এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,০৫ মে : সারা রাজ্যজুড়ে চলছে ভোট পরবর্তী হিংসা । এমনই অভিযোগ তোলা হয়েছে বিরোধী দল বিজেপির পক্ষ থেকে । অভিযোগ, বেছে বেছে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের উপর হামলার পাশাপাশি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতিদল । পালটা প্রতিরোধ হলে বেধে যাচ্ছে সংঘর্ষ । বুধবার মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা অঞ্চলের পিলসোয়া গ্রামে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে উভয় দলের কয়েকজন আহত হন বলে খবর । আহতদের মধ্যে প্রিয়রঞ্জন কর্মকার ওরফে বাবু নামে এক বিজেপি কর্মীর ঘাড়ে রামদার চোট লাগে । খবর পেয়ে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ গিয়ে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মঙ্গলকোটের নতুনহাটে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে । সেখান থেকে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে । মঙ্গলকোটের পাশাপাশি মঙ্গলবার রাতে কাটোয়ার করজগ্রামের মুসলিম পাড়ায় বিজেপি-তৃণমূলে মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় । সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৫ জন জখম হয়েছেন । আহতদের মধ্যে তিনজন তৃণমূল কর্মী, ২ জন বিজেপি সমর্থক বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ।
অন্যদিকে মন্তেশ্বর থানার কুসুমগ্রামে মঙ্গলবার প্রায় রাতভর বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি ও দোকানঘরে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে । এদিন ভাতার বাজারের একটি পুকুরের মাছ লুটপাট চালানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ । খবর পেয়ে ভাতার থানার পুলিশ গিয়ে লুটপাটের চেষ্টা রুখে দেয় । পুকুর মালিকের অভিযোগ, বিগত নির্বাচনে তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করার কারনেই পুকুরের মাছ লুটের চেষ্টা করেছে তৃণমূলের লোকজন । যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে । এর সাথে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই ।
গত রবিবার বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হিংসার খবর পাওয়া যাচ্ছে । মূলত বিজেপির নেতা কর্মী ও তাঁদের বাসস্থান ও ব্যাবসাস্থল টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ । পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া ও কালনা মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ছাড়াও আউশগ্রাম,ভাতারের বিজেপি কর্মীদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হচ্ছে বলে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে বিজেপি নেতৃত্ব । ফল ঘোষণার পর থেকেই ওই সমস্ত এলাকার অসংখ্য বিজেপি কর্মী প্রাণ বাঁচাতে গোপন ঠিকানায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। মঙ্গলকোটের বিভিন্ন অঞ্চলের বিজেপি নেতা-কর্মী, তাঁদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের উপর গত রবিবার থেকে লাগাতার হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে । জানা গেছে,মঙ্গলকোটের চানক গ্রামের বিজেপি নেতা সুব্রত মণ্ডলের শ’মিল ও তাঁর দাদার ফার্নিচারের দোকানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুষ্কৃতিরা । এই দেখে প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গোপন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন সুব্রতবাবু । জানা গেছে,তাঁর বাড়িতে আছেন বৃদ্ধ বাবা-মা,স্ত্রী, আড়াই ও আট বছরের দুই শিশুসন্তান৷ বর্তমানে তাঁরা গৃহবন্দি । অভিযোগ,মঙ্গলবার সুব্রতবাবুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি করে চানক গ্রামে এসেছিলেন । কিন্তু গ্রামে ঢুকতেই ২০-২৫ জনের একটি দল লাঠি-সোঁটা নিয়ে গাড়িটিকে তাড়া করে । ফলে পালিয়ে বাঁচেন সুব্রতবাবুর শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা । এছাড়া গোতিষ্ঠা অঞ্চলের শক্তিকেন্দ্রের প্রমুখ বিভাস দত্তের বাড়ি ও ফলের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে খবর । বিভাসবাবু কোনও রকমে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান । জানা গেছে, বিভাসবাবু বাড়ি থেকে পালিয়ে গুসকরায় তাঁর এক পিসিমার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন । কিন্তু মঙ্গলবার গোতিষ্ঠা থেকে দুষ্কৃতিরা সেখানে গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ । যদিও হামলা চালানোর সময় বিভাসবাবু সেখানে না থাকায় অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পেয়ে যান । পাশাপাশি ভাঙচুর চালানো হয় লাখুরিয়ার বিজেপি নেতা রাজু রায়ের বাড়ি,মুড়ি মিল ও তাঁর গাড়িতে । নতুনহাটের নামুহাটের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী শান্ত ঘোষ ও রামপ্রসাদ পালের বাড়ি,নতুনহাট বাজারের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ প্রামানিক নামে এক বিজেপি কর্মীর বাড়ি ও সেলুন ও কৃষ্ণুপুরের বাসিন্দা মিঠুন দাসের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ । বিজেপির অভিযোগ,নতুনহাট, কাশেমনগর, গোতিষ্ঠাসহ মঙ্গলকোট ব্লকের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে বিজেপি কর্মীরা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের হামলার শিকার হচ্ছেন । মঙ্গলবার পিলসোয়া গ্রামের ৩৬ নম্বর বুথ এলাকার বাসিন্দা যশোদানন্দন বৈরাগ্যসহ বেশ কিছু বিজেপি কর্মীর বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ । এমনকি বেশ কয়েকটি ধানের মড়াই ও খড়ের পালুইয়েও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । এদিন এনিয়ে ফের দুঃদলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ।
তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মড়াই শেখের অভিযোগ, ‘পাশের গ্রামে আমাদের এক আত্মীয় মারা গেছেন । তাই আজ সকালে আমার ছেলে তার মাকে বাইকে চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাচ্ছিল । কিন্তু বিজেপির কর্মী সমর্থকরা লাঠিসোঁটা, রড,কাটারি নিয়ে চড়াও হয়ে বাইকটি আটকে তাদের ব্যাপক মারধর করে ।’ জানা গেছে,এই ঘটনার পর তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হলে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায় । সংঘর্ষে উভয়পক্ষের মোট ৩ জন জখম হন । আহতদের মধ্যে ২ জন তৃণমূল ও একজন বিজেপি কর্মী ।
আহত বিজেপি কর্মী প্রিয়রঞ্জন কর্মকারের ভাই
বনমালী কর্মকারের অভিযোগ, ‘তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা আমার মাথা লক্ষ্য করে রামদার কোপ বসাতে গেলে আমার দাদা আমাকে বাঁচায় । তখন আমাকে মারতে না পারার রাগে আমার দাদাকে রামদা দিয়ে কোপায় দুষ্কৃতিরা ।’ জানা গেছে,সংঘর্ষের পুর পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায় । এলাকায় উত্তেজনা থাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ ও র্যাফ বাহিনী ।
মঙ্গলকোট ছাড়াও মঙ্গলবার রাতে কাটোয়া থানার করজগ্রামে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । জানা গেছে, করজ গ্রামের মুসলিম পাড়ায় দুই পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় । দুই পক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে । মোট ৫ জন গুরুতর জখম হন। পুলিশ আহতদের রক্তাক্তবস্থায় উদ্ধার করে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করে । পুরানো বিবাদের জেরেই এই সংঘর্ষ বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তবে স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে রেষারেষিতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ।
এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষনার পর থেকেই মন্তেশ্বর থানার কুসুমগ্রামের বিজেপি কর্মী সমর্থক ও তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠছে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে । অভিযোগ,মঙ্গলবার রাতে কুসুমগ্রামে ফের হামলা চালায় দুষ্কৃতিদল । পুলিশের সামনেই তারা গ্রামের ২০ জন বিজেপি কর্মীর বাড়িবাড়ি গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ । কুসুমগ্রামে ডাকবাংলো এলাকায় ৩ টি দোকান ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে । হামলার পর প্রাণ বাঁচাতে ইব্রাহিম মল্লিক,সুলতান মল্লিক, আনাই শেখ, ইউনাস মল্লিক,আলিম শেখসহ বিজেপি কর্মীরা গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে গেছেন । তাঁদের পরিবারের লোকজনরা বর্তমানে কার্যত গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বলে খবর ।
এদিন ভাতার বাজারে সন্তোষসায়ের নামে একটি পুকুর লুটপাট চালানোর চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে । পুকুরটিতে বর্তমানে মাছ চাষ করছেন সুশান্ত দত্ত নামে জনৈক এক হোটেল ব্যাবসায়ী । সুশান্তবাবুর অভিযোগ, মঙ্গলবার স্থানীয় কয়েকজন এসে তাঁকে শাসিয়ে গিয়েছিল পুকুরের মাছ তুলে পুকুরটির তাঁরা দখল নেবে । পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় তাঁরা ।
জানা গেছে, এরপর এদিন সকাল সাড়ে এগারো নাগাদ কয়েকজন মিলে পুকুরে নেমে মাছ ধরতে শুরু করলে সুশান্তবাবু পুলিশের দ্বারস্থ হন । এরপর পুলিশ এসে পুকুরের মাছ লুট রুখে৷ দেয় । ঘটনা ঘিরে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় ।।