জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),০৮ ডিসেম্বর : এতদিন ‘যুগলবন্দী’ শব্দবন্ধনী মোটামুটি ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হতো – রোহিত ও বিরাট যুগলবন্দীর হাত ধরে সহজেই জয়ের মুখ দেখল ভারত, ইত্যাদি। গত কয়েকমাস ধরে গুসকরা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে গুসকরা আপন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ও পূর্ব বর্ধমান জেলা ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরাম এর যৌথ উদ্যোগে যেভাবে একের পর এক স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন হচ্ছে তাতে খুব শীঘ্রই ‘যুগলবন্দী’ শব্দবন্ধনী এই দুই সংস্থার নামের পাশে বসলে খুব একটা অত্যুক্তি করা হবেনা !
মাত্র ৭২ ঘণ্টার ‘নোটিশ’-এ আজ শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এই দুই সংস্থার উদ্যোগে গুসকরা স্কুলমোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারি সংস্থার লজের সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির আয়োজিত হয়। স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিলের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ভ্রাম্যমান বাসের মধ্যে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে প্রায় ৪৫ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা ছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রথমবার রক্তদান করে। এমনকি জনৈক ছাত্র বাড়ি ফেরার পথে রক্তদান করে। বিভিন্ন সমস্যার জন্য অনেকেই রক্তদান করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরিবেশ দূষণ দূর করার লক্ষ্যে প্রত্যেক রক্তদাতাকে দুটি করে ফলের চারা সহ একটি করে শংসাপত্রদেওয়া হয় । এই প্রথমবার রক্তদান করল গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিনু সাঁতরা। তার বক্তব্য,’প্রথমে একটু ভয় লাগলেও বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক লাগল।’ তিনি তরুণ প্রজন্মকে রক্তদান করার জন্য আহ্বান জানান ।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায়, গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা গুসকরা আপন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি শিশির কুমার ঘোষ ও সম্পাদক সঞ্জীব বাছার এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরাম এর সদস্য সৌগত গুপ্ত সহ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে ও থ্যালেসামিয়া রুগীদের জন্য এই স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও খুব জরুরি বলে জানান পূর্ব বর্ধমান জেলা ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরাম এর অন্যতম সদস্য সৌগত গুপ্ত। তিনি সকল রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অন্যান্য সংস্থাগুলিকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য তিনি আহ্বান জানান এবং সমস্ত রকমের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কুশলবাবু বললেন, ‘অনাবশ্যক ভীতি ও কুসংস্কার দূর করে যত বেশি মানুষ রক্তদান করতে এগিয়ে আসবে তত বেশি সমাজ উপকৃত হবে।’ তিনি আরও বলেন,’মুমূর্ষু রুগীদের জন্য রক্ত অপরিহার্য হলেও এখনো বিজ্ঞান রক্তের বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। একমাত্র উপায় নিজেদের রক্তদান করা ।’।