এইদিন ওয়েবডেস্ক,বামনগোলা(মালদা),১৮ নভেম্বর : এবড়োখেবড়ো মেঠো পথ । দুই ব্যক্তির কাঁধে একটা বাঁশ নিয়ে হনহন করে হেঁটে চলেছেন৷ বাঁশের দুপ্রান্তের দড়িতে ঝোলানো একটা খাটিয়া । আর খাটিয়াতে কম্বল মুড়ে শুয়ে আছেন এক রোগিনী । এমনই এক মর্মান্তিক চিত্র লক্ষ্য করা গেল পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বামনগোলা ব্লকের গোবিন্দপুর-মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালডাঙ্গা গ্রামে । জানা গেছে, রোগিনীর নাম মামণি রায় (২৫)। বৃহস্পতিবার থেকে থেকে তিনি জ্বরে ভুগছেন । কিন্তু বেহাল রাস্তার কারনে গ্রামে গাড়ি ঢোকে না । সেই কারনে মামণিদেবীর স্বামী কার্তিক রায় ও আরও একজন মিলে তাঁকে খাটিয়ায় ঝুলিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে বামনগোলা গ্রামীণ হাসপাতালের নিয়ে যাচ্ছিলেন । কিন্তু ওই বধূকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । এদিকে বধূর এই প্রকার মর্মান্তিক মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা এলাকা ।
জানা গেছে,মালডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক রায় পেশায় ক্ষুদ্র কৃষক । তাঁর স্ত্রী মামণি রায় বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন । শুক্রবার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কার্তিকবাবু । কিন্তু বাধ সাধে বেহাল রাস্তা । কারন মালডাঙ্গা গ্রাম থেকে বামনগোলা গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার । তার মধ্যে মালডাঙ্গা গ্রাম থেকে রাজ্য সড়ক পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার এমনই বেহাল অবস্থা যে গাড়ি তো দুরের কথা পায়ে হেঁটে যেতে গেলে পর্যন্ত হোঁচোট খেতে হয় । যেকারণে স্ত্রীকে খাটিয়ায় ঝুলিয়ে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কার্তিকবাবু । কিন্তু হতভাগ্য রোগিনী সেই ধকল সহ্য করতে না পেরে রাস্তাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃতার দু’মাসের একটি শিশুসন্তান রয়েছে ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ,মালডাঙ্গার এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে । এই রাস্তার উপর মালডাঙ্গা ছাড়াও আশপাশের সায়েস্তাবাদ, নপাড়া, হাড়িভাঙ্গা, আইগমতারা সহ বেশকিছু গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় থাকার কারণে প্রসূতি ও গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চুড়ান্ত নাকাল হতে হয় রোগির পরিবারের লোকজনদের । রাস্তা মেরামতের জন্য পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের ।।