এইদিন ওয়েবডেস্ক,লখনউ,১৩ অক্টোবর : ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ৩ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে ইউপি পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (ইউপি এটিএস) । তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ২ জন । ধৃতরা হল আদিল মোহাম্মদ আশরাফি ওরফে আদিল উর রহমান, শেখ নজিবুল হক ও আবু হুরায়রা গাজী । নজিবুল ও হুরায়রা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা । ওই দু’জনই জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে সরবরাহ করত বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী দল । ইউপি এটিএস আরও জানতে পারে যে বাংলাদেশিদের ভারতে এনে বসতি স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে ২০ কোটি টাকার তহবিল পেয়েছে । এই তিনজনের অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় কোটি টাকা উদ্ধার করেছে এটিএস ।
ইউপি এটিএস জানিয়েছে যে এই মানব পাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতে এনে এখানে বসিয়ে দিত। এ জন্য তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব সংক্রান্ত জাল নথি তৈরি করত। আর এই কাজের জন্য মানব পাচার সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে পেত কোটি কোটি টাকা ।
সংবাদ মাধ্যম ওপি ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী,
ইউপি এটিএসের এডিজি মোহিত আগরওয়াল বলেছেন যে এটিএসের বারাণসী ইউনিট সম্প্রতি এই বিষয়ে গোপন তথ্য পায় । এটিএস জানতে পারে যে সিন্ডিকেট সদস্য আদিল মহম্মদ আশরাফি ওরফে আদিল উর রহমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লি বা সাহারানপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে । এর পরে এটিএসের দল বারাণসীতে হানা দিয়ে তাকে ধরে ফেলে । তার কাছ থেকে বেশ কিছু জাল আধার কার্ড ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয় ।
তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আদিল জানানিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা শেখ নজিবুল হক ও আবু হুরায়রা গাজীর সহায়তায় তিনি এসব নথি পেয়েছেন। নজিবুল ও হুরায়রা দুজনই বর্তমানে দিল্লি সংলগ্ন ইউপির সাহারানপুরে থাকে । এর পরেই সাহারানপুর থেকে ওই দু’জনকেই আটক করে এটিএস। জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই তাদের অপরাধ স্বীকার করে জানায় সে তারা বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে ইউপিতে বসবাস করছেন।
সাহারানপুর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই বাংলাদেশি নাগরিক জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশি নাগরিক মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মাসবাহ ওরফে নজীবের জাল নথিও তৈরি করেছিলেন। কয়েকদিন আগে সাহারানপুর থেকে গ্রেফতার হয় হাবিবুল্লাহ। তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রমের প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন এটিএসের এডিজি মোহিত আগরওয়াল ।
তদন্তে আরও জানা গেছে যে বিদেশ থেকে কিছু এনজিওর এফসিআরএ অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছিল। ওই অর্থ মূলত মাদ্রাসা ও স্কুলের জন্য পাঠানো হলেও তা মানব পাচারে ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং এই মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট অবৈধ অনুপ্রবেশ, জাল নথি তৈরি, ভারতে আশ্রয় দেওয়া এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপে এই অর্থ ব্যবহার করছিল বলে জানতে পারে এটিএস ।
প্রসঙ্গত,ভারতে বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অবৈধভাবে এসে বসবাস করতে । অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সঠিক সংখ্যা কত তা অজানা । এই কারনে দেশ জুড়ে সিএএ/এনআরসি লাগু করার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার । কিন্তু কংগ্রেস,বামপন্থী ও তৃণমূল কংগ্রেসের মত রাজনৈতিক দলগুলির বিরোধিতার কারনে কেন্দ্র সরকারের সেই উদ্যোগে ধাক্কা খায় । অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেলেও অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কার্যত চোখ বন্ধ করে বসে আছে । সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর, মিরাট, হাপুড়, গাজিয়াবাদ, আলিগড় এবং মথুরায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭৪ জন রোহিঙ্গা মুসলমানকে গ্রেপ্তার করেছিল ইউপি এটিএস । তাদের কাছ থেকে ভারতের রেশন কার্ড,ভোটার কার্ড ও আধার কার্ডের মত ভূয়ো নথিও উদ্ধার হয় । দীর্ঘ প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে তারা উত্তর প্রদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছিল বলে জানতে পারে তদন্তকারীরা । এর বাইরে এখনো কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গা মুসলমান উত্তরপ্রদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে অনুমান করা হচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাটা বহুগুণ বেশি বলে সন্দেহ অভিজ্ঞ মহলের।।
তথ্যসূত্র ও ছবি : কৃতজ্ঞতা স্বীকার ওপি ইন্ডিয়া ।