ঐ সেই ছেলেটা! অফিসের ফুরসৎ-এ সকলের অলক্ষ্যে, শহরতলীর কোলাহল পেরিয়ে একান্তে —
একলা দুপুরে চুপটি করে বসতো গিয়ে ঝিলপাড়ে !!
তারপর ভাবনার অতলান্তে ডুব সাঁতার দিয়ে
পানকৌড়ির মতো ভুস করে ভেসে উঠতো নীরবে !!
টুপটাপ ঝরাপাতা খসে পড়তো সঙ্গ দিতে
সারিবদ্ধ গাছগুলো সাক্ষী–
ছায়াভরা দুপুরের নিঃসঙ্গতা ও নিস্তব্ধতা ভাঙতে–
মাছরাঙার মতো ঝুপ করে একটা ঢিল ছুঁড়ে দিতো;
বুদবুদ কাটতে কাটতে–
জলের ঢেউ পাড় অব্দি এসে কখনও ছেলেটার
পা ছুঁয়ে যেত !!
কিংবা হাতের তালু চুমু দিয়ে–
মেয়েটা চোখবুজে সবকিছু দেখতে পেতো, অনুভব করতো!
খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে একাকীত্বের রোদেপোড়া দুপুরে।
মেয়েটা হঠাৎই বোধহয় আটকে পড়েছিল —
অনভিপ্রেত ??
নাকি মায়ামাখা মুগ্ধতার আবেশে ??
হতে পারে সুখ-দুখের ভাগীদার হয়ে !!
সেই আগন্তুক ছেলেটার এমনটাই নিত্য যাপনের ইতিবৃত্তে।
ছেলেটা নিয়মকরে ছবি পাঠাতো ঝিল পাড়ের–
গল্প শোনাতো একাকীত্বের।
খোঁজ নিতো মেয়েটার–
মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে ভেসে যেত মনেমনে !!
ভালোবাসা ছিলো কিনা জানা নেই–
সময়ের ডোরে বাঁধা পড়েছিল হয়তো দুজনায় দুজনের !!
এভাবেই বছর গেল বছর এলো,
ঝিল বুজিয়ে আকাশছোঁয়া অট্টালিকার ক্যাম্পাস হলো ।
ছেলেটা অনায়াসে সবকিছু ভুলে গেলো–
গলিতে ফেরিওয়ালাদের হাঁকে সম্বিত ফিরলে
উদাসীন মেয়েটাও বেমালুম নিজের জগতে চলে এলো ।
তবে ছেলেটার পাঠানো ছবিগুলো মেয়েটা যত্নে রেখেছে,
অন্দরমহলের দেরাজে। এই অনুভবটাও যত্নে আছে–
ভূমিকম্পের টালমাটাল অবস্থায় যখন শহর কেঁপেছিল !!
ঝিলের জলচ্ছাসে ছেলেটার দমবন্ধ অবস্থা–
মেয়েটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল ছেলেটার বেসামাল হাতটা।
বিশ্বাস-ভরসার, সত্যি-মিথ্যের দোলাচলে,
শহরের দূষণের ধুলোঝড়ে ফুরিয়ে গেলো গল্পটা —
ঝিলের সাথে চাপা পড়ে হারিয়ে গেল
সেই ছেলেটা-মেয়েটা ।।