জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১৮ অক্টোবর : নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর ১৫ তম বংশধর হলেন পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের আওগ্রামের গোস্বামী পরিবার। পরিবারের সদস্য মুরারীমোহন গোস্বামী ছিলেন বর্ধমানের জনৈক ধনী প্রামাণিক বাড়ির কুলগুরু। প্রামাণিক বাড়ির সদস্যরা থাকতেন কলকাতায়। জাঁকজমক পূর্ণভাবে গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপুজো হতো। কলকাতা থেকে পরিবারের সদস্যরা গ্রামে আসতেন পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে।
শোনা যায়,দুর্গাপুজোর সময় একবার কলকাতা থেকে প্রামাণিক পরিবারের জনৈক সদস্য গাড়ি করে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ফেরার পথে গাড়ির ইঞ্জিনে জল দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়লে চালক মণ্ডপের সামনে রাখা মঙ্গলঘটের জল গাড়ির ইঞ্জিনে ঢালে। ঘটে যায় চমকপ্রদ ঘটনা। মন্দিরে মায়ের সামনে রাখা ৪০ কেজি জল ধরা মঙ্গলঘটের জল শুকিয়ে যায়। একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করে প্রামাণিক পরিবারকে। কুলুগুরুর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দীর্ঘদিনের পুজো বন্ধ করে দেয়। এটি ১৯৪৮ সালের ঘটনা।
ওদিকে একইসময়ে ঘটে আর এক ঘটনা। রাতের বেলায় আওগ্রামের গোস্বামীদের চব্বিশ প্রহরের আটচালায় আশ্রয় নেয় জনৈক আগন্তুক। ক্লান্ত আগন্তুকের ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলেও লালপাড়ের শাড়ি পরিহিতা একটি মেয়ের নূপুরের রিনিঝিনি আওয়াজে সারারাত ঘুম হয়নি। যতবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছেন ততবার একই আওয়াজ। পরের দিন সকালে মুরারীমোহন বাবুকে তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। ধর্মপ্রাণ মুরারীবাবু বর্ধমান ও এখানকার ঘটনার মধ্যে একটি মিল খুঁজে পান। তিনি অনুমান করেন বর্ধমান থেকে ‘মা’ নিজে এখানে এসেছেন পুজো নিতে। ১৯৪৯ সালে মুরারীমোহন গোস্বামীর হাত ধরে শুরু হয় আওগ্রামের গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপুজো। আজও সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে। মাঝে অবশ্য ভয়াবহ বন্যার জন্য ১৯৭৮ সালে পুজো বন্ধ ছিল।
সন্তান সন্ততিদের সঙ্গে ‘মা’ এখানে আসেন এক পাটাতে। ডাকের সাজে সজ্জিতা হয়ে ওঠেন ‘মা’। মুহূর্তের মধ্যে মৃন্ময়ী মা হয়ে ওঠেন চিন্ময়ী। পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন গোস্বামী পরিবারের কোনো সদস্য। প্রতিদিন ভোরবেলায় হয় সন্ধ্যা-আরতি। মায়ের চরণে জবা, ফুল, বেলপাতার অর্ঘ্যপাত্র দেওয়া হয় এবং অন্নপ্রসাদ নিবেদন করা হয়। সেই অন্নপ্রসাদ সমস্ত গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এখানে সমস্ত রকম বলি নিষিদ্ধ। দশমীর দিন চিরাচরিত সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে পাড়ার মহিলারা। প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় দ্বাদশীর দিন। গোস্বামী বাড়ির পারিবারিক পুজো হলেও সমস্ত গ্রামবাসী এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে। গোস্বামীরা মনে করেন ‘মা’ শুধু তাদের নয়, সবার।
আগে পুজোর সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেও বিভিন্ন কারণে সেটা বন্ধ আছে। এতে পুজোর জৌলুস অনেকটা কমে যায়।
গোস্বামী বাড়ির অন্যতম সদস্য শিবপ্রসন্ন গোস্বামী বললেন, নামে গোস্বামী বাড়ির হলেও পুজোর অধিকার সমস্ত গ্রামবাসীর আছে। সবার মিলনে পুজো হয়ে ওঠে সত্যিকারের মিলনমেলা।।