এইদিন ওয়েবডেস্ক,চেন্নাই,০৫ ডিসেম্বর : তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্র প্রদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিচাং’ (MICHAUNG)। এই ঝড় শক্তি বাড়িয়ে ভারতের দক্ষিণে অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। তার জেরে রবিবার ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে উপকূলবর্তীর ৭ জেলায়।রবিবার থেকে মিচাং-এর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত চেন্নাই। বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ জলমগ্ন রাস্তাঘাট, দোকান, বাড়ি। জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি, বাইক। বাড়ি ও দোকানের মধ্যে ঢুকে পড়েছে জল। সোমবার শহরের অধিকাংশ দোকান, অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে । বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিমান চলাচল । চেন্নাইয়ে প্রবল ঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৈদ্যনাথন উড়ালপুলের কাছে ৭০ বছরের এক প্রবীণের দেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। বেসান্ত নগরে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। দিণ্ডিগুল, পান্ডিয়ানতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফোরশোর এস্টেট বাস ডিপোর কাছে এক প্রৌঢ়ার দেহ উদ্ধার হয়েছে ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় ‘মিচাং’ পূর্ব উপকূলে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে চেন্নাইয়ের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে ১২টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি আজ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আজ সকালে নেলোর এবং মাছিলিপত্তমের মধ্যে দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে একটি প্রবল ঝড় আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস ।
দক্ষিণের দুই রাজ্যে মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সব সময় মাইকিং করা হচ্ছে। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের দূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীও নেমেছে উদ্ধারকাজে। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই ৩ হাজার জনকে সরানো গেছে। এছাড়াও ৫ হাজারের বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে রাজ্যে।চেন্নাইয়ের বানভাসি অবস্থার মধ্যেই আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চেন্নাই ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়টি আজ বাপটলা উপকূলে পৌঁছানোর সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি আধিকারিকদের ত্রাণ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রবল ঝড়ের প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ৮ টি জেলা তিরুপতি, নেলোর, প্রকাশম, বাপাতলা, কৃষ্ণা, পশ্চিম গোদাবরী, কোনাসিমা এবং কাকিনাদার জন্য সতর্কতা জারি করেছে ।
মুখ্যমন্ত্রী রেড্ডি আধিকারিকদের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি এড়াতে ঝড়টিকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ প্রতি ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে। রেড্ডি বলেছেন যে সমস্ত ঘূর্ণিঝড়-আক্রান্ত জেলার জন্য বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা কালেক্টরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবেন এবং আরও তহবিলের প্রয়োজন হলে সরকার এটির ব্যবস্থা করবে। তিনি সিস্টেমকে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ মোকাবেলার অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার করতে বলেন ।
তবে ঘূর্ণিঝড় ‘মিচাং’-এর বিশেষ কোনো প্রভাব পরবে না পশ্চিমবঙ্গে । আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে,রাজ্যে মেঘলা আকাশ থাকবে। আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের কয়েক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ।।