এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১২ অক্টোবর : ইসরায়েলের উপর সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের হামলার পর ফের একবার শিরোনামে চলে এসেছে ‘আল আকসা’ মসজিদ । জেরুসালেমের পুরনো শহরে অবস্থিত এই মসজিদটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ । এছাড়াও স্থানটি “টেম্পল মাউন্ট” বলে পরিচত এবং ইহুদি ধর্মে পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হয় । গাজা উপত্যকায় ওই মসজিদসহ প্রায় ৩৫ একর জমির দখলকে কেন্দ্র করে ফিলিস্থিন ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব । ঘটেছে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । ফের একবার গাজা উপত্যকার একখণ্ড ভূমি ও ‘আল আকসা’র দখল ঘিরে ইসরায়েল জুড়ে নৃশংস, বর্বরোচিত নাশকতা চালাতে শুরু করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘হামাস’ । ভারত সহ বিশ্বের অমুসলিম রাষ্ট্রগুলি সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করে ইসরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । অন্যদিকে ফিলিস্থিনের পাশে দাঁড়িয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলি । শুধু মুসলিম রাষ্ট্রই নয়,অনান্য অমুসলিম দেশে বসবাসকারী মুসলিমরা তথাকথিত সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলিও ফিলিস্থিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে । পিছিয়ে নেই ভারতের মুসলিমরা । সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একটি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ফিলিস্থিনের সমর্থনে মিছিলও করে ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ‘আল আকসা’ মসজিদ নিয়ে ভারতীয় মুসলিম ও কথিত সেলুলারদের এত আগ্রহ কেন ? এদিকে ভারতে মুঘল শাসনে মন্দির ভেঙে তৈরি করা মসজিদ নিয়ে কথা উঠলেই কেন তারা বিরোধিতা করেন ? অবশ্য এক্ষেত্রে তারা কংগ্রেস,বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ভেঙে তৈরি আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন পেয়ে যায় । ইসরায়েলে এত বর্বরোচিত নৃশংসতার পরেও কংগ্রেস সর্ব সম্মতিক্রমে ফিলিস্থিনের সমর্থনে প্রস্তাব পেশ করেছে । অথচ মুঘল আমলে কাশী বিশ্বনাথ ধাম, মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরসহ বেশ কিছু মন্দির ভেঙে নির্মিত মসজিদ হিন্দুদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা উঠলেই মুসলমানদের পাশাপাশি ওই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি কেন এত বিরোধিতা করেন ? কেন সরব হতে দেখা যায় না পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং চীন অধিকৃত আকসাই চীন উদ্ধারের জন্য ? কেন আজও তারা কাশ্মীরের পন্ডিতের নরসংহার নিয়ে নিশ্চুপ ? সঙ্গত কারনেই উঠছে এসব প্রশ্ন ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক মুসলমান রাজত্বকালে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দিরের ইতিহাস যেগুলি ভেঙে মসজিদ নির্মান করা হয়েছিল । সেগুলি হল :-
★ অযোধ্যার রাম জন্মভূমি মন্দির,বাবরি মসজিদ : কথিত আছে মুঘল সম্রাট বাবরের (১৫২৬-৩০) আদেশে ভাঙা হয়েছিল রাম জন্মভূমি মন্দির । পরে ওই স্থানে বাবরি মসজিদ (সম্ভবত ১৫২৮-২৯ সালে) তৈরি করেন বাবরের সেনাপতি মীর বাকি । ভারতীয় পরাতত্ত্ব বিভাগের সমীক্ষায় বাবরি মসজিদের নিচে প্রাচীন মন্দিরের অসংখ্য নির্দশনও পাওয়া যায় । যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হিন্দুরা তাদের ঐতিহ্যবাহী রাম জন্মভূমির দখল ফিরে পেয়েছে ।
★ বেনারসের কাশী বিশ্বনাথ মন্দির,জ্ঞানভাপি মসজিদ : । ৩৫০০ বছরের পুরোনো শহর বেনারসের কনায় কনায় ভগবান শিবের অধিষ্ঠান বলে মনে করেন হিন্দু সম্প্রদায় । এই মন্দির বহুবার ধবংস ও আক্রান্ত হয়েছিল মুসলমানদের দ্বারা,যার স্বাক্ষ্য পাওয়া যায় ইতিহাসের পাতায় । প্রথমবার আক্রান্ত হয় ১১৯৪ সালে, ২০ বছর বাদে আবার নির্মিত হয় মন্দির, আবার ভাঙা হয় ১৫ শতকে । ১৬ শতকে আকবরের এক হিন্দু সভাষদের প্রচেষ্টায় মন্দিরিটি পুনর্নির্মিত হয় । কিন্তু আকবরেরর বংশধর ও তাঁর নাতি ঔরঙ্গজেব ক্ষমতায় আসার পর ১৬৬৯ সালে মন্দিরটি ধ্বংস করে তার জায়গায় জ্ঞানভাপি মসজিদ নির্মান করেন । জ্ঞানভাপি মসজিদ মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন । তবে মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে যে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের সমীক্ষায় জ্ঞানভাপি মসজিদের দেওয়ালে দেওয়ালে পাওয়া গেছে ত্রিশুল,পদ্মফুলের মত হিন্দু ধর্মের বেশ কিছু প্রতীক । অনেকের বিশ্বাস,জ্ঞানভাপি মসজিদের ভিতরেই রয়েছে কাশী বিশ্বনাথের আসল জ্যোতির্লিঙ্গটি ।
★ মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির,সাহি ইদ্গাহ মসজিদ : উত্তরপ্রদেশের মথুরায় অবস্থিত কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির বা কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির যা কেশব দেব মন্দির বলেও পরিচিত। কথিত আছে মথুরার মন্দিরের ন্যায় গুজরাটের দ্বারকার দ্বারকাধিশ মন্দির ও কৃষ্ণের পৌত্র বজ্রা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল মন্দিরটি । মথুরা কৃষ্ণের জন্মস্থান আর মন্দির বানানো হয় আনুমানিক ৫০০০ বছর আগে। এই মন্দিরটি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০ সালে নির্মিত বলেও মনে করা হয় । দ্বারকাধিশ মন্দিরের ১০১৭ সালে ধংসের পর আবার নতুন করে বানান বীর সিং দেও বা বীর সিং বুন্দেলা। কেশব দেও মন্দির ও ঔরঙ্গজেব ধংস করে তার উপরে নির্মাণ করে সাহি ইদ্গাহ মসজিদ । ইদ্গাহ মসজিদ বানানো হয় সব মন্দিরের ধংসাবশেষ দিয়ে, যার প্রমান এএসআই দ্বারা উদ্ধার করা একটা ফলক, যাতে লেখা আছে যে এই সাহি ইদ্গাহ মসজিদ বানানো হয়েছে মন্দিরের ভাঙা পাথর, মুর্তির অবিশিষ্টাংশ দিয়ে । এই সুন্দর মন্দির টি বহু দূর থেকেও দেখা যেত । এখন যে মন্দির টি আমরা দেখতে পাই, সেটা চতুর্থতম মন্দির,নির্মিত হয় ১৯৬৫ সালে ।
★ গুজরাটের রুদ্র মহালয়া,জামী মসজিদ : গুজরাটের পাটান জেলার সিদ্ধপুরে রুদ্র মহালয়া মন্দিরের ধংসাবশেষ অবস্থিত। সরস্বতী নদীর তীরে সিদ্ধপুর এক অতি প্রাচীন ও পবিত্র গ্রাম। এই গ্রামের নাম হয়েছে সিদ্ধরাজ জয়সিং এর নাম থেকে, যিনি এই মন্দির স্থাপনা করেন ১২ শতকে। রুদ্র মহালয়া মন্দির নির্মাণকাজ শুরু হয় ৯৪৩ শতকে মুলারাজ সোলাংকির হাত ধরে। নির্মাণকল্প সমাপ্ত হয় ১১৪০ শতকে, সিদ্ধরাজ জয়সিং এর প্রয়াসে। এটি ১৪১০-১৪৪০ সালের মধ্যে আলাউদ্দিন খিলজির দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে এটি সম্পূর্ণভাবে প্রথম আহমেদ শাহ দ্বারা ধূলিসাৎ হয় এবং এর কিছু অংশ তখনই মসজিদে পরিণত হয়।
★ মধ্যপ্রদেশের ভোজশালার দেবী সরস্বতীর মন্দির,কামাল মৌলানা মসজিদ : মধ্যপ্রদেশের ধর জেলায় অবস্থিত দেবী সরস্বতীর এক অতি প্রাচীন মন্দির হল এই ভোজশালার দেবী সরস্বতীর মন্দির । ভোজশালা ছিল হাজারো ছাত্র ও জ্ঞানী মানুষের সঙ্গমস্থল আর এটি শিক্ষা অর্জনের মুখ্য জায়গা ছিল । কথিত আছে, খ্রীষ্টপূর্ব ১৩০৫ সালে ভোজশালা সর্বপ্রথম আলাউদ্দিন খিলজি দ্বারা আক্রান্ত হয়। রাজা মহাকালদেব ও তাঁর সেনার পরাজয়ের পরে আলাউদ্দিন খিলজি ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করা ১২০০ হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষককে হত্যা করে । একজন মুসলিম শাসক দিলাবার খান বিজয় মন্দির ( সূর্য মার্তন্ড মন্দির ) ধ্বংস করেন এবং সরস্বতী মন্দিরের একটি অংশকে দরগায় পরিণত করতে চান। বর্তমানে মুসলিমরা এই বিজয় মন্দিরে নামাজ পাঠ করে এবং ষড়যন্ত্র করে এটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে যে এটি আসলে একটি দরগা যার নাম হল “লাট মসজিদ “। পরে মেহমুদ শাহ ভোজশালা আক্রমণ করেন এবং এটিকে দরগায় পরিণত করার চেষ্টা করেন। তিনি সরস্বতী মন্দিরের বাইরের জমি জবরদখল করে সেখানে কামাল মৌলানার মৃত্যুর ২০৪ বছর পরে “কামাল মৌলানা মকবরা ” স্থাপন করেন।
★ পশ্চিমবঙ্গের আদিনাথ শিব মন্দির,আদিনা মসজিদ : পশ্চিমবাংলার পান্ডুয়াতে শিব মন্দির ভেঙে ১৩৫৮ – ৯০ শতকে শিকান্দার শাহ্ আদিনা মসজিদ নির্মাণ করে বলে কথিত আছে । বর্তমানে ভারতের অন্যতম সর্ব্ববৃহৎ বড় মসজিদ এটি । আদিনা মসজিদে… প্রবেশদ্বার, অন্দরমহল,প্রতিটি দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর বিগ্রহের ধংসাবশেষ আজও দেখতে পাওয়া যায় । মসজিদের এক পাথরে শিবের নটরাজ মূর্তি এখনো আছে। অন্য এক পাথরে গনেশ এর মুর্তি পাওয়া গেছে বলে জানা যায় । কথিত আছে এই মসজিদের নাম টাও হিন্দুদের দেবাদিদেব আদিনাথের থেকে নেওয়া ।
★ আহমেদাবাদের ভদ্রকালী মন্দির,জামা মসজিদ :
ভদ্রকালীর মন্দির ভেঙে ১৪২৪ শতকে আহমেদ শাহ্ এখনকার জামা মসজিদ নির্মাণ করেন । মসজিদের ১০০ টি পাথরের থাম্বায় খোদাই করা বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা, পদ্ম ফুল, নানা দেবদেবীর মুর্তি, কুণ্ডলিনীর পরিস্কার ও ব্যাখ্যা করা, পার্বতীর মুর্তি, ও ঘণ্টা। পুরাণ, বেদ, রামায়ণ মহাভারতের মত ইতিহাসের লেখা খোদাই করা আছে এখনো যা দেখলেই বোঝা যায় হিন্দুদের মন্দির।
★ মধ্যপ্রদেশের বিদিশার বিজয় মন্দির,বিজামন্ডল মসজিদ : ঔরঙ্গজেব ১৬৫৮–১৭০৭ সালে এই মন্দিরটি লুট করে, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। তিনি সমস্ত দেবীমূর্তি মন্দিরের উত্তর দিকে মাটিতে পুঁতে দেন এবং মন্দিরটিকে মসজিদে পরিণত করেন। বর্তমানে মসজিদটিতে ইদের সময় প্রচুর লোকসমাগম হয় ।
২০২২ সালের মে মাসে কর্ণাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পা প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিলেন,’কেন শ্রীরঙ্গপত্তনায় একটি মন্দির স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং তার জায়গায় একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল ? ভারতে মোট ৩৬,০০০ টি মন্দির মুঘলদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল। আমরা সেগুলিকে পুনরুদ্ধার করব ।’ তিনি দাবি করেন, আদালতের রায় অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ উপায়ে আইন মেনে কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই ৩৬,০০০ টি মন্দির পুনরুদ্ধার করা হবে ।
পাশাপাশি ভারতের জম্বু এবং কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখের অংশ আকসাই চীনের ৩৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার অংশ ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর চীন দখল করে নিয়েছিল । এছাড়া পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর রাজা হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করার পরেও পাকিস্তানের হাতেই রয়ে গেছে ওই এলাকা । অথচ একমাত্র ভারতের হিন্দু ও বিজেপি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বললেও ভারতীয় মুসলিমরা এবং কংগ্রেস,বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির এনিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। পরন্তু তাদের পাকিস্তানকেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন করতে দেখা যায় ।।
তথ্যসূত্র : সৌজন্যে অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন খবর ২৪ ঘন্টা ও উইকিপিডিয়া ।