এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৩ অক্টোবর : এবারের দুর্গোৎসবে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পূজো কমিটির একাংশ সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোথাও দূর্গাপূজো মণ্ডপের পাশে মসজিদের আদলে মণ্ডপ গড়েছেন । কোথাও দূর্গাপূজো মণ্ডপে মাইকে বাজানো হয়েছে আজানের রেকর্ড । কোথাও বা দেবীদূর্গাকে গড়া হয়েছে খ্রিস্টানদের আরাধ্য মেরির আদলে । এনিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে শুধু পূজোতেই কেন কথিত সম্প্রতির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয় ? অপরাপর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একই বার্তা পারতপক্ষে দেখা যায়না কেন ?
‘আরামবাগ টিভি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দূর্গাপূজো মণ্ডপে আজান দেওয়ার ভিডিও দেখানো হয়েছে । চ্যানেলের মালিক সফিকুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনাটি হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার মৌসুমি ক্লাবের দূর্গামন্ডপের । দূর্গাপূজোর সময় আজান বাজানোকে তিনি ‘চ্যাঙড়ামো’ ও ধর্মকে খিচুড়ি পাকানোর চেষ্টা’ বলে অবিহিত করে ঘটনার নিন্দা করেছেন । ওই ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও ক্লিপ ‘এক্স’-এ শেয়ার করে জনৈক অভীক মিত্র লিখেছেন, ‘যখন বাংলাদেশের হিন্দুদের তাঁদের প্রিয় দুর্গা পুজো পালনের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে মোল্লারা, তখন পশ্চিমবঙ্গের সেকু কুলাঙ্গার গুলো দুর্গা মণ্ডপে আজান চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মারাচ্ছে। আদিখ্যেতার সীমা থাকা দরকার। পাগলও নিজের ভালো বোঝে, কিন্তু আত্মঘাতী সেকু বাঙালিরা তা বোঝে না ।’
ভয়েস ওফ বাংলাদেশ হিন্দুর ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে মেরির আকৃতির দেবী দূর্গার মূর্তির ছবি পোস্ট করে বলা হয়েছে, ‘মা দুর্গা পশ্চিমবঙ্গে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন ।’ তবে উপরিউক্ত ওই দুর্গামূর্তি পশ্চিমবঙ্গের ঠিক কোন জায়গার তা বলা হয়নি । ঘটনার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এইদিন’।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বাংলাদেদেশের একাংশে দূর্গাপূজো কমিটির মধ্যেও কথিত সম্প্রতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা গেছে । বাংলাদেশের লালমনিরহাটে পুরানো বাজার এলাকার দূর্গামন্দির কর্তৃপক্ষ দূর্গাপূজো মণ্ডপের ঠিক পাশেই একটি মসজিদের আকৃতির প্যান্ডেল গড়ে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে ।
জানা গেছে যে লালমনিরহাটে পুরানো বাজার এলাকার ওই দূর্গামন্দিরটি ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । তার আগে সেখানে কালী মন্দির ছিল । এখনোও ওই এলাকাটি ‘কালীবাড়ি’ বলেই পরিচিত । কিন্তু ১৯০০ সালে মুসলমানরা মন্দির প্রাঙ্গণে গায়ের জোরে একটি নামাজের ঘর নির্মান করে । পরে নামাজের ঘরটি ‘পুরানো বাজার জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায় ।
কালীবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন,’মসজিদে যখন নামাজ হয়, আমাদের ঢাকের বাদ্য তখন বন্ধ থাকে। আমরা মিলেমিশে একাকার হয়ে আছি। আমাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই।’
পুরানো বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন,’আমরা যখন নামাজ পড়ে চলে যাই, তারপর ওনারা তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে। এভাবেই আমাদের এখানকার লোকজন শান্তিপ্রিয়ভাবে সৌহার্দ্য বজায় রেখে অবস্থান করে।’
কিন্তু এইপ্রকার একপেশে সৌহার্দ্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে । অনেকে প্রশ্ন করছেন যে মন্দিরের জায়গা দখল করে কেন নামাজের ঘর নির্মিত হল ? সম্প্রতি বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু কি হিন্দুদের ? সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য মুসলিমরা কি মন্দিরের জায়গা ফের ছেড়ে দিয়ে উদারতা দেখাতে পারবে ?
এদিকে এই প্রকার সম্প্রতির বার্তা দেওয়ার হুড়োহুড়ির মাঝেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালী বিধানসভার ন্যাজাট থানার অন্তর্গত আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজবাড়ী বাজারের দূর্গাপূজো প্যান্ডেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে । অভিযোগ উঠছে যে প্যান্ডেলটি ‘গেরুয়া’ কাপড় দিয়ে তৈরি করায় স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাহাজানের নেতৃত্বে তার দলবল গেরুয়া কাপড় ছিঁড়ে দিয়ে চলে যায় । বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিন চারেক আগে নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে ঘটনার ভিডিও ও ছবি শেয়ার করে লিখেছেন,’হিন্দু সংস্কৃতিতে গেরুয়া রঙ ত্যাগ, আলো এবং পরিত্রাণের সন্ধানকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু এআইটি অফিসিয়ালের কাছে এই সব বিভ্রান্তিকর… প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে টিএমসি গুন্ডারা রাজবাড়ী সন্দেশখালীতে গেরুয়া রঙের দুর্গা প্যান্ডেল ভাঙচুর করেছে…।’।