এইদিন ওয়েবডেস্ক,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),১৯ নভেম্বর : পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করার জন্য বধূর উপর চাপ সৃষ্টি করছিল শিক্ষক স্বামী । কিন্তু স্বামীর এই প্রকার নোংরা প্রস্তাবে সায় দেননি বধূ । যেকারণে বধূর উপর রীতিমতো নির্যাতন শুরু করে দেয় তার স্বামী । স্বামীর এই প্রকার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাস ছয়েক আগে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মঘাতী হন বধূ । বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বধূর মা-বাবা । কিন্তু পুলিশের তরফে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি,উপরন্তু তাদের হয়রানি করা হত বলে অভিযোগ । শেষে মানসিক অবসাদে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন বধূর মা । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা থানার বুলবুলিতলা ফাঁড়ির অন্তর্গত গুপ্তিপুর এলাকায় । মৃতার নাম প্রতিমা চট্টোপাধ্যায় ।
শনিবার সকালে বাড়ির একটা ঘরের মধ্যে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের কথা চাওড় হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার বাসিন্দারা । পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ । এমনকি পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন মৃতের পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীরা । শেষে রাতের দিকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এসে ঘরের তালা ভেঙে জোর করে মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে বলে অভিযোগ । এমনকি পরিবারের মহিলাদের পর্যন্ত মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আজ রবিবার দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
জানা গেছে,গুপ্তিপুরের বাসিন্দা সুশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ও প্রতিমা চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সুস্মিতার বিয়ে হয়েছিল হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা স্বপন চক্রবর্তীর ছেলে পেশায় স্কুল শিক্ষক সৌম্য চক্রবর্তীর সাথে । কিন্তু মাস ছয়েক আগে বাপের বাড়িতে চলে আসেন সুস্মিতা । সেখানেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে তিনি আত্মঘাতী হন । সুশঙ্করবাবুর অভিযোগ,’মেয়ের বিয়েতে ৭ ভরি সোনা,নগদ ৭০,০০০ টাকা এবং আনুষঙ্গিক দানপত্র দিয়েছিলাম । জামাই শিক্ষকতা করা সত্ত্বেও স্থানীয় একটা সোনারূপার গহনার দোকানে মেয়েকে খাতা সারাইয়ের কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল । পারিশ্রমিকেত টাকা নিয়ে নিত জামাই । এর পরেও মেয়েকে পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করার চাপ দিত সৌম্য । কিন্তু জামাইয়ের এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি আমার মেয়ে । একারণে মেয়ের উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতো সৌম্য ও তার বাড়ির লোকজন ।’ আর সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় বলে অভিযোগ মৃতার বাবার । মৃতার আত্মীয় সুবীর চ্যাটার্জির অভিযোগ, ‘সৌম্য চক্রবর্তী পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছিল । এনিয়ে প্রতিবাদ করলে সুস্মিতাকে সে মারধরও করত ।’
জানা গেছে,মেয়ের মৃত্যুর পর জামাই সৌম্য চক্রবর্তী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কালনা থানার অন্তর্গত বুলবুলিতলা ফাঁড়িতে এফআইআর রজু করেছিলেন সুশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় । কিন্তু পুলিশ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ । বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় । শেষে আদালতের নির্দেশের শুক্রবার গুপ্তিপাড়ায় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে পন বাবদ দেওয়া সামগ্রী উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন সুশংকর ও তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন । সেই সময়েও বুলবুলিতলা ফাঁড়ির মেজবাবুর বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে । সুবীর চ্যাটার্জি বলেন,’আলমারি,ড্রেসিং টেবিল (লকার ভাঙা) ও অল্প কিছু দানপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হলেও এখনও বহু দানসামগ্রী দেওয়া হয়নি সৌম্য চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে ।’
জানা গেছে,হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়া থেকে ফিরে আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বাড়ি থেকে সুশঙ্করবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় । পুলিশের এই প্রকার ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন গ্রামবাসীরা । তারই প্রতিক্রিয়া দেখা যায় পুলিশ মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে । পরে কালনা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী এনে জোর করে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ । সেই সময় সুশঙ্করবাবুর বাবুর বাড়ির আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকজনদের মারধরের অভিযোগও ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে । দোলন চ্যাটার্জি নামে মৃতার এক আত্মীয়ার অভিযোগ যে তিনি যখন রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন সেই সময় এক পুরুষ পুলিশকর্মী তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে ।
মৃতার পরিবার সাফ জানিয়েছে যে পুলিশ কোনো রকম পরামর্শ না করেই মৃতদেহ জোর করে নিয়ে গেছে । তাই তারা ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ নিতে যাবেন না । এদিকে জানা গেছে যে পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্যে কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে । কিন্তু শনিবার বিকেল চারটে পর্যন্ত পরিবারের তরফে কেউই সেখানে ছিলেন না বলে জানা গেছে ।।