এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ নভেম্বর : বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিমরা ভারতের নিরাপত্তার জন্য ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । মূলত এদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলাদের নিয়ে মারাত্মক পরিকল্পনা করেছে ভারতের ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি । রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে এদেশে বংশবৃদ্ধি ঘটানো এবং নাশকতার কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ) । হামলা চালানোর জন্য রোহিঙ্গা মহিলাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে । জেহাদি ভাষণ দেওয়ার জন্য ‘টেরর সেল’ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে এনআইএ ।
বুধবার(৮ নভেম্বর ২০২৩) আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, হরিয়ানা,রাজস্থান, পুদুচেরি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর মিলে মোট ১০ টি রাজ্যের মোট ৫৫ টি স্থানে বিএসএফের সাথে যৌথ অভিযান চালায় এনআইএ । গুয়াহাটি, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর, জয়পুরের এনআইএ শাখায় ৪ টি মানব পাচারের মামলা নথিভুক্ত করার পরে এই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা । এনআইএর অপারেশনের পরে, দ্বারা মানব পাচার নেটওয়ার্কের মোট ৪৪ জন অপারেটিভকে গ্রেফতার করা হয় । তার মধ্যে ত্রিপুরায় ২১ জন,কর্ণাটকে ১০ জন, আসামে ৫ জন,পশ্চিমবঙ্গে ৩ জন, তামিলনাড়ুতে ২ জন, পুদুচেরিতে ১ জন,তেলেঙ্গানায় ১ জন এবং হরিয়ানায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে ধৃত ৩ জনকে মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া, বারাসত ও গাইঘাটা থেকে গ্রেফতার করা হয় । ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ডিজিটাল ডিভাইস,যেমন মোবাইল ফোন, সিম কার্ড এবং পেনড্রাইভ । আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিচয়-সম্পর্কিত জাল নথি, ২০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় মুদ্রা এবং ৪৫৫০ মার্কিন ডলারও উদ্ধার হয়েছে।
এনআইএ জানতে পেরেছে যে ভারতে পাচার হয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ‘মোডাস অপারেন্ডি’ নিয়ে কাজ করছে এদেশের বিভিন্ন ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি । তাদের লক্ষ্য রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলাদের দিয়ে বিপুল সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেওয়া এবং শৈশব থেকেই ওই শিশুদের মধ্যে জিহাদি মানসিকতা তৈরি করা । এছাড়া,বাংলাদেশ, মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভারতে বসবাসের সূযোগ করে দেওয়ারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা মহিলাদের । সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে প্রতিমাসে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মহিলাদের এদেশে পাচার করে দিচ্ছে ভারতের বিভিন্ন ইসলামি কট্টরপন্থী সংগঠনগুলি । ভারতের নিয়ে আসার পর রোহিঙ্গা মহিলাদের তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে ভূয়ো আধার কার্ড,ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ডের পরিচয়পত্র ।
বৃহস্পতিবার এনআইএ সোশ্যাল মিডিয়া ‘এক্স’-এ জারি করা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ এবং ভারতে বসতি স্থাপনের সাথে জড়িত মানব পাচার নেটওয়ার্ক সম্পর্কীয় প্রাথমিক মামলা দায়ের করা হয় চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আসাম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) দ্বারা । এনআইএ আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটিতে এনআইএ থানায় একটি মামলা (RC 01/2023/NIA/GUW)নথিভুক্ত করে তদন্তের দায়িত্ব নেয় । তদন্তে নেমে এনআইএ জানতে পারে ভারতে জঙ্গি মডিউলের নেটওয়ার্ক তামিলনাড়ু, রাজস্থান, হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীর সহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেখান থেকে কাজ করছে এই চক্রটি । ওই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংযোগ রয়েছে । তারা ভারত- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর অঞ্চলগুলি সহ দেশের বিভিন্ন অংশে বিস্তার করেছে সন্ত্রাসবাদের জাল । দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং রাজ্যগুলিতে ভিত্তিক এই বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মডিউলটি ভাঙতে তিনটি নতুন মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনআইএ ।
বিবৃতিতে এনআইএ আরও জানিয়েছে, ধৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হবে। এই অবৈধ মানব পাচার নেটওয়ার্কগুলির কার্যকলাপ এবং পদ্ধতি সম্পর্কে আরও তদন্তের পর এই সমস্ত নেটওয়ার্কগুলির সমগ্র ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করা হবে ।।