শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),১২ অক্টোবর : পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দূর্গাপূজোগুলির মধ্যে অন্যতম মেমারি-২ ব্লকের সাতগেছিয়ার ঘোষাল বাড়ির ‘বেল তলার মা’-এর পূজো । মহালয়ার পর প্রতিপদের দিন থেকে শুরু হয় দেবীর আরাধনা । ষষ্ঠী অবদি ঘটে পূজো হয় । সপ্তমির দিন খুব সকাল থেকে পঞ্জিকা অনুযায়ী শুরু হয় দেবীর মূল পূজো । বিজয়া দশমীর দিন পরিবারের কুমারী মেয়েদের দিয়েই দেবীকে বরন করার প্রথা । আজও সেই প্রথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আসছেন সাতগেছিয়ার ঘোষাল পরিবার । পারিবারিক পূজো হলেও ‘বেল তলার মা’য়ের পূজোতে উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায় গ্রামবাসীদের মধ্যেও । দেবী অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা ।
কথিত আছে,৭০০ থেকে ৮০০ বছর আগে সাতগেছিয়ার ঘোষাল বাড়ির পাশেই একটা প্রাচীন বেলগাছের তলায় দেবীর পূজার সূচনা করেছিলেন জনৈক এক ব্রাহ্মণ পরিবার । তখন থেকেই ‘বেল তলার মা’ বলে খ্যাত হন দেবী । পরিবারটি বংশানুক্রমিকভাবে দেবীর পূজো পরিচালনা করতেন । কিন্তু কালক্রমে পরিবারটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেলে ‘বেল তলার মা’য়ের পূজো বন্ধ হয়ে যায় । পরে দেবীর স্বপ্নাদেশ পান বর্তমান ঘোষাল পরিবারের কোনো এক পূর্বসূরী । তারপর ৫০০ থেকে ৬০০ বছর ধরে ‘বেল তলার মা’-এর পূজো চালিয়ে আসছে ওই পরিবারটি । নির্মান করা হয় একটা মন্দির । যদিও বর্তমানে ওই প্রাচীন বেল গাছের অস্তিত্ব নেই,তবুও আজও ঘোষালবাড়ীর দেবী দূর্গা ‘বেল তলার মা’ বলে খ্যাত এলাকায় ।
পরিবারের গৃহবধূ আল্পনা ঘোষাল, কৃষ্ণা ঘোষাল, অঞ্জলি ঘোষালরা বলেন,পঞ্জিকা মেনে দেবীর পূজো খুব সকাল থেকে শুরু হয় । মহালয়ার পর প্রতিপদের দিন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত দেবীকে ঘটে পূজো করা হয় । সপ্তমী থেকে শুরু হয় মূল পূজো । সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে । দেবীকে নারকেল নাড়ু,মুগের লাড্ডুসহ হাতেগড়া বিভিন্ন মিষ্টান্ন দেওয়াই প্রথা । বিজয়া দশমীর দিন পরিবারের কুমারী মেয়েদের দিয়ে দেবীকে বরন করা প্রথা । দশমীর দিন দেবীর সামনে সকলে বসে মধ্যাহ্নভোজন করা হয় ।’
আল্পনাদেবী বলেন,’আমরা শুনেছি যে বহু বছর আগে পরিবারের কোনো এক গৃহবধূ দেবীকে বরন করেছিলেন । যেকারণে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায় পরিবারের । তারপর থেকেই কুমারী মেয়েদের দিয়ে দেবীকে বরন করে আসা হচ্ছে ।’
তাঁরা আরও জানান,’বেল তলার মা’য়ের পূজো করতে আসেন মেদিনীপুর থেকে এক ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্যরা । দেবীর রান্নার দায়িত্ব বংশানুক্রমিকভাবে পালন করে আসছেন ওড়িশার এক ব্রাহ্মণ পরিবার । পূজোয় পশু বলি নিষিদ্ধ । আখ,চালকুমড়া প্রভৃতি বলি দেওয়া প্রথা ।
জানা যায়,প্রথমদিকে ঘোষাল পরিবার যৌথভাবে দেবীর পূজো পরিচালনা করতেন । কিন্তু পরবর্তী কালে পরিবার টুকরো টুকরো হয়ে গেলে ৫ টা শরিক মিলে পূজো করে আসছেন । দেবীর নামে কিছু জমিজমা আছে । চাষবাস থেকে উপার্জন ও তার সাথে আরও কিছু টাকা দিয়ে পূজো পরিচালনা করেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা ৷।