এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ নভেম্বর : ‘আইন যখন হয়েছে সিএএ লাগু হবেই’ এবং হিন্দু শরণার্থী ভাইদের এদেশে সমান অধিকার আছে’ বলে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃণমূলের দুর্নীতি ও বঞ্চনার প্রতিবাদে বিজেপির জনসভায় যোগ দিতে আজ বুধবার কলকাতার ধর্মতলায় জনসভায় যোগ দেন অমিত শাহ । সভায় পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে কার্যত তুলোধুনো করেন তিনি । তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিত শাহ বলেন, ‘যে মমতা ব্যানার্জি অনুপ্রবেশের কারনে পার্লামেন্ট চলতে দিতেন না, সেই মমতা ব্যানার্জি অনুপ্রবেশকারীদের প্রকাশ্যে ভোটার কার্ড আর আধার কার্ড বিলি করছে । অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড,আধার কার্ড করে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ফোন নম্বর পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে । বাংলার অনুপ্রবেশ সমস্যা ভয়ংকর আকার ধারন করেছে ।’ সেই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দেন,’আমরা সিএএ লাগু করব । আইন যখন হয়েছে সিএএ লাগু হবেই এবং হিন্দু শরণার্থী ভাইদের এদেশে সমান অধিকার আছে ।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন,’আমাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারী দিদি দু’বার বিধানসভা থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছে । দিদি শুনে রাখুন, শুভেন্দুজিকে তো আপনি বিধানসভা থেকে বের করে দিতে পারেন,কিন্তু বাংলার মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না । বাংলার মানুষ মানুষ এখন বলছে যে দিদি আপনার সময় সমাপ্ত হয়ে গেছে ।’ এরপর বিশাল জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,’সোনার বাংলা,পরিবর্তন, মা-মাটি-মানুষের কথা বলে বামপন্থীদের সরিয়ে দিদি ক্ষমতায় এসেছে । আপনারাই বলুন, পরিবর্তন হয়েছে ? অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়েছে ? তোষামোদ বন্ধ হয়েছে ? রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হয়েছে? দূর্নীতি বন্ধ হয়েছে?’
দূর্নীতি ও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে অমিত শাহ বলেন,’দূর্নীতির কারনে দেশ জুড়ে পশ্চিমবঙ্গের বদনাম হচ্ছে । সিন্ডিকেট আর কাটমানির কারনে বাংলার মানুষ আজ ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছে । মোদীজি কোটি কোটি টাকা বাংলায় পাঠাচ্ছেন,কিন্তু তৃণমূলের সিন্ডিকেট সেই টাকা গরীবের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে দিচ্ছে না । কখনো যে বাংলায় সকালে রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনা যেত, আজ বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় । গোটা দেশে গরিবি কম হলেও,বাংলায় গরিবি কমছে না । ভ্রষ্টাচার চরম সীমায়। গুজরাটের কোনো নেতার বাড়িতে এত টাকার স্তুপ কেউ কখনো দেখেনি । দিদি এই ভয়ে দেবী দুর্গার স্তব করছেন,যাতে কেউ ভাইপোর নাম না বলে ফেলে । যে নিজেই যুক্ত সে দূর্নীতি কখনোই বন্ধ করতে পারবে না ।’
তিনি বলেন,’সাহিত্য,বিজ্ঞান,শিল্পকলা, স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব যে বাংলা, আজ পিছনের সারিতে চলে এসেছে । নির্বাচনের সময় হিংসার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি । অনুপ্রবেশ মমতা ব্যানার্জি সরকার বন্ধ করতে পারছে না ।’
তিনি বলেন,’২৭ বছর বামপন্থীদের শাসন ছিল। মমতাদি তৃতীয়বারের জন্য জিতেছেন । লাল ভাই আর তৃণমূল মিলে বাংলাকে বরবার করে দিয়েছে।’
‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’-এর প্রসঙ্গও এদিন ধর্মতলার জনসভায় উল্লেখ করেন অমিত শাহ । তিনি বলেন,’এই ময়দানেই সুরাবর্দী ডাইরেক্ট অ্যাকশনের ঘোষণা করেছিল । কিন্তু এখানেই মহান গোপাল মুখার্জি তার প্রতিরোধ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন ।’ তিনি বলেন,’এই সেই ময়দান, যেটা ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকে জুড়ে রাখার কাজ করেছিল । ভারতীয় জনতা পার্টির জন্যও এই ময়দান খুবই শুভ । আমি ২০১৪ সালের নভেম্বরে আমি এখানে এসেছিলাম,আর তখনই বিজেপির সভাপতি হিসাবে তৃণমূলকে উৎখাত করার কথা ঘোষণা করেছিলাম । আমাদের ১৮ লোকসভা ও ৭৭ বিধানসভা আসন দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের আমি ধন্যবাদ জানাই । বাংলার মানুষ নিশ্চিত করেছে যে এরপর এখানে বিজেপির সরকার হবে । বাংলার ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে । ৭৭ আসন দিয়েছে । যদি ২০২৬ সালে এখানে বিজেপির সরকার গঠন করতে চান তাহলে ২০২৪ সালে মোদীজিকে ফের প্রধানমন্ত্রী করে তার শুরু করুন ।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রশংসা করে অমিত শাহ বলেন,’মোদীজি ৬০ কোটি গরীবের জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছেন । আতঙ্কবাদকে সমাপ্ত করে দিয়েছেন । যে ৩৭০ ধারার জন্য বাংলার সুপুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি আত্ম বলিদান দিয়েছেলেন,সেই ৩৭০ ধারা হঠিয়ে দিয়েছেন মোদীজি ।’
রামমন্দির ইস্যুতেও কংগ্রেস ও মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করেছেন অমিত শাহ । তিনি বলেন,’কংগ্রেস আর মমতা ব্যানার্জির পার্টি মিলিত হয়ে রামমন্দির নির্মানের কাজ আটকে রেখেছিল । মোদীজি ২০১৯ সালে ভূমি পূজন করেছিলেন,আর ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি মোদীজি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে চলেছেন ।’ এরপর তিনি ‘জয় শ্রীরাম শ্লোগান’ দেন ।
রাজ্যের দলীয় কর্মীদের হত্যার প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন,’দলীয় ২১২ বিজেপি কর্মকর্তাকে হত্যা হয়েছে । কর্মকর্তারা আমাদের ভাই । এর বদলা ২০২৬ সালে মানুষ নেবে ।’।