এইদিন ওয়েবডেস্ক,শ্রীনগর,১৮ নভেম্বর : শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে দুটি পৃথক সংঘর্ষে নিকেশ হয়েছে ৬ সন্ত্রাসবাদী । উপত্যকার কুলগাম জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে রাতভর সংঘর্ষের পর পাঁচজন লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) সন্ত্রাসী খতম হয়েছে । অন্যদিকে রাজৌরিতে একজন সন্ত্রাসীকে খতম করা হয় । কুলগাম জেলায় দীর্ঘ ১৮ ঘন্টার বন্দুকযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে হয়েছে এবং এলাকাটিকে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে,” কাশ্মীর জোনের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি), ভি কে বার্দি পিটিআইকে বলেছেন,’নিহত সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এলাকাটিতে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে ।’ খতম হওয়া সন্ত্রাসীদের লাশ ড্রোন ফুটেজের সাহায্যে পাওয়া যায় এবং রাজৌরি জেলার বুধলের সংঘর্ষস্থল বেহরোট থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান ।
নিরাপত্তা বাহিনী বৃহস্পতিবার এলাকায় সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর কুলগামের নেহামা গ্রাম ঘেরাও করে অনুসন্ধান অভিযান শুরু করেছিল । সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা কর্মীদের উপর গুলি চালালে পালটা গুলি চালাতে শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী । সন্ত্রাসীরা যেখানে আটকা পড়েছিল সেই এলাকার চারপাশে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর কর্ডন বজায় রেখে রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল ।
নেহামা এলাকার সামনোতে রাতভর শান্ত থাকার পর শুক্রবার ভোররাতে গুলি বিনিময় হয় । এদিকে সন্ত্রাসীরা যে বাড়িতে লুকিয়ে ছিল সেখানে গুলি বিনিময়ে আগুন ধরে যায়,ফলে সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয় ।
খতম সন্ত্রাসীরা হল সমীর আহমেদ শেখ (পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট-এর সন্ত্রাসী ), ইয়াসির বিলাল ভাট, দানিশ আহমেদ থোকার, হানজুল্লাহ ইয়াকুব শাহ এবং উবায়েদ আহমেদ পাদ্দার (সবই দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফের সন্ত্রাসী)। সমীর আহমেদ শেখ ২০২১ সালে সন্ত্রাসবাদী দলে যোগ দিয়েছিল, অন্যরা গত বছর বা চলতি বছর যোগ দেয় । নিরাপত্তা আধিকারিকদের মতে, পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট এবং দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট উভয়ই এলইটি-এর ছায়া সংগঠন।
কুলগাম অপারেশন সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে দক্ষিণ কাশ্মীর রেঞ্জের পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি), রইস ভাট বলেছেন যে পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, নিহত আল্ট্রারা সন্ত্রাসী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ ছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা,বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতা সহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী অপরাধে জড়িত ছিল । তারা গত বছর শোপিয়ানে কাশ্মীরি পণ্ডিত সোনু ভাটের উপর হামলা, শোপিয়ানের হীরপোরা বাটগুন্ডে একটি সংখ্যালঘু পিকেটে হামলা, ওয়াট্টু কিগামে একটি কর্ডন পার্টিতে হামলা এবং এই বছরের শুরুতে শোপিয়ানে গাগরানে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হামলার সাথে জড়িত ছিল। তিনি বলেন,এই অভিযানটি এলাকায় কর্মরত ৩৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস,৯ পাড়া এবং ১৮ তম ব্যাটালিয়নের ইউনিটগুলির মধ্যে সমন্বয়মূলক প্রচেষ্টার ফল । এটি একটি বড় সাফল্য কারণ এই সন্ত্রাসীরা উপত্যকার সংখ্যালঘুদের উপর বেশ কয়েকটি হামলার সাথে জড়িত ছিল । ডিআইজি বলেন, এনকাউন্টার সাইট থেকে চারটি একে-সিরিজ রাইফেল, চারটি গ্রেনেড এবং দুটি পিস্তল সহ অপরাধমূলক উপকরণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে জম্মু অঞ্চলের রাজৌরি জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি যৌথ দলের সাথে সংঘর্ষে আরেক সন্ত্রাসী খতম হয়েছে । সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) এর একটি যৌথ দল বুধল থানার সীমানার মধ্যে বেহরোট এলাকায় একটি অভিযান শুরু করেছিল । সন্ত্রাসী একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিল, নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্যের দিকে যাওয়ার সময় তাদের উপর গুলি চালায় সে । কিছু সময় ধরে গুলি বিনিময় চলতে থাকে এবং একজন সন্ত্রাসী খতম হয় । এনকাউন্টার সাইট থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, তিনটি ম্যাগাজিন, তিনটি গ্রেনেড এবং একটি থলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । যদিও ওই সন্ত্রাসীর পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
পাশাপাশি বুধবার নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর জম্মু ও কাশ্মীরের উরি সেক্টরে দুই অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসীকে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে । কাশ্মীর জোন পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানের সময় অপরাধমূলক সামগ্রী, অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে । উরিতে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুই সন্ত্রাসীকে নির্মূল করার জন্য অপারেশনে নিযুক্ত সেনার প্রশংসা করেছেন ১৫ কোরের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই ।।