প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ নভেম্বর : ভিলেজ পুলিশদের ঢাল তরোয়াল হীন নিধিরাম সর্দার বলে অনেকেই কটাক্ষ করে থাকেন। কিন্তু এই ধারণা যে কতটা অমূলক তা জীবন বাজি রেখে দুই সশস্ত্র দুস্কৃতিকে পাকড়াও করে প্রমান করে দিলেন দুই ভিলেজ পুলিশ।ভিলেজ পুলিশদের দৌলতে মঙ্গলবার জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা পাওয়ায় অপাতত স্বস্তিতে এক লটারি টিকিট ব্যবসায়ী।এই ঘটনা বৃত্তান্ত জেনে স্বয়ং পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার আউসগ্রাম থানার দুই ভিলেজ পুলিশ সুজন পাল ও জাকির শেখের ভূয়সী প্রশংসা না করে পারলেন না। আউসগ্রামবাসীর কাছেও এখন নয়নের মণি হয়ে উঠেছে ওই দুই ভিলেজ পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে,ধৃত দুই দুস্কৃতির নাম ইব্রাহিম শেখ ও তুফান চৌধুরী। তাদের বাড়ি কাটোয়ার রাজোয়া এলাকায়।আর এই দুই দুস্কৃতিকে পাকড়াওকারী ভিলেজ পুলিশ সুজন পালের বাড়ি আউসগ্রামের গোবিন্দপুর গ্রামে। অপর ভিলেজ পুলিশ জাকির সেখের বাড়ি আউসগ্রামের ভেদিয়ায়। কি ভাবে এই দুই দুস্কৃতীকে ভিলেজ পুলিশরা পাকড়াও করলো ?এর উত্তরে আউসগ্রাম থানার পুলিশ কর্তারা বলেন,“রোমহর্ষক সেই ঘটনাটি মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে ২ বি জাতীয় সড়কে আউসগ্রামের শিববাটি এলাকায়।ওই সময় জেলার মঙ্গলকোটের রঘুনাথপুরের লটারি টিকিট ব্যবসায়ী সুরজ শেখ এর দোকানের কর্মচারী শাহাজাহান শেখ ব্যাগে নগদ টাকা নিয়ে বাইকে চেপে ব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে থাকা ব্যাগে ছিল নগদ ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪৪০ টাকা এবং ৭ লক্ষ ৮ হাজার ৮০৫ টাকার একটি চেক। শাহাজাহান নগদ ওই টাকা ও চেক যখন গুসকরার একটি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাঙ্কে জমা করতে যাচ্ছিলেন ।
পুলিশের দাবি শাহাজাহানের কাছে যে লাখ লাখ টাকা রয়েছে সেটা দুস্কৃতিরা কোন ভাবে জানতে পারে। শাহাজাহান যখন আউসগ্রামের শিববাটি
এলাকায় জাতীয় সড়ক ধরে বাইক চালিয়ে যাচ্ছিল তখন পিছু ধাওয়া করে এসে দুস্কৃতিরা শাহাজাহানের চলন্ত বাইকে লাথি মারে।শাহাজাহান মাটিতে উল্টে পড়ে যেতেই ওই দুই দুষ্কৃতী প্রথমে হেলমেট দিয়ে শাহাজাহানের মাথায় আঘাত করে। পরে তারা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শাহাজাহানের কাছে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে বাইকে চেপে পালিয়ে যায়। সেসময় ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরচ্ছিলেন আউশগ্রামের উক্তা অঞ্চলের ভিলেজ পুলিশ সুজন পাল। তিনি বিষয়টি এক ঝলক দেকেই বুঝতে পারেন দুস্কৃতিরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন।ততক্ষণাত ভিলেজ পুলিশ সুজন ছিনতাইকারীদের পিছনে বাইক নিয়ে ধাওয়া করার পাশাপাশি ফোনে ভেদিয়া অঞ্চলের ভিলেজ পুলিশ জাকির শেখ ও ভেদিয়া ক্যাম্পের পুলিশকে খবর দেয়।
ভিলেজ পুলিশ সুজন পাল বাইক নিয়ে দুস্কৃতিদের পিছনে ধাওয়া করায় দুস্কৃতিরা জাতীয় সড়কের বাগবাটি মোড়ে পুলিশী বাধা পেয়ে অন্য রাস্তায় ঢুকতে পারে নি। তারা ধরাপড়ার হাত থেকে বাঁচতে আউশগ্রামের বুধরো গ্রামে ঢুকে পড়ে।পুলিশ দ্রুত সেখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের ধরে ফেলে । উদ্ধার হয় শাহাজাহানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ও চেক।পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ব্যবহৃত বাইক, মোবাইল ফোন এবং হেলমেটটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।পুলিশ সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে বুধবার দুই ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ। ধৃতদেরকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজে সন্ধান চালানোর পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রটিকেও উদ্ধার করার চেষ্টা চালানো হবে পুলিশ বলে গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার আমনদ্বীপ জানান,দুই ভিলেজ পুলিশ খুব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের কাজে পুলিশ বিভাগ গর্বিত। দুই ভিলেজ পুলিশ সুজন পাল ও জাকির সেখকে কুর্নিশ জানান পুলিশ সুপার ।।