এইদিন ওয়েবডেস্ক,নাইজেরিয়া,০৬ ডিসেম্বর : ইসলামি সন্ত্রাসবাদী উপদ্রুত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে আছে নাইজেরিয়া । প্রায় দিনই সন্ত্রাসী হামলায় সেদেশের খ্রিস্টানদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় । এবারে সন্ত্রাসীদের জমায়েত মনে করে ভুল বশত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী । ড্রোন থেকে ছোড়া বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৮৫ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে । তবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা । ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৪ ডিসেম্বর ২০২৩) রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর পশ্চিম কুদানা স্টেটের একটি গ্রামে ।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদীদের একটি গ্রুপকে নিশানা করে ড্রোন হামলা পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিন্তু ভুলক্রমে সেটি সোজা গিয়ে কাদুনা রাজ্যের ইগাবি কাউন্সিল এলাকার তুদুন বিরি গ্রামে আঘাত হেনেছে । সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ না করলেও ন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি জানায়, সব মিলিয়ে ৮৫ জনের মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ৬৬ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ।
জানা গেছে,রবিবার তুদুন বিরি গ্রামের লিগারমা মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি উৎসবে অংশ নিয়েছিল ।ইসলামের নবী মুহাম্মদ (মৌলিদ নবী) এর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে হাজারখানেক মানুষ এক জায়গায় জমায়েত হয়েছিল । আর সেই সময় ড্রোন থেকে ছোড়া বোমায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয় । অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নাইজেরিয়া অফিস বলছে, হামলায় এযাবৎ ১২০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে । এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । যদিও কোনো ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী ।
কাদুনার গভর্নর উবা সানি বলেছেন, সন্ত্রাসী ও দস্যুদের লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন ভুলবশত বেসামরিক এলাকার নিরীহ লোকদের ওপর এসে পড়েছে। ঘটনাটিকে মর্মান্তিক আখ্যা দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু ।
ইগাবি কাউন্সিল এলাকাটি কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামি স্টেটের একটি শাখার অন্যতম ঘাঁটি বলে মনে করা হয় । নাইজেরিয়ার ডিফেন্স মিডিয়া অপারেশনের পরিচালক মেজর জেনারেল এডওয়ার্ড বুবা মঙ্গলবার আবুজায় একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে এলাকায় সন্ত্রাসীদের অপ্রীতিকর কার্যকলাপ সম্পর্কে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হামলা করা হয়েছিল । তিনি বলেছেন যে সন্ত্রাসী উপদ্রুত এলাকা হিসাবে পরিচিত লিগারমাতে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছিল নাইজেরিয়া সেনাবাহিনীর মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি)। কিন্তু ভুল বশত সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ।
প্রসঙ্গত,ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার কিছু অংশে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে । ওই গোষ্ঠীগুলি বনের গভীর ঘাঁটি থেকে কাজ করছে এবং মুক্তিপণের জন্য বাসিন্দাদের লুটপাট ও অপহরণ করার জন্য প্রায়ই গ্রামে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে । সন্ত্রাসী হামলার ২০০৯ সাল থেকে ৪০,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২০ লক্ষের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে । কিন্তু সেনাবাহিনীর ইসলামি সন্ত্রাস দমন দমন অভিযানেও বেঘোরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ।
নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় অতীতেও বেশ কয়েকবার বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর-পূর্বে চাদের হ্রদে কোয়াতার দাবান মাসারায় একটি হামলায় কমপক্ষে ২০ জন জেলে নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল, যখন সামরিক বাহিনী তাদের জঙ্গি বলে মনে করেছিল। তার আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে ক্যামেরুন সীমান্তের কাছে রান শহরে জিহাদী সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত ৪০,০০০ লোকের বাসস্থানে একটি যুদ্ধবিমান আঘাত করলে কমপক্ষে ১১২ জন নিহত হয় । নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী ছয় মাস পরে জারি করা একটি প্রতিবেদনে “এলাকাটির যথাযথ চিহ্নিতকরণের অভাবকে” দায়ী করেছে ।
উল্লেখ্য,রাষ্ট্রপতি বোলা আহমেদ টিনুবু চলতি বছরের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, কারণ তিনি আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশে বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে চান ৷।