আজ ভীষণ ছোটোবেলাটা ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে। পুজোর চারটে দিন কি না মজার ছিল। ভোরের আলো ফুটতেই ফুলের সাজি নিয়ে চলে যেতাম শিউলি ফুল কুড়োতে। একটা একটা করে ফুল তুলে সাজি ভরিয়ে তুলতাম। ঘরে এসে ‘মা’ সেই ফুলের মালা গেঁথে পুজোর ডালিতে সাজিয়ে পুজো দিতে যেতো। মায়ের সেই লাল পেড়ে শাড়ি, আলতা রাঙানো পা, মাথায় লাল সিঁদুর, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ, হাতে চওড়া শাঁখার পাশে লাল পলা, একপিঠ ভর্তি খোলা চুলে অপূর্ব লাগতো। অঞ্জলি শেষে ঘরে এসে মাথায় ফুল ছুঁয়ে এক টুকরো পেড়া মুখের মধ্যে ভরে দিয়ে বলতো- মাথায় বুদ্ধি হোক, ধৈর্য্য আসুক, দুর্বলের পাশে শক্তি নিয়ে দাঁড়িও।
তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে মন নেচে উঠতো কখন বেরোবো ঠাকুর দেখতে। ওই চারটে দিন লেখা পড়া বন্দি থাকতো।
অষ্টমীতে ভোগের খিচুড়ির আশায় বসে থাকতাম। ওই চারটে দিন নতুন রূপে সেজে ওঠা, মা ও বাবার কাছে খরচের পাওনাগণ্ডা আবদার বুঝে নিয়ে সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে পড়া, হৈহৈ করে। সেই কটা দিন বাড়ি ফেরার সময় একটু বাড়তি সুবিধা ছিল। বিকেল হলেই বাবা নিজের হাতে সাজিয়ে দিত। পরিপাটি করে চুল বেঁধে দিত। নতুন চটির গন্ধ এখনও পাই।
দেখতে দেখতে এখন বয়সটাও হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে কত কি। ছোটোবেলার সেই দিনগুলো আর অনুভব করিনা। সেই পাতায় করে তেঁতুলের চাটনি খাওয়া আর হয় না। মিস করি খুব বুন্দুকে।ক্যাপ বাজি পট্ পট্ করে ফাটানো। পুজোর কটা দিন নতুন জামার গন্ধ আর তেমন পাইনা। চারিদিকে শহর জুড়ে ধূপধুনোর গন্ধ ম ম করা।
বাড়ি বাড়ি বিজয়া দশমীর পর চাঁদা তোলার মতো কাকু কাকিমাদের প্রণাম ঠুকে নাড়ু, নিমকি, মিষ্টি ও ঘুগনি খেয়ে পেট ভরানো।
আর কি এজীবনে ফিরে পাবো সেই দিন। বড় আফসোস হয় মনে হয় কেন তখন বড় হবার জন্য দুঃখ করতাম। মাইলের পর মাইল হাঁটতে থাকতাম ঠাকুর দেখার আনন্দে। কোথায় গেল জানি না সেই দিনগুলো। বড় কষ্ট হচ্ছে আজ ইচ্ছে করছে ফিরে যেতে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মণ্ডপে বসে আড্ডার আসরে জমায়েত হতে। কিন্তু সেই চেনা মুখ সব হারিয়ে গেছে। তাই জমবে না সেই দিনগুলো ।।