এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,০৮ ডিসেম্বর : গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলাকারী হামাস সন্ত্রাসীরা শুধু ইহুদিদেরই হত্যা করেনি। বরঞ্চ বেদুইন সম্প্রদায়ের সদস্যসহ ইসরায়েলের বহু মুসলিম নাগরিককে হত্যা ও অপহরণ করেছে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস । সন্ত্রাসীরা নরসংহার চালানোর সময় তরুণ-বৃদ্ধ, মুসলিম-ইহুদির মধ্যে কোন বাছাবাছি করেনি ।
গণহত্যায় ১,২০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি হত্যা করা হয়েছিল, এবং আরও ২৪০ জনকে অপহরণ করে গাজা উপত্যকায় পনবন্দি হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অনেক আরব ইসরায়েলিকে হত্যা, আহত বা পনবন্দি করা হয়েছে। অপহৃতদের মধ্যে ইসরায়েলের ১৬ বছর বয়সী মুসলিম নাগরিক আইশা আল-জিয়াদনাও রয়েছে ।
হামাস প্রথম আক্রমণ চালায় কিবুতজ রেইমে (Kibbutz Re’im) একটি সঙ্গীত উৎসবে,যেখানে আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার তরুণ সঙ্গীতপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন । রক্তাক্ত এবং আতঙ্কিত লোকেরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে করতে চিকিৎসা তাঁবুর দিকে ছুটে যায় সাহায্যের জন্য । শেষ পর্যন্ত মেডিকেল কর্মীদের অন্য সবার সাথে পালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আরব-ইসরায়েলি প্যারামেডিক আওয়াদ দারাউশে(২৩) আহতদের পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করে পিছনে রয়ে যান ।দারওশে বলেছিলেন, ‘আমি আরবি ভাষা জানি, তাই মনে করেছিলাম আমি ওদের বোঝাতে পারব ।’ তিনি আশা করেছিলেন হামাস সন্ত্রাসীরা কোনও মুসলিম আরবের ক্ষতি করবে না । কিন্তু তার ধারণা ভুল ছিল । হামাস নির্দয়ভাবে দারোয়াশে সহ তাদের সহকর্মী মুসলমানদের মারধর, অপমান, অপহরণ এবং হত্যা করে যখন সে আহতদের ব্যান্ডেজ করছিল। দারওয়াশেকে হামাস সন্ত্রাসীরা হত্যা করার পর, তার অ্যাম্বুলেন্স চুরি করে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যায়।
হামাস সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন আবেদ আল-রহমান আলনাসারাহ(৫০) 50,তিনি সঙ্গীত উৎসব থেকে লোকদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বিবাহিত এবং ছয় সন্তানের জনক ছিলেন। আরারার বেদুইন গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী ফাতিমা আলতাল্লাকাতকেও দক্ষিণ ইসরায়েলের ওফাকিম শহরের কাছে তার স্বামীর সাথে কাজ করার সময় খুন করা হয়েছিল। তিনি নয় সন্তানের মা ছিলেন, সবচেয়ে বড় নয় বছর বয়সী এবং সবচেয়ে ছোট ছয় মাসের। তার ভাই বলেছিলেন যে হামাস সন্ত্রাসীরা আলতাল্লাকাতে ৪০ টি গুলি করেছে।
তার স্বামী হামিদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা একটি ধার্মিক মুসলিম পরিবার এবং তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মহিলার ঐতিহ্যবাহী হেডড্রেস পরেছিলেন। এটা অকল্পনীয় যে তারা (হামাস সন্ত্রাসীরা) দেখতে পারেনি যে গাড়ির ভিতরে কে আছে। তারা যাওয়ার সময় তার থেকে পাঁচ মিটার দূরে ছিল । তিনি বলেন,জানতাম সে মৃত্যুর কাছাকাছি ।
পনবন্দি সোলেমান জায়াদনেহ,তার ভাই ও কাকা মিলে চার আরব-ইসরায়েলি পনবন্দি যারা নিজেদের একজন ফিলিস্তিনি এবং মুসলিম হিসাবে গর্বিত মনে করত । তারা এখন নিজেদের ধর্ম পরিচয় দিতেই অস্বীকার করেন । নৃশংস ঘাতক হামাসের উপর তাদের চরম ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে । সোলেমান জায়াদনেহ বলেন,’এটা কি জাতীয় গৌরব ? কোন ধর্ম? যারা গুলি করে হত্যা করতে এসেছে—তারা ধর্ম কিছুই জানে না। এই হামাস লোকেরা এসে বাম এবং ডানে সব মানুষকে মেরে ফেলল।’
নিঃসন্দেহে, হামাসের গণহত্যার অন্যতম উদ্দেশ্য, যতটা সম্ভব ইসরায়েলিকে হত্যা করা ছাড়াও, ইসরায়েল এবং আরব দেশগুলির মধ্যে, বিশেষ করে সৌদি আরবের মধ্যে স্বাভাবিককরণকে ব্যর্থ করা। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করাও হামাসের লক্ষ্য থাকতে পারে।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি নিঃসন্দেহে আশা করেছিল যে আমরা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ইহুদি এবং আরবদের মধ্যে সহিংসতার আরেকটি চক্র প্রত্যক্ষ করব, যা ২০২১ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল। তারপর, হামাস ইসরায়েলের বিপুল সংখ্যক আরব নাগরিককে উসকানি দিতে সফল হয়েছিল । যারা রাস্তায় এবং তাদের ইহুদি প্রতিবেশী এবং ইসরায়েলি পুলিশ অফিসারদের আক্রমণ করে।
চলতি বছরে অবশ্য আরব-ইসরায়েলিরা হামাসের আহ্বানে কর্ণপাত করেনি। একটি কারণ হল আরব-ইসরায়েলিরা নিজেদের চোখে দেখেছে, হামাস সন্ত্রাসীরা কীভাবে ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না ।।