প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ অক্টোবর : হুমকি শাসানির মুখে কম পড়তে হয়নি । তবুও কংগ্রেসের প্রতীকে ভোটে লড়ে জয়ী হওয়া মিনতি মাণ্ডিকে কেউ ভোল বদলানো করিয়ে বায়রন বিশ্বাস বানাতে পারেন নি।তাই জনজাতি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত পূর্ব বর্ধমানের রায়নার নাড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদ নিয়ে আজও টানাপড়েন রয়েই আছে।এই অবস্থায় প্রধান শূন্য নাড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালনার দায়িত্ব ভার উপ-প্রধান পিন্টু মোল্লা হাতে সঁপে দিয়েছেন রায়না ১ ব্লকের বিডিও রিমলি সোরেন। মাস খানেক ধরে এভাবেই চলছে নাড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত।
এনিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে চাপান উতরও
অব্যাহত রয়েছে। তবুও এই ব্যবস্থাকে পাকা করতে হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে মামলা করেছিলেন স্থানীয় সামসপুরের বাসিন্দা শ্রীমন্ত মালিক। কিন্তু তাকে নিরাশ হতে হয়েছে।
বিচারপতি সেই মামলা সোমবার খারিজ করে দিয়েছেন।বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন,
প্রধান নির্বাচন না করাটাই অনুচিত হয়েছে।মামলাকারীর বক্তব্য মান্যতা পেলে সংবিধান স্বীকৃত সংরক্ষণ নীতিকেই অমান্য করা হবে ।।
মিনতি মাণ্ডি নাড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।এবারের পঞ্চায়েত ভোটে
কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে তিনি জিতেছেন।তবে নাড়ুগ্রামের পঞ্চায়েতের বাকি ২১টি আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ও প্রধান পদটি জনজাতি-মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত থাকায় বেকায়দায় পড়ে যায় তৃণমূল নেতৃত্ব । কারণ তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিতদের মধ্যে জনজাতি- মহিলা কেউ নেই। তাই মিনতি মাণ্ডির
প্রধান হওয়া একপ্রকার সুনিশ্চিত হয়ে যায় । এতেই বেকায়দায় পড়ে যায় তৃণমূল ।
মিনতির আইনজীবী অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রধান নির্বাচনের দিন মিনতিকে পঞ্চায়েতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই তিনি শপথ নিতে পারেননি। আদালতে প্রমাণ সহ এই তথ্য তুলে দেওয়া হয়। সেই সবের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মামলাকারীর আবেদন মানতে রাজি হননি।সংরক্ষণের আওতায় থাকা মহিলাকেই প্রধান পদে বসানোর বিষয়টিকে মান্যতা দিয়ে বিচারপতি আবেদনকারীর মামলা খারিজ করে দিয়েছেন ।’
যদিও আইনজীবী মহল সূত্রে খবর,’মামলাকারীর সমর্থনে নাড়ু গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭ জন সদস্য সই করেছিলেন। আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিল, জনজাতি-মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের দিন মিনতি মাণ্ডি অনুপস্থিত ছিলেন। তাই উপ-প্রধানকে প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তা না হলে সংখ্যালঘু দলের সদস্য হিসেবে উনি প্রধান হয়েও পঞ্চায়েতের কাজ হবেনা।পঞ্চায়েতের কাজে ব্যাঘাত হবে’। এর পাল্টা মিনতি মাণ্ডির
আইনজীবীর পক্ষ থেকে বিচারপতিকে জানানো হয়,’শপথ নিতে গেলে প্রধানকে আটকানো হয়েছিল।সেজন্য এফআইআর করা হয়েছে। সংরক্ষিত পদে থাকা সদস্য সংখ্যালঘু না সংখ্যাগুরু দলের তা দেখা হয় না।’ আইনজীবী মহলের দাবি,সংরক্ষিত আসনে ওই মহিলা প্রধান পদে বসার এক বছরের মধ্যে আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হলে তখন তাকে অপসারণ করা যেতে পারতো। সেটা করা হয়নি ।
পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান পিন্টু মোল্লা বলেন,গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিডিও আমাকে প্রধানের দায়িত্ব পালনের অধিকার দিয়েছে। সেটা আবার কেড়ে নেওয়া যায় না কি?তেমটা হলে তো পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হবে।” তৃণমূলের রায়না ১ ব্লক সভাপতি বামদেব মণ্ডলও বলেন,“ ২০১৩ সালে পলাশন পঞ্চায়েতেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।তখন তো উপ-প্রধানই দায়িত্ব সামলেছিল। এখন তাহলে কিসের অসুবিধা ?’ আর বিডিও রিমলি সোরেন বক্তব্য,’যা হয়েছে আইন মেনেই করেছি। আবার যা হবে আইন মেনেই হবে ।’।