প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ মে : বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিজেপি-তৃণমূল সংঘের্ষে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ । সোমবার সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার নবগ্রামে । পুলিশ জানিয়েছে ,ধৃতরা হল দিলীপ সরেন, প্রদীপ সরেন, হারাধন মান্না, কানাই ক্ষেত্রপাল, দিলীপ বাগ, দুর্গা হেমব্রম, টুম্পা ঘোষ, বুধুন কিস্কু, লক্ষ্মী সরেন, মানি হেমব্রম, সরস্বতী হেমব্রম ও তরুণ ক্ষেত্রপাল। এই ধৃতরা নবগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা । জানা গিয়েছে ধৃতদের মধ্যে একমাত্র তরুণ তরুণ তৃণমূল কর্মী। বাকি ১০ জনই বিজেপির সমর্থক ।মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে। ঘটনার বিষয়ে উভয়পক্ষ থানায় অভিযোগ করেছিল । তার ভিত্তিতে পৃথক দুটি খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে ।
পুলিশ সূত্রে জানাগিয়েছে, নবগ্রামের ষষ্ঠিতলায় বাড়ি বিজেপির শক্তি প্রধান আশিস ক্ষেত্রপালের। সোমবার দুপুরে তার বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের লোকজন। আশিসের মা কাকলি ক্ষেত্রপাল বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা ধারালো ভোজালি দিয়ে তাঁর গলায় কোপ বসিয়ে দেয় ।গুরুতর জখম অবস্থায় কাকলিকে জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।তৃণমূল কর্মীদের হামলায় আশিসের বাবা অনিল ক্ষেত্রপাল ও কাকা মানস ক্ষেত্রপাল গুরুতর জখম হন। তাঁরা এখন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।এরপরেই পাল্টা হামলায় নামে বিজেপি কর্মীরা ।
বিজেপি নেতা আশিস ক্ষেত্রপালের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে এইখবর পেয়েই বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা এলাকার চারপাশের তৃণমূলের লোকজনকে ঘিরে ফেলে। তখন দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েযায় । সেই সংঘের্ষের মাঝে পড়ে গিয়ে তৃণমূলের শাজাহান শা ওরফে সাজু ও বিভাস বাগ গুরুতর জখম হন। তাঁদেরকেও উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
শারীরিক অবস্থা সংকটজনক থাকায় দু’জনকেই স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিছু সময় পরে সেখানেই সাজু ও বিভাস মারা যান।
এই ঘটনার পরেই কাকলির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তাঁর প্রতিবেশী মামনি ক্ষেত্রপাল জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।পাল্টা দুই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় আঝাপুর পঞ্চায়েতের সদস্য সুজিত মজুমদার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।সুজিত বাবু পুলিশকে জানিয়েছেন,সাজু ও বিভাস বিভাস আবির মেখে নবগ্রামে তালের রস খেতে যায়।তখন বিজেপির লোকজন তাঁদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করে।প্রতিবাদ করায় দুই তৃণমূল কর্মীকে রড ও লাঠি দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়।তাতেই তাঁদের মৃত্যু হয় ।
জামালপুর থানার পুলিশ ১১ জন ধৃতকেই মঙ্গলবার পেশ করে বর্ধমান আদালতে । তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী অফিসার দিলীপ সরেন, প্রদীপ সরেন ও তরুণ ক্ষেত্রপাল কে ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ধৃতদের ৩ দিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন । বাকি ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত ।।