প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ নভেম্বর : আবারও প্রকাশ্যে এল এই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ দশা।সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও নেই সিটি স্ক্যানের মেশিন।তাই সিটি স্ক্যান করানোর জন্যে রোগীকে পূর্ব বর্ধমানের কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের স্ট্রেচারে চাপিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পরিজনরা।তাঁরা প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা রোগী সহ স্ট্রেচার সড়ক পথ দিয়ে ঠেলে নিয়ে গিয়ে পৌছান বেসরকারী সিটি স্ক্যান সেন্টারে।পথের দু’ধারে থাকা সাধারণ মানুষজন সেই দৃশ্য দেখে রোগী পরিজনদের মতই নিজেরাও কপাল চাপড়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন ।
যে রোগীকে স্ট্রেচারে চাপিয়ে স্ট্রেচার ঠেলতে ঠেলতে পরিজনরা নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর নাম সাহার আলী মল্লিক। পেশায় দিনমজুর মধ্যবয়স্ক এই ব্যক্তির বাড়ি জেলার মেমারি থানার মহিষপুরে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েকদিন আগে পরিবারের লোকজন কয়েকদিন সাহার আলীকে কালনা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক শনিবার সাহার আলীর সিটি স্ক্যান করানোর কথা লিখে দেন।
কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এক দরজা থেকে আর এক দরজা ঘুরে পরিজনরা জানতে পারেন সেখানে সিটি স্ক্যান করানোর ব্যবস্থা নেই । আর তখনই রোগীর পরিজনদের মাথায় হাত পড়ে যায়। অগত্যা রোগী সাহার আলী মল্লিক কে হাসপাতালেরই একটি স্ট্রেচারে চাপিয়ে নেন পরিজনরা। রোগী সহ স্ট্রেচার ঠেলে তাঁরা সড়ক পথ ধরে বেসরকারী সটিস্ক্যান সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। শেষ পর্যন্ত রোগীর সটিস্ক্যান করাতো এই ভাবেই তাঁদের প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যেতে হয় ।
এই ভাবে স্ট্রেচারে ঠেলে রোগীকে নিয়ে সড়ক পথ ধরে যেতে হচ্ছে কেন ? এই প্রশ্ন করা হলে রোগীর
ছেলে সবর বলেন,“কালনা সুপার স্পেলালিটি হাসপাতালে যে সটি স্ক্যানের ব্যবস্থা নেই সেটা আমাদের জানা ছিল না । কালনা হাসপাতালে রোগীর সিটিস্ক্যান হবেনা , একথা জানার পর আমাদের মাথায় হাত পড়ে যায়।কোন অ্যাম্বুলেন্স না মেলায় ভেবেছিলাম টোটোয় করে রোগীকে বাইরে সটিস্ক্যান করাতে নিয়ে যাবো। কিন্তু রোগী সাবের আলীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় তিনি উঠে বসতে পর্যন্ত পারছিলেন না। তাই আর কোন বিকল্প পথ খুঁজে না পেয়ে আমরা স্ট্রেচারেই রোগীকে শুইয়ে নিয়ে স্ট্রেচার ঠেলে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সিটিস্ক্যান করাতে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় ।
এদিকে গুরুতর অসুস্থ একজন রোগীকে স্ট্রেচারে চাপিয়ে নিয়ে রোগী পরজনদের কর্তৃপক্ষের নজর বিপদজনক ভাবে পথে বেরিয়ে পড়ার খবর
হাসপাতালে পৌছাতেই তোলপাড় পড়ে যায় ।
হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার গৌতম দাস ঘটনা জানার পর স্বীকার করে নেন,ঘটনাটি সত্যিই অমানবিক।রোগীর পরিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এই ঘটনা ঘটতো না। রোগীর জন্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেত ।
জেলায় ইনসাফ যাত্রায় অংশ নেওয়া সিপিএম নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এদিন কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘটনার কথা জেনে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি। তিনি বলেন এখন পশ্চিমবাংলায় লাশ আনতে হলে ব্যাগে করে পুরে নিয়ে আসত হয় । পশ্চিশবঙ্গের হাসপাতালে কুকুরের ড্যায়ালিশিস হয় । পশ্চিমবঙ্গে মানুষের চিকিৎসা কেউ করলো তাকে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তারদের ভোট হলে পিটিয়ে মারা হয়। গোটা পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত প্রাইমারি হেল্থ সেন্টার থেকে শুরু করে পি জি পর্যন্ত,হসপিটারের বাইরে দাড়িয়ে মদন মদন মিত্রও কাঁদে ।
এমনকি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনাটমি বিভাগ থেকে লাশ চুরির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মিনাক্ষী বলেন,’গোটা পশ্চিমবাংলার ভবিষ্যৎ টাকে চুরি করেছে আর খুন করেছে এই রাজ্যের সরকার । তাদেরকে সেভ করে রেখেছে বিজেপি পার্টি। আর মদত যুগিয়ে চলেছে বিডিও ও পুলিশরা । তাই এখানে জ্যান্ত লাশও চুরি হয়,আর মরে যাওয়া লাশও চুরি হয় ।’।