এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৯ নভেম্বর : নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের আগে পুরনো সংসদ ভবনে বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । এনিয়ে দেশজুড়ে জোর জল্পনা চলছিল যে জহরলাল নেহেরুর সময় থেকে কংগ্রেসের শাসনকালে বেশ কিছু আইনকে বিলুপ্ত করে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী । তার মধ্যে রয়েছে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট(Hindu Marriage Act), পূজা স্থল আইন (Place of Worship Act),ওয়াকফ অ্যাক্ট(Wakf Act), মাইনরিটি কমিশন অ্যাক্ট (Minority Commission Act) প্রভৃতি । এই আইনগুলি মূলত হিন্দু বিদ্বেষ ও মুসলিম তোষামোদের জন্য কংগ্রেস লাগু করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে । ওই সমস্ত আইনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় ।
সম্প্রতি তিনি গুজরাটের কচ্ছে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন । ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’আমি গবেষণা করে যা দেখেছি, যে কাজ মুঘল তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে করেছিল – ধর্মান্তরকরণ,লুটপাট,সেই একই কাজ ব্রিটিশরা আইন তৈরি করে করেছিল,কিন্তু তার থেকে বেশি দুঃখের বিষয় হল স্বাধীনতার পরে আমাদের সরকারও ব্রিটিশদের সিস্টেমকে এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং তারা একটা নয় কম করে এমন ৫০ টি আইন তৈরি করে রেখেছে । তার মধ্যে কয়েকটা আইন আমি আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছি ।’
হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট(Hindu Marriage Act) :-
অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’উদাহরণ স্বরূপ,স্বাধীনতার পর পর বলা হয়েছিল সমান নাগরিক সংহিতা লাগু করা হবে । কিন্তু ১৯৫০ সালে জহরলাল নেহেরু সমান নাগরিক সংহিতা করেনি,পরিবর্তে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট করেছিল । কারন সমান নাগরিক সংহিতা আইন করতে গেলে ব্রিটিশদের ১৮৩৭ এর শরিয়ত অ্যাক্টকে বিলুপ্ত করার প্রয়োজন হত ৷ যাতে শরিয়ত অ্যাক্টকে বিলুপ্ত করতে না হয় সেজন্য নেহেরু সমান নাগরিক সংহিতা লাগু না করে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট করেছিল ।’
পূজা স্থল আইন (Place of Worship Act):-
তিনি বলেন,’১৯৯১ সালে কংগ্রেস আইন করল যে এখন থেকে আপনারা(হিন্দুরা) অযোদ্ধা ছাড়া কোনো মন্দিরের বিষয়ে আদালতে যেতে পারবে না । নাম রাখে পূজা স্থল আইন । খুব সুন্দর নাম ! পূজাস্থল নাম শুনে মনে হয় যে পূজাস্থলের দেখভালের জন্য আইন করা হয়েছে । কংগ্রেস আসলে গজনি -ঘোরি-বাবর ও হুমায়ুনের বেআইনি কর্মকাণ্ডকে আইনি করার জন্য ওই আইন করেছিল।
মাইনরিটি কমিশন অ্যাক্ট (Minority Commission Act) :- তিনি বলেন,’পরের বছর ১৯৯২ সালে আরও এক মহাপাপ করল কংগ্রেস । একই তিরে দুই নিশানা করেছিল । মাইনরিটি কমিশন অ্যাক্ট করল । সুবিধা দেওয়া হল মুসলিককে । কিন্তু ওরা হিন্দুদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে দিল । আইনত হিন্দু,জৈন, বৌদ্ধকে হিন্দু বলা হত । সমস্ত আইন হিন্দু,জৈন,শিখ ও বৌদ্ধদের জন্য এক হত । ১৯৯২ সালে প্রথমবার আইন করে জৈনকে সংখ্যালঘু করে দিল, বৌদ্ধকে সংখ্যালঘু করে দিল । শিখদের সংখ্যালঘু করে দিল । হিন্দুদের আলাদা করে দিল ।’
ওয়াকফ অ্যাক্ট(Wakf Act) :-
অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’তৃতীয় আইন, ১৯৯৫ সালে করল ওয়াকফ অ্যাক্ট । খুব বাজে আইন । যদি কচ্ছের এই হলঘরকে ওয়াকফ বোর্ড নিজের বলে দাবি করে তাহলে আপনারা সুরাতের আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না । আপনাকে আহমেদাবাদ গিয়ে ওয়াকফের সামনে গিয়ে হাজির হতে হবে । ওই আইন করা হয়েছিল ধর্মান্তরিত করার জন্য । এর প্রতিক্রিয়া দেখুন- মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া ৫০০ কিমি দূরে, ঝাবুয়ার আদিবাসীরা যারা কোনো দিন থানা পর্যন্ত দেখেনি,তহশিল বা আদালত দেখেনি,তাদের পক্ষে ভোপাল যাওয়া তো এক কথায় অকল্পনীয় । এখন ঝাবুয়ার আদিবাসীদের যদি ওয়াকফ বোর্ড নোটিশ পাঠিয়ে বলে যে জঙ্গলের যে জায়গায় তারা বসবাস করছে সেটা ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি এবং অবিলম্বে খালি করে দাও । তখন আদিবাসীরা কি করবে ? তাদের সামনে নিজেদের বাসস্থান বাঁচানোর জন্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না ।’
তিনি বলেন,’ওয়াকফ বোর্ড বড় বড় লোকেদের নোটিশ পাঠিয়ে টাকা তোলে,আর গরীব লোকেদের নোটিশ পাঠিয়ে ধর্মান্তরিত করার খেলা চালায় ।
সব চেয়ে বড় সমস্যা হল যে কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর যদি ওয়াকফ বোর্ড নোটিশ করে তাহলে সে আইনি লড়াই করবে । কিন্তু পতিত জমি জায়গাকে যদি ওয়াকফ বোর্ড নিজের বলে দাবি করে তাহলে কে আইনি লড়াই লড়বে ?’
রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট (Right to Education Act) :- অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’২০১২ সালে কংগ্রেস আরও একটা মহাপাপ করেছিল । রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট থেকে মাদ্রাসাকে আলাদা করে দিয়েছিল । বলা হয়েছিল দেশে সমান শিক্ষা লাগু করা হবে ৷ কিন্তু সেই আইন থেকে কংগ্রেস মাদ্রাসাকে আলাদা করে দিয়েছিল ।’
তিনি বলেন,’এই কারনেই আমি ১৯৯১ এর প্লেস অফ ওরশিপ অ্যাক্ট,১৯৯২ এর মাইনরিটি কমিশন এক্ট,১৯৯৫ এর ওয়াকফ অ্যাক্টকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছি । পাশাপাশি ২০১০ সালে কংগ্রেস নিজের পালিত এনজিও, পালিত সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের অর্থায়নের জন্য এফসিআরএ নামে যে আইন করেছিল, তার বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছি । সব মিলিয়ে এই ধরনের ২৫ আইনকে আমি আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছি ।’
অশ্বিনী উপাধ্যায় উপস্থিত শ্রোতাদের এই বিষয়ে তাদের কি করনীয় তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন । তিনি বলেন,’এখানে আপনাদের কি করনীয় থাকতে পারে ? ধরুন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বের করার জন্য আমি একটা পিআইএল দাখিল করেছি । কিন্তু বাংলাদেশিদের এদেশে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য আদালতে অন্তত ২২ টি পিটিশন জমা পড়েছে । আমাদের দেশের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক,প্রফেসর, আইএএস, আইপিএসরা যদি এই পিআইএলকে ব্যবহার করতে শুরু করে তাহলে আমার পিআইএল জোর পাবে । যেমন ধর্মান্তরকরণ নিয়ে আমার পিআইএলের বিরুদ্ধে ১০ টি পিটিশন জমা পড়েছে, তেমনি আমার সমর্থনে পড়লে ভালো হত ।’ তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন,’একটা পিটিশনে একজন ব্যক্তিই আদালতে যুক্তি উত্থাপন করতে পারে । যদি ৫ বা ১০ টি পিটিশন জমা পড়ে তাহলে ৫ বা ১০ জন আইনজীবী তর্কে অংশগ্রহণ করতে পারত,তাহলে লড়াই সমানে সমানে হত৷। এতে হচ্ছে কি আমি অল্পসংখ্যক হয়ে যাচ্ছি, আর আমার বিরুদ্ধে বহুসংখ্যক হয়ে যাচ্ছে ।’
পাশাপাশি তিনি উপস্থিত যুব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান,’রাষ্ট্র নির্মানের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসের আদর্শকে তুলে ধরুন আপনারা । একজন যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় নুন্যতম ৫,০০০ জন বন্ধু তৈরি করেন তাহলে লাখ লাখ লোক ওই সমস্ত মহান মনীষিদের আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবেন । যদিও
পরিশেষে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টে হয় । আর মানুষের ইচ্ছাকে ওই দুই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম হল মূলত সড়ক ও সোশ্যাল মিডিয়া । সড়কে আপনি যদি নাও নামতে পারেন তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াকে এভাবে রোজ ১০-২০ মিনিট কাজে লাগাতে পারেন ।’।