এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৮ নভেম্বর : ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী । তারা শুধু পশ্চিমবঙ্গ,বিহার, অসমের মত রাজ্যগুলির জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তনই করছে না,দেশের বিপূল পরিমান সম্পদ আত্মসাৎ করে প্রকৃত ভারতীয়দের দেশের সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে । অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ৫ কোটির অধিক অনুপ্রবেশকারী বসবাস করছে । এই বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীর সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য । যদিও বিষয়টি অনুভব করেও নিছক ভোটব্যাঙ্কের লোভে অনুপ্রবেশকারীদের প্রচ্ছন্ন মদত দিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস,বামফ্রন্ট, তৃণমূল কংগ্রেস ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির মত দলগুলি । এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিনতি পাকিস্তান বা দেশের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশের মত হতে বেশি দেরি নেই বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন অভিজ্ঞমহল । এদিকে সিএএ/এনআরসি লাগু করার বিষয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও একদিকে কংগ্রেস,বামফ্রন্ট, তৃণমূল কংগ্রেসের মত দলগুলির প্রবল বাধা তার উপর সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের ৬-এ ধারা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে । কংগ্রেস নেতা মৃত রাজীব গাঁধির মস্তিষ্ক প্রসূত এই আইন ১৯৮৫ সালে লাগু করা হয়েছিল । রাষ্ট্রের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর এই আইন তা ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি অশ্বিনী উপাধ্যায় ।
বিগ নিউজ নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে সম্প্রচারিত অশ্বিনী উপাধ্যায়ের সিটিজেন শিপ অ্যাক্টের ৬-এ ধারা সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরা হল । বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন,’আমি সুপ্রিম কোর্টে একটা পিটিশন ফাইল করেছি এবং সিটিজেন শিপ অ্যাক্টের ৬-এ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছি৷ আমাদের বক্তব্য ৬-এ ধারাকে সুপ্রিম কোর্ট যেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করে । ধারা ৬-এ ১৯৮৫ সালে কংগ্রেস সরকার সিটিজেন শিপ অ্যাক্ট জুড়ে দিয়েছিল । এই ধারা অনুযায়ী, আসামে ১৯৭১ পর্যন্ত যত বাংলাদেশি এসেছে তারা সবাই ভারতের নাগরিক । অনুমান যে ১৯৭০ পর্যন্ত আসামে ৬০ লাখ বাংলাদেশি এসেছিল । ভারতের সংবিধান বলে যে ভারতে আসার যে কাট অফ তারিখ (একটি নির্দিষ্ট তারিখ যেখান থেকে রেকর্ড করা হয়) হল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৷ সংবিধান অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আফগানিস্তান, পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে যারা এসেছে তারা সবাই ভারতের নাগরিক ।
এরপরে যদি কেউ আসে তাহলে তাকে দরখাস্ত দিতে হবে । সেই দরখাস্ত সরকার পরীক্ষা করে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কিনা ঠিক করবে সরকার ।
তিনি বলেন,’কিন্তু রাজীব গাঁধি ১৯৮৫ সালে সিটিজেন শিপ অ্যাক্টে একটা নতুন ধারা যোগ করে দেয় । যেটি হল সেকশন ৬-এ । আর সেই ধারা অনুযায়ী, ১৯৭১ পর্যন্ত যত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আসামে এসেছে তারা সবাই ভারতীয় । তাদের কোনো দরখাস্ত দিতে হবে না । তারা এমনিই ভারতের নাগরিক হয়ে যাবে । এতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এই যে এখন অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করা অসম্ভব হয়ে উঠছে । যারা ১৯৭১ সালের পরে এসেছে তারা এখন বলছে যে তারা ১৯৭১ সালের আগেই এসে গেছে । এখন ৮০ বা ৯০ দশক বা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে আসা অনুপ্রবেশকারীরাও বলতে শুরু করেছে যে তারা নাকি ১৯৭১ সালের আগেই অসমে এসেছিল । বর্ডারে তো কোনো টোকেনের ব্যবস্থা নেই । নেই কোনো সিসিটিভি । তাহলে আদপে তারা ১৯৭১ সালের আগে বা পরে এসেছে তা চিহ্নিত কি করে করা হবে ?’
অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’এখন সিটিজেন শিপ অ্যাক্টের ৬-এ ধারার সুবিধা অনুপ্রবেশকারীরা নিচ্ছে৷ তারা যদি পশ্চিমবঙ্গে, উত্তরপ্রদেশে, বিহার,দিল্লি বা ভারতের যেকোনো প্রান্তেই থাকুক না কেন তারা এখন যুক্তি দেখাচ্ছে যে তারা ১৯৭১ সালের আগেই অসমে এসেছিল এবং পরে তারা কর্মসূত্রে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস শুরু করছে । এই ৬-এ ধারার অবলুপ্তি না করলে ভারতে কখনো এনআরসি সফল হবে না । এই ধারার কারনে বিগত ১০ বছরে আসামে বহু চেষ্টা করেও অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি । কারন যারা ১৯৭১ সালের পরে এসেছে তারাও বলছে ১৯৭১ সালের আগে এসেছে ৷ যারা ৮০-৯০ এর দশকে এসেছে তারাও বলছে ১৯৭১ সালের আগে এসেছে ।’
তিনি বলেন,’এই কারনে আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি,প্রধানমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি যে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা ৫ সদস্যের বেঞ্চে শুনানি হবে, আপনারা এটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেলকে বলুন এই ৬-এ ধারার যেন বিরোধ করে । কংগ্রেস যে মহাপাপ ১৯৮৫ সালে হয়েছিল, তা খতম করা জরুরি । যদি এই ৬-এ ধারা থেকে যায় তাহলে দেশের সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরা বলবে যে তারা ১৯৭১ সালের আগে অসমে এসেছে ।’
তিনি আরও বলেন,’বর্তমানে ভারতে ৫ কোটির অধিক অনুপ্রবেশকারী আছে । ২০১৭ সালে যখন পিটিশন দাখিল করি তখনই জানতে পারি ৫ কোটির অধিক অনুপ্রবেশকারী ভারতে ইতিমধ্যে এসে গেছে । ভারতের এমন কোনো জেলা নেই যে অনুপ্রবেশকারী নেই । ভারতের এমন কোনো তহশিল নেই যে অনুপ্রবেশকারী নেই । দেশের রাজধানীতে প্রচুর সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী ঢুকে গেছে । এখন যদি ধারা ৬-এ কে যদি বিলুপ্ত না করা হয় তাহলে এদের চিহ্নিত করে নিজেদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব হবে । এই ধারার কারনে অসমে এনআরসি ব্যর্থ হয়ে গেছে । আর এই ধারার অবলুপ্তি না হলে দেশজুড়ে এনআরসি সফল হবে না এবং আদালতে লাগাতার মামলা চলতে থাকবে । তাই এই ধারার অবলুপ্তি করে ভারতে যত অনুপ্রবেশকারী আছে তাদের দেশ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হোক । চলে যাওয়ার জন্য ৩ মাসের সময় দেওয়া হোক । ওদের দেশ থেকে বের করা খুব জরুরি ।’
অশ্বিনী উপাধ্যায়ের কথায়,’তা না হলে যেভাবে ফ্রান্স জ্বলেছে,যেমন ইসরায়েল জ্বলছে,যেমন পুরো ইউরোপ জ্বলছে, যেমন লন্ডন জ্বলছে, যেমন জার্মানিতে হিংসা হচ্ছে তেমনই আগামী দিনে এই অনুপ্রবেশকারীরা ভারতকেও জ্বালাবে ।
আর ভারতে সাংবাদিক,বিচারক,সাংসদ,বিধায়ক, নেতা ও অভিনেতা প্রচুর আছে যারা অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থক । ফলে এদের দেশ থেকে বের করা কঠিন হয়ে যাবে । সেই কারনে সরকারের কাছে আমি অনুরোধ করছি সে ৬-এ ধারা অবলুপ্তির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হোক অথবা সুপ্রিম কোর্টে এভিডেভিড ফাইল করে বলা হোক এখানে সেকশন ৬-এ অবৈধ এবং একে অবলুপ্তি করা হোক ।’।