এইদিন ওয়েবডেস্ক,সিডনি,১১ নভেম্বর : অস্ট্রেলিয়ার সিডনি রাজ্যের বৃহত্তম কন্টেইনার বন্দর পোর্ট বোটানিতে একটি ইসরায়েলি পরিবহন জাহাজকে চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে হামাস সন্ত্রাসীপন্থীরা । প্যালেস্টাইন জাস্টিস মুভমেন্ট গ্রুপ আহ্বানে শত শত সন্ত্রাসীপন্থী জিহাদিরা প্রথমে ফোরশোর বোট র্যাম্পে জড়ো হয়েছিল এবং তারপর তারা ইসরায়েলি পরিবহন জাহাজ জেডআইএমকে ডক হওয়া থেকে “বয়কট” করার চেষ্টা করে বলে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমের খবর । জাস্টিস গ্রুপ আজ শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া ‘এক্স’ -এ লিখেছে, ‘জিআইএম-এর বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে । সম্প্রদায় এবং ইউনিয়নের শত শত সমর্থক গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং বন্দরে এর সহায়কদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে ।’ জেট স্কিতে কয়েক ডজন হামাসপন্থী সমুদ্রের জলে নেমে ইসরায়েলের “অস্ত্রের প্রধান পরিবহনকারী” এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় ।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার ওই হামাসপন্থী গোষ্ঠী বলেছিল যে জিআইএম তার সময়সূচী পরিবর্তন করলেও, বিক্ষোভ এগিয়ে যাবে ।
শনিবার সিনেটর মেহরীন ফারুকী উপস্থিত ছিলেন এবং অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন।
মঙ্গলবার এনএসডবলু প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস জিবি-এর হামাসপন্থী বেন ফোর্ডহ্যামকে বলেছিলেন যে কোনও জাহাজ অবরুদ্ধ করা উচিত নয় । পাশাপাশি তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ইসরায়েলের বাণিজ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন ।
তিনি ফোর্ডহ্যামকে বলেন,’আমি শুধু এটা স্পষ্ট করতে চাই যে একটি মুক্ত দেশে বসবাসের মানে এই নয় যে আপনি বন্দরে নেমে যেতে পারেন এবং অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্বজুড়ে তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে বৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে পারেন ।’ তিনি আরও বলেন,’ইজরায়েল হল মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ,তারা অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য অংশীদার,তারা অস্ট্রেলিয়ার মিত্র এবং ব্যক্তিগত প্রতিবাদকারীদের ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে বাণিজ্য বন্ধ করা হবে বলে পরামর্শ দেওয়া বা মনে করা হাস্যকর ।’
এনএসডবলু প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস বলেন,’কিউবা বা সৌদি আরব বা চীন বা অন্য কোনও দেশের সাথে বাণিজ্য করার সময় আমি এই লোকদের বন্দরের নিচে কখনো দেখিনি, তাদের সাথে মতবিরোধ বা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা থাকলেও । সুতরাং ইসরায়েলের বিষয়েও তাদের এটি করা উচিত নয়।’
মিনস বলেছেন যে এন এস ডবলুতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অনুমতি দেওয়া হলেও, লোকেরা কিছু মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করতে পারে না এবং আপনি বাণিজ্য বন্ধ করতে পারবেন না । আপনি রাজ্যের অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাণিজ্য বন্ধ করতে পারবেন না এবং আপনি সিডনির রাস্তায় ঘৃণা প্রচার করতে পারবেন না ।’
জানা গেছ,পোর্ট বোটানি বন্দরে বর্তমানে প্রচুর পুলিশ উপস্থিতি রয়েছে কারণ হামাসপন্থীদের ভিড় ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে । এদিকে, ভাউক্লুস এমপি কেলি স্লোয়েন একটি হামাসপন্থী গোষ্ঠী দ্বারা সংগঠিত একটি পরিকল্পিত মিছিলের বিষয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন,কারন ওই মিছিলটি সিডনির বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়ের বসতির মধ্য দিয়ে যাবে বলে স্থির করেছে ।
কেলি স্লোয়েন সোশ্যাল মিডিয়া ‘এক্স’-এ লিখেছেন, ‘আজ সন্ধ্যায় লিডকম (sic) থেকে পূর্ব শহরতলির দিকে পরিকল্পিত মোটরসাইকেল র্যালির জন্য আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন । ফিলিস্তিনিপন্থীদের মোটরসাইকেল র্যালিটি সিডনির বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়ের বসতির মাঝ বরাবর গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে। এতে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে ইহুদিদের ভয় দেখানোর জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে ।’
তিনি বলেন,’আমি পুলিশ এবং মন্ত্রীর কাছে আমার উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমি জানি সেখানে ভারী পুলিশ উপস্থিতি থাকবে। তবে প্রতিবাদটি পুনঃনির্দেশিত হলে ঝামেলা এড়ানো যেত। আমি আমাদের সম্প্রদায়কে শান্ত মাথা রাখতে এবং এই বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি ।’
প্রসঙ্গত,মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে হামাসপন্থীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।
৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে এবং জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকা এবং অস্ত্রভান্ডারে বেছে বেছে বোমাবর্ষণ করেছে । হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১,০০০ জনের বেশি, যার মধ্যে ৪,৫০৬ জন শিশুও রয়েছে বলে দাবি করেছে হামাস । যদিও হামাসের এই পরিসংখ্যানের উপর আস্থা রাখছে না বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলি ।।