এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,০৭ মে :বাড়িতে একাই ছিলের আশি ছুঁই ছুঁই বিধবা বৃদ্ধা । আক্রান্ত হন কোভিডে । শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট । খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন গিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে হুগলি জেলার চুঁচুড়া শহরের ফুলপুকুর এলাকায় । মৃতার নাম আভা দত্ত (৭৬) । শুক্রবার সতর্কতার সঙ্গে মৃতদেহের সৎকারের ব্যাবস্থা করা হয় ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,চুঁচুড়ার ফুলপুকুরের বাসিন্দা আভা দত্তের স্বামী অনেক দিন আগেই মারা গেছেন । বৃদ্ধার এক ছেলে । ছেলে অভিজিৎ দত্ত চুঁচুড়ার নারকেল বাগানের বাড়িতে পৃথক সংসারে থাকেন । ফুলপুকুরের বাড়িতে ভাসুর ও জায়ের সঙ্গে থাকতেন আভাদেবী । সম্প্রতি ভাসুর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান । আভাদেবীর জাও করোনা আক্রান্ত । বর্তমানে তিনি কলকাতায় চিকিৎসাধীন । এদিকে আভাদেবীর ছেলে ও পুত্রবধুও কোভিড আক্রান্ত হয়ে গৃহবন্দি রয়েছেন ।
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে,দিন কয়েক ধরে সর্দি, জ্বরের উপসর্গ শুরু হয় আভাদেবীর । তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে লালা রসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল । বৃহস্পতিবার রিপোর্ট এলে জানা যায় আভাদেবীর কোভিড পজিটিভ ৷ মৃতার ছেলে অভিজিৎ দত্ত জানিয়েছেন,সারা দিন ধরেই তিনি ফোনে তাঁর মায়ের খোঁজখবর নিচ্ছেল । কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তাঁর মা আর ফোন রিসিভ করেননি । এরপর তিনি ‘চুঁচুড়া আরোগ্য’ নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে ফোন করে বিষয়টি জানান ।
সংস্থার সদস্যরা জানিয়েছেন,বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা থেকে সাতটার সময় বৃদ্ধার ছেলের কাছ থেকে ঘটনার কথা তাঁরা জানতে পারেন । খবর পেয়েই তাঁদের একটি দল অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বৃদ্ধার বাড়িতে যান । তাঁরা ফুলপুকুরে বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দেখতে পান বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ । জানা গেছে,জানালা দিয়ে বৃদ্ধাকে ডাকতে গিয়ে সংস্থার সদস্যরা দেখেন আভাদেবীর প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে । তিনি বিছানায় বসে কাতরাচ্ছেন । যন্ত্রনা থেকে উপশম পেয়ে খাটের পাশে টেবিলে রাখা ওষুধ নেওয়ার চেষ্টা করছেন । তখন আরোগ্যর সদস্যরা তাঁকে বিছানাতেই বসে থাকতে বলেন । কিন্তু পুনরায় বিছানায় ফিরতে না পেরে মেঝেতেই লুটিয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধা । এরপর তাঁরা বৃদ্ধার ছেলের অনুমতি নিয়ে দরজা ভেঙে বৃদ্ধাকে অচৈতন্য অবস্থাত উদ্ধার করে এ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা ।
‘চুঁচুড়া আরোগ্য’ নামে ওই সংস্থার সদস্যদের দাবি, তাঁরা যদি আধ ঘন্টা আগেও বিষয়টি জানতে পারতেন তাহলে অক্সিজেন চালু করার মত সময় পাওয়া যেত । আর সঠিক সময়ে অক্সিজেন চালু হলে হয়তো বৃদ্ধা বেঁচে যেতেন । পাশাপাশি সংস্থার পক্ষ থেকে শহরবাসীর প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে কোনও বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে যেন বাড়িতে একলা না রাখা হয় ।।