এইদিন ওয়েবডেস্ক,তিউনিসিয়া,১৯ অক্টোবর : সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের মাঝে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের দ্বারা ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে ইহুদিরা ৷ মঙ্গলবার গাজার একটি হাসপাতালে বিস্ফোরণের কয়েক ঘন্টা পরেই ব্যাপক দাঙ্গা করেছে তিউনিসিয়ার হামাসপন্থী জিহাদিরা । আর সেই দাঙ্গায় নিশানা করা হয়েছে একটি ঐতিহাসিক বিলুপ্তপ্রায় ইহুদি উপাসনালয় । তিউনিসিয়ার আল হাম্মায় ওই উপাসনালয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ফিলিস্থিনি পতাকা লাগিয়ে উল্লাস করে ইসলামি কট্টরপন্থীদের দল । পুলিশ সেই সময় উপস্থিত থাকলে তারা ছিল নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় । কিছু ব্যবহারকারী হ্যাশট্যাগ প্যালেস্টাইনের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ভিডিও শেয়ার করেছেন ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে । বুধবার তোলা একটি ভিডিওতে ১৬ শতকের তিউনিসিয়ার রব্বির বেড়া দেওয়া কবর সহ ওই স্থানটির ব্যাপক ক্ষতি দেখানো হয়েছে যা কিছু ইহুদিদের জন্য একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান ছিল ৷
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলা চালায় । প্রায় ১,৪০০ জনকে গণহত্যা করা হয়, বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় । এরপর মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের বিস্ফোরণের পরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়ে যায় । যদিও ইসরায়েল প্রমান দিয়ে বারবার বলছে যে হাসপাতালে হামলাটি হামাসের একটি রকেটের ‘মিস ফায়ার’-এর ফলশ্রুতি । তাসত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের আক্রমণ করছে ধর্মোন্মাদ মুসলিম জনতা । জর্ডানের আম্মানে ইসরায়েলি দূতাবাস লক্ষ্য করে কয়েক ডজন হামলা চালানো হয়েছে । হিব্রু মিডিয়া জানিয়েছে, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ফিলিস্তিনি এলাকায়ও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
আল হাম্মাহ সিনাগগ উপাসনার একটি সক্রিয় স্থান ছিল না, কারণ শহরে কোনো ইহুদি বাস করে না; যাইহোক, এটি 16 শতকের কাবালিস্ট রাব্বি ইউসেফ মা’রাভির সমাধির স্থান। একই সাইট পূর্বে ২০১১ আরব বসন্ত বিক্ষোভের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যাতে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্কে ছিল না ।
আমেরিকান ইহুদি কমিটি এক বিবৃতিতে এই ভাঙচুরের নিন্দা করেছে। গ্রুপটি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলেছে,’আমরা তিউনিসিয়ার আল হামাহ সিনাগগ পোড়ানো এবং ধ্বংসের ঘটনায় আতঙ্কিত । পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং তিউনিসিয়ার ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে ।’
তিউনিসিয়ার ইহুদি জনসংখ্যা প্রায় ১,০০০ । চলতি বছরের শুরুতে একটি মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হয়েছিল ইহুদিরা । সেই সময় একজন বন্দুকধারী জেরবা দ্বীপের একটি উপাসনালয়ে হামলা করেছিল। ইসরায়েল এবং ফ্রান্স থেকে এই অঞ্চলে ভ্রমণকারী দুই ইহুদি তীর্থযাত্রী সহ ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয় । যদিও জেরবা হামলার প্রতিক্রিয়ায়, তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি কাইস সাইদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি দেশটির ইহুদি বাসিন্দাদের নিরাপত্তা বাড়াবেন। কিন্তু তার সেই প্রতিশ্রুতি যে কথার কথা তা ফের ইহুদিদের উপর হামলায় প্রমানিত হয়ে গেল ।
ইসরায়েল এবং গাজায় সহিংসতার সর্বশেষ বিস্ফোরণের পর থেকে, তিউনিসিয়ানরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে প্রচুর পরিমাণে রাস্তায় নেমেছে। তিউনিসিয়ার স্কুলছাত্ররা ফিলিস্তিনি পতাকাকে অভিবাদন জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের যে কোনও আলোচনাকে বাদ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে,যেটি ২০২০ সালে চারটি আরব দেশ গ্রহণ করেছিল।।