প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ অক্টোবর : দেবীপক্ষে সেই কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন দুর্গা। মর্তবাসী চার দিন ধুমধাম করে তাঁর পুজো পাঠ করেছেন। আজ দশমী।দেবী ফিরে যাবেন কৈলাশে ।এই বিশেষ দিনে যার দর্শন পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বলে মানা হয়ে থাকে তিনি হলেন নীলকন্ঠ পাখি। পোষ্য সেই নীলকন্ঠ পাখিকে সঙ্গে করেনিয়ে এদিন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার মুস্থূলী ও ঘোড়ানাশ গ্রামের বাড়িবাড়ি গিয়ে দর্শন করালেন বধূ বাণী রায় ।ওই পাখির কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে তার পর এই দুই গ্রামের গৃহস্থ পরিবারের বধূরা ও বাণীদেবী একে অপরের সিঁথিতে সিন্দুর পরিয়ে দিলেন । বাণী রায়ের দৌলতে এভাবেই বছরের পর বছর দশমীর দিনে নীলকন্ঠ পাখির দর্শন পেয়ে আসছেন মুস্থূলী ও ঘোড়ানাশ গ্রামের বাসিন্দারা।
এই ’নীলকন্ঠ পাখিকে নিয়ে হিন্দুদের ভক্তিভাব ও আবেগের অন্ত নেই । পাখিটির পোষাকি নাম ’ইন্ডিয়ান রোলার’। আর বিজ্ঞান সম্মত নাম হল ’কোরাসিয়াস বেনঘালেনসিস’।হিন্দুদের কাছে পাখিটির আদরের নাম নীলকন্ঠ। দুর্গা পুজোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে এই পাখির।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুয়ায়ী ,নয় দিন মর্তে বাপের বাড়িতে কাটিয়ে দশমীর দিনে গনেশ, কার্তিক , লক্ষ্মী ও সরস্বতী কে সঙ্গে নিয়ে কৈলাশে গমন করেন দেবী দুর্গা। দেবীর সেই আগমন বার্তা নাকি নীলকন্ঠ পাখি-ই কৈলাশে মহাদেব পৌছে দেয় । সেই বিশ্বাসে ভর করে দশমীর দিনে দুটি নীলকন্ঠ পাখিকে ওড়ানোর রীতি মানা হয়ে থাকে । প্রথমটি ওড়ানো হয় মন্দির থেকে দেবী দুর্গার যাত্রা শুরুর সময়। আর দ্বিতীয় নীলকন্ঠ পাখিটি ওড়ানো হয় দেবীর প্রতিমা বিসর্জনের পর । এও বলা হয়, রাবণবধের আগে এই নীলকন্ঠ পাখির দর্শন পেয়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। আবার অনেকে মতে ,নিলকন্ঠ পাখি-ই নাকি রামচন্দ্র ও তাঁর বাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এইসব নানা বিশ্বাস ও প্রচলিত ধরণা থেকে নীলকন্ঠ পাখির দর্শন লাভ শুভ বলে মনে থাকেন হিন্দুরা।
কাটোয়া ২ নম্বর ব্লকের জগদানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অখড়া গ্রামে বাড়ি বাণী রায়ের । তিনি বলেন ,“দশমীর দিন সকাল থেকে উপবাসে থেকে নতুন বস্ত্র পরে তিনি তাঁদের পরিবারের পোষ্য নীলকন্ঠ পাখিটিকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এলাকার গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়ির বধূদের নীলকন্ঠ পাখি দর্শন করান । কেন পাখিটিকে বিভিন্ন জনের বাড়ি বাড়ি নিয়ে দিয়ে দর্শন করান ?
তার উত্তরে বাণীদেবী বলেন, বংশপরম্পরায় আমাদের পরিবার বধূরা দশমীর দিনে এলাকার গৃহস্থদের নীলকন্ঠ পাখির দর্শন করিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটি পরিবারের মা বাবা সহ সকলের শান্তি ও মঙ্গল কামনা এবং সংসারের কল্যাণের জন্য এদিন নীলকন্ঠ পাখি দেখাই। পাখি দেখানো শেষে দুপুরো বাড়ি ফিরে গিয়ে স্নান সেরে দুর্গা মা কে প্রণাম জানিয়ে তার পর মুখে অন্ন তোলেন বলে বাণীদেবী জানিয়েছেন । আর মুস্থূলী ও ঘোড়ানাশ গ্রামের বাসিন্দারা বলেন,দশমীর বিশেষ তিথিতে বাণীর মাধ্যমে জীবন্ত নীলকন্ঠ পাখির দর্শন পেয়ে আমরাও তৃপ্ত হয় । এদিন সকাল থেকে বাণীর জন্য আমরা বাড়ির বউয়েরাও পথ চেয়ে বসে থাকি ।।