এইদিন ওয়েবডেস্ক,৩১ অক্টোবর : সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনৈক এক হিন্দু সন্নাসীর বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । স্বামী সচ্চিদানন্দ নামে ওই সন্নাসী ভারতের জনবিন্যাসের ক্রম পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উপস্থিত শ্রোতার উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা গেছে যে ইসলাম ও খ্রিস্টানের থেকেও হিন্দুদের মারাত্মক শত্রু হল কমিউনিস্ট বিচারধারা । ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ডঃ সুধাংশু ত্রিবেদী অফিসিয়াল গ্রুপের পক্ষ থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতে স্বামী সচ্চিদানন্দ বলেন,’চার প্রবল শত্রু আপনাদের খতম করার জন্য পরিকল্পনা করেছে । চাঞ্চল্যকর বিষয় হল যে ওরা ইতিমধ্যে জাল বিস্তারও করে দিয়েছে ৷ আর আমরা সচেতনও নই । আমরা শিকারীর জালে ফেঁসে গেছি ।’ এরপর তিনি বলতে শুরু করেন,’প্রথম শত্রু ইসলাম । যারা তরবারির ভয় দেখিয়ে আপনাদের ধর্মান্তরিত করে । আরও অনেক প্রকার প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করছে ওরা । দ্বিতীয় শত্রু হল খ্রিস্টান ।
আপনাদের জেনে রাখা দরকার যে আমাদের দেশে এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আছে । এই দেশে এশিয়ার সবচেয়ে বড় চার্চও তৈরি হচ্ছে ।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা পাকিস্তান, ইরানে হলে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব থাকত না । কিন্তু এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আমাদের বুকের উপর তৈরি করা হয়েছে । আর হাজার হাজার প্রচারক তৈরি করা হচ্ছে ইসলামের বিস্তারের জন্য ।’
তিনি বলেন,’এশিয়ার সবচেয়ে বড় চার্চ হচ্ছে ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলায় । এই সব ধর্মের প্রচারের জন্য বড় বড় সেন্টার আপনার দেশে খোলা হয়ে গেছে । ২,০০,০০০ লাখ জামাত এই দেশে কাজ করে । ১,০০,০০০ পাদরি এই দেশে কাজ করে । ওদের একটাই লক্ষ্য হিন্দুত্বকে খতম করা ।’
এরপর তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন,’আপনাদের এই রকম কোনো সেন্টার আছে যেখানে ধর্ম প্রচারক তৈরি হয়? যেখান থেকে আপনাদের ধর্ম প্রচারক তৈরি হত সেই সমস্ত গুরুকুল বন্ধ হয়ে গেছে । আর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারন হল আমাদের উদাসীনতা । কারন আনাদের কেউই আমাদের বাচ্ছাদের গুরুকুলে পড়াতে চাই না । আমরা তো নিজে নিজেই খতম হওয়ার কিনারায় পৌঁছে গেছি । ওই লোকেদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি যেমন সমর্পণ আছে, আমাদের নেই । সাড়ে ৬ হাজার বিদ্যার্থী ওখানে (মাদ্রাসা) আছে । আমি (মাদ্রাসা) কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,আপনি খরচ কি করে করেন? উত্তরে বলেছিল, স্বামীজি আমাদের সম্প্রদায়ের একটা রীতি আছে । আমাদের সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি যদি সারাদিনে ২০০ টাকা রোজকার করে তার মধ্যে দ্বীনের জন্য ২০ টাকা রেখে দেবে এবং বাকি ১৮০ টাকা নিজের জন্য খরচ করবে । আমরা দানের টাকা চাইতেও যাই না । প্রতি পরিবার মাসের হিসাব করে নিজেই আমাদের কাছে জমা করে যায় । একজন রিক্সা চালানো ব্যক্তিও এই বিষয়ে নজর রাখে ।’
এরপর তিনি বলেন,’ওদের সমর্পন দেখুন । আপনি যত বড় বাংলো বানান না কেন আপনার ভবিষ্যৎ কিন্তু ভালো নয় । কারন ওদের ক্রমশ বৃদ্ধি হয়েই যাচ্ছে । আমি আপনাদের ভয় দেখানোর জন্য বলছি না,সাবধান করার জন্য বলছি ।’
সন্নাস্যী বলেন,’খ্রিস্টানও চরম সীমায় ছড়াচ্ছে । প্রথমে আদিবাসী এলাকায় হানা দিত এরা । এখন উন্নত রাজ্যগুলিতে এরা হাত বাড়িয়েছে । পাঞ্জাব, হরিয়ানা -এই দুই উন্নত রাজ্যে এরা পুরোপুরি ঘাঁটি গেড়েছে । হরিয়ানার কৈথার জেলার এমন একটা গ্রাম আছে যেখানে একটাও হিন্দু নেই,সব খ্রিস্টান হয়ে গেছে । এই দুই প্রবল শত্রু হিন্দুত্বকে পুরোপুরি খতম করার পরিকল্পনা করেছে । ইউরোপ থেকে আপনাকে খতম করেছে,এশিয়ায় আপনাকে খতম করেছে,এখন ইসলাম ও খ্রিস্টানদের লক্ষ্য ভারতের উপর,তাদের নজর হিন্দুদের উপর, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে কে কত ভারতের হিন্দুদের সাফ করে দিতে পারবে । এই দুই সম্প্রদায় বড় টার্গেট নিয়ে আপনাদের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে ।’
এরপর স্বামী সচ্চিদানন্দ বলেন,’তৃতীয় শত্রু হল কমিউনিস্ট বিচারধারা । এরা ইসলাম ও খ্রিস্টানের থেকেও মারাত্মক । এই কারনে মারাত্মক এরা কারন এদের আমরা আদপেই শত্রু ভাবি না । ইসলাম ও খ্রিস্টান কে আমরা শত্রু হিসাবে মানি,কিন্তু এই কমিউনিস্ট বিচারধারা ভিতরে ভিতরে দেশকে খোকলা করে দিচ্ছে । খুব খতরনাক এরা । এদের সামসের খান বা অন্য নামে পাওয়া যাবে না, আপনাদের মতই নাম,যেমন মার্কন্ডেয় কাটজু । নাম শুনে মনে হতে পারে আমাদের নিজেদেরই লোক,আমাদের ভাই । নাম আপনার মত কিন্তু কাজ হিন্দুত্বকে খতম করার ।’
তিনি বলেন,’এই এজেন্ডা সবাই নিয়ে নিয়েছে । প্রথমে খ্রিস্টান মিশনারিরা এই দেশে কাজ করত তখন তারা ধর্ম পরিবর্তন করে নাম বদলে দিত । এখন ওরা সতর্ক ও সাবধান হয়ে গেছে । এখন ওরা নাম বদল করে না । কারন নাম বদল করলে মানুষের সন্দেহ হবে। সেই কারনে নাম একই রেখে ভিতরে ভিতরে ধর্ম পরিবর্তন করে দেয় ।’
তিনি কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন,’ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অজিত যোগী । নাম শুনে আপনার ভ্রম হতে পারে । আপনারা মনে করতে পারেন যে আমাদের আদিত্যনাথ যোগীর ভাই হবে হয়ত । ওই ব্যক্তির নাম হিন্দুদের মত কিন্তু সে আদপে একজন খ্রিস্টান । ওই ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকার সময় লাখ খানেক হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করেছিল । আর যখন ওই ব্যক্তি মারা গেল তখন খ্রিস্টান রীতি অনুযায়ী কবরস্থ করা হল ।’
সন্নাসী আরও দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন,’পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চরনজিত সিং চন্নি । মনে হবে পাঞ্জাবী । কিন্তু তিনি খ্রিস্টান ছিলেন। আর এক ব্যক্তি এই দেশে আছে যাকে আমাদের দেশের অনেকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় । তার নাম কি? রাহুল গান্ধী ! আমার কথা শুনে কারোর খারাপ লাগতে পারে হয়তো । কিন্তু ওর ধর্ম কি? ও তো না মুসলিম না খ্রিস্টান, ওর ধর্ম তো খিচুড়ি পাকিয়ে গেছে । ওর দাদু, দাদুর বাবা কখনো মুসলমান ছিল, মা খ্রিস্টান, ও তো হিন্দু নয়ই,কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হল যে হিন্দুরাই ওকে প্রধানমন্ত্রী করতে চায় ।’
তিনি বলেন,’আমরা এটা কখনো ভাবি না যে একজন খ্রিস্টান ক্ষমতায় এসে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বিস্তার করার চেষ্টা করবে নাকি হিন্দুত্বকে বিস্তার করবে? আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য এতটাই অন্ধ হয়ে গেছি যে কেউ দেশের জন্য ভালো কাজ করলেও আমরা তার বিরোধিতা করছি ।’
এরপর কেন্দ্র সরকারের অগ্নিবীর যোজনার প্রশংসা করে সন্নাসী বলেন,’সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার অগ্নিবীর যোজনা লাগু করেছে । এতে রাজনৈতিক নেতাদের পেটব্যথা হচ্ছে । অনাগত ভবিষ্যৎকে দেখতে পাচ্ছে না । আমি আপনাদের সতর্ক করে দিতে চাই, এই দেশে ভয়ংকর গৃহযুদ্ধ হতে চলেছে । কিছুতেই আটকানো যাবে না,হবেই । আর তার জন্য ওরা পুরোপুরি তৈরি হয়ে আছে । ওদের ছোট ছোট ছেলে বোম চালাতে, পাথরবাজি করতে,তলোয়ার চালাতে অভিজ্ঞ হয়ে গেছে । ওদের মেয়েরাও অভিজ্ঞ হয়ে গেছে । আপনার ছেলেমেয়েরা কি জানে? একটাই ছেলে অথবা মেয়ে আপনাদের । আর ওরা বলছে যে ২-৪ টে মরে গেলেও ১১-১৫ টা আমাদের বেচে থাকবে, আমাদের কোনো চিন্তা নেই । সরকারের ওই প্রকল্পে আমাদের ছেলেমেয়েরা আত্মরক্ষা অন্তত করতে পারবে । এই কারনে অগ্নিবীর প্রকল্প চালু করা হয়েছে যাতে প্রত্যেক ছেলেমেয়ে সামরিক শিক্ষা পায় । খুব ভালো যোজনা । এর বিরোধ করা উচিত নয় । এর সম্মান করা উচিত ।’
সন্নাসীর কথায়,’প্রতিটি ছেলেমেয়ের সামরিক শিক্ষা দরকার কারন আগামী সময় খুব ভয়ঙ্কর । আপনার বাড়িতে লাঠি পর্যন্ত নেই । আপনার সন্তান লড়াই করতেই জানে না,আপনারা কিভাবে বিধর্মীদের সাথে লড়াই করবেন ?’
তিনি বলেন,’একজন ভদ্রলোক আমায় বললেন যে এবার একে ৪৭ রাখতে হবে,বর্ষা,লাঠি রাখতে হবে । আমি বললাম আরে ওই হাতিয়ার কে চালাবে ? হাতিয়ার চালানোর মত কেউ আছে তোমার?
কারোর একটাই ছেলে । সে ছেলেকে জেলা শাসক করতে চায় । ওরা বলে পৃথিবীতে হিন্দুরা এত মুর্খ প্রাণী যে এক বাচ্ছার জন্ম দিয়ে তাকে জেলা শাসক করতে চায় । আর আমরা ১৭ বাচ্ছা পয়দা করে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানাবো । যেদিন আমাদের প্রধানমন্ত্রী হবে সেদিন জেলা শাসক হয়ে কিছুই করতে পারবে না । আমাদের নির্দেশেই দেশ চলবে । কি অসাধারণ পরিকল্পনা ! আমাদের থেকে কত দুরের কথা ভাবছে ওরা ? আমরা একটা বাচ্ছা পয়দা করে সরকারি কর্মচারী করতে চাই । আর ওরা দশ বাচ্ছা পয়দা করে সরকার গড়তে চায় । বলুন কাদের পরিকল্পনা ভালো ? আমরা ওদের সামনে দাড়াতেই পারব না । ওদের সমর্পণ দেখুন ।’
তিনি বলেন,’ওদের মসজিদে গিয়ে দেখুন কত অল্প বয়সী ছেলে জড়ো হয় । কারন ওরা এই কাজকে বাধ্যতামূলক ভাবে । আর আমরা ধর্মকর্মকে বাধ্যতামূলক ভাবি না । আমরা মনে করি এতে বাচ্ছাদের কি কাজ ? কিন্তু ওরা সবাই নিজেদের মিশনে সবাই নিয়োজিত ।’
এরপর তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই কারনে আমি আপনাদের অনুরোধ করব, ভয়ঙ্কর ঝড় উঠেছে, জোয়ার সৃষ্টি করো । এবার সম্প্রতির কথা বন্ধ করে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে নিজেদের মধ্যে কট্টরপন্থী মানসিকতার জন্ম দিন । এই কারনে গোটা বিশ্ব থেকে আমরা শেষ হয়ে গেছি । সমস্ত উদারতার ঠিকেদারি কি আমরা নিয়ে রেখেছি নাকি ? তুমি ভাই ভাই চেঁচিয়ে যাচ্ছ,আর ওরা তোমায় খাবার মনে করে চেটে দিয়ে চলে যাবে । আজও চোখ খুলছে না ! এই রাজনৈতিক দল আমাদের নিজেদের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে । আর আমরা নিরীহ লোক লড়াই করছি । আমরা ওদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারছি না ।’ স্বামী সচ্চিদানন্দ বলেন,’আপনারা উদয়পুরে ট্রেলার দেখেছেন,থ্রিলার এখনো বাকি আছে । দ্য কাশ্মীর ফাইল ৩০ বছর আগের ঘটনা । আপনারা এর পরেও যদি ঘুমিয়ে থাকেন তাহলে ৩০ বছর পর দেখবেন প্রতিটি গলিতে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল’ ঘটছে ।’
পরিশেষে সন্নাসী বলেন,’এখন ওদের জনসংখ্যা সরকারি নথি অনুযায়ী ২৫ শতাংশ । আর ২৫ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও ওরা আপনাদের রাস্তায় বের হতে দেয় না । রামনবমীর শোভাযাত্রা আপনি বের করতে পারেন না । হনুমানজয়ন্তীর শোভাযাত্রা আপনি বের করতে পারেন না। রাজস্থানে কি হয়েছিল খেয়াল করুন । আমরা ২৬ জানুয়ারী, ১৫ আগস্ট ত্রিরঙ্গা যাত্রা বের করতে পারিনা । এখন ওরা ২৫ শতাংশ, আর এতেই আপনাকে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না,যেদিন ওরা ৪০-৫০ শতাংশ হবে আপনাদের কি ঘরে টিকতে দেবে? সম্ভবই নয় ।’
ভিডিওতে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে স্বামী সচ্চিদানন্দ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জনৈক ব্যক্তি হিন্দি ভাষায় বলেন,’স্বামী সচ্চিদানন্দ রাজস্থানের বাসিন্দা । তিনি আন্তর্জাতিক সনাতনি প্রচারক ৷ রাজস্থান তিনি লোককল্যান সেবাসংস্থান নামে একটি সংস্থা চালান । রাজস্থানের জয়পুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ওই সংস্থার অনেক শাখা আছে । তবে উনি কোথায় এবং কবে এই বক্তব্য রেখেছিলেন তা স্পষ্ট নয় ।।