জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৭ ডিসেম্বর :ওরা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। অঙ্গজনিত ত্রুটি ওদের চলার পথে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ওদের কেউ বধির, দৃষ্টিহীন অথবা বোবা। পায়ের সমস্যার জন্য কেউ কেউ আবার ঠিকমত হাঁটতে পারেনা। কিন্তু ওদেরও মন আছে। ওরাও নিজেদের মত করেই আনন্দ উপভোগ করতে চায়। দরকার একটু উৎসাহ।
সাধারণ মানুষের মনে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের অঙ্গ হিসাবে কলকাতা জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশনের উদ্যোগে এবং বেহালা সার্কেলের সহযোগিতায় ৬ ই ডিসেম্বর একটি শহরের বুকে একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রী ও সমসংখ্যক অভিভাবক এবং তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। বেহালা এবং ঠাকুরপুকুর ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিকরা তাদের নিরাপত্তার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। তাদের হাতে তুলে দেন জলের বোতল ও চকোলেট। চারদেওয়ালের বাইরে এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে শিশুরা খুব খুশি। তাদের প্রতিটি অভিব্যক্তির মধ্যে সেই আনন্দ ফুটে উঠছিল।
বরিষা বিবেকানন্দ হাইস্কুলের সামনে থেকে সকাল ১১ টা নাগাদ এই পদযাত্রা শুরু হয়। প্রায় দুই কিমি. পথ অতিক্রম করে আবার তারা বরিষায় ফিরে আসে। শিশুদের হাতে ছিল প্লাকার্ড। তাদের অব্যক্ত মনের ভাব ভাষা হয়ে সেখানে ফুটে উঠেছিল। মানুষের কাছে ওদের আর্ত আবেদন – ঘৃণা নয়, দয়া করে আমাদের দিকে একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন। আমরাও বাঁচতে চাই। পায়ের সমস্যা জনিত কারণে হাঁটতে কষ্ট হলেও মনের জোরে বেশ কয়েকজন শিশু সমগ্র পথ অতিক্রম করে। পদযাত্রার শেষে ফুটে ওঠে বিজয়ীর হাসি – আমিও পারি।
ওদের সঙ্গে সমানতালে পা মিলিয়েছেন স্পেশাল এডুকেটর লোপামুদ্রা মুখার্জ্জী, শিবানী মিত্র, পামেলা সেনগুপ্ত, ঝুম্পা বর্ধন, রুদ্র ভট্টাচার্য, শুক্লা চ্যাটার্জী ও চেতনা দাস। পরম যত্নে, মাতৃস্নেহ দিয়ে ওরাই এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের তিল তিল করে সমাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
লোপামুদ্রা দেবী বললেন,’ওরা আমাদের বাড়ির সন্তান। একটু স্নেহ, ভালবাসা পেলে শারীরিক সমস্যা ভুলে ওরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে তার আবেদন – ভালবাসতে না পারলেও দয়া করে ওদের দিকে তির্যক উপহাস ছুড়ে দেবেন না ।’।