেন । বাকি ৩ বিঘা জমিতে তিনি অন্য ফসলের চাষ করেন। তিনি অনেক টাকা খরচ করে সার , আলুবীজ কিনেছিল । খেতমজুরদের জমিতে আলু বীজ বপন করাও হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু বুুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির জলে ডুবে যায় আমার দাদার আলু চাষের জমি। তাতে আলু গাছ নষ্ট হয়ে যায় । বৃষ্টি থামার পর জমিতে গিয়ে জমির অবস্থা দেখে কার্যত আমার দাদার মাথায় হাত পড়ে যায় । দেন কিভাবে শোধ হবে,ফের কিভাবে জমিতে আলু চাষ করা সম্ভব হবে , এইসব ভেবে আমার দাদা এক বুক হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছিল । শেষমেষ চাষের এই ক্ষতি নিয়ে মানসিক চাপ আর সামলাতে না পেরে দাদা আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্যহন বলে অমল ঘোষ জানিয়েছেন। যদিও পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন,’চাষির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে বৃষ্টি থামতে না থামতে চাষের ক্ষতির কারণে জেলার এক চাষির আত্মহণনের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
জেলার সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ বলেন,এমন আশঙ্কা আমরা আগেই করেছিলাম । তাই বৃষ্টি থামতে না থামতেই চাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে
সারা ভারত কৃষকসভা জেলার ব্লকে ব্লকে বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে । বিনোদ ঘোষ দাবি করেন,“অসময়ের বৃষ্টিতে চাষে যে ক্ষতি হয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছে জেলা কৃষি দফতর । কৃষি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী এবছর জেলায় ২১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২০৮৩ টি মৌজার ৪৬১১৭ হেক্টর জমির আলু চাষ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এর মধ্যে পূর্বস্থলী ২ নম্বর ব্লকের ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১১৪ টি মৌজার ৬৫০ হেক্টর আলু চাষের জমির পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি দফতরের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।বিনোদ ঘোষ বলেন,’আমরা চাই অবিলম্বে রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক। নয়তো চাষিরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না ।’
জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘বাংলার কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না। রাজনৈতিক রং দেখে চাষিদের সরকারী সুবিধা দেওয়া হয় । তার উপর অসময়ের বৃষ্টিতে চাষিদের প্রভূত ক্ষতি হয়ে গেল । আলু চাষে ক্ষতির কারণে জেলার এক চাষি আত্মহণনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন। এই অবস্থাতেও রাজ্য সরকার যদি না দ্রুত চাষিদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা না করে তবে ভারতীয় জনতা পার্টি বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে ।’।