দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০৯ অক্টোবর : অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায় । প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক কৃষক । তথ্য জানতে চেয়ে তার কাছে আসেনি কোনো ফোন, ডাউনলোড করেননি কোনো অ্যাপ, এটিএম কার্ডও ছিল কৃষকের কাছে । অথচ ওই কৃষকের কিষাণ ক্রেডিট লোন অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় ২৫৫০০ টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারক । শেষ পর্যন্ত এই প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে কাটোয়া থানার পুলিশ । ধৃত ব্যক্তি হল কাটোয়া থানার ভাটনা গ্রামের বাসিন্দা হিল্লাল শেখ (৩১) । রবিবার রাতে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ । হিল্লালের সঙ্গে আরও একজন ছিল । বর্তমানে পুলিশ তাকে খুঁজছে । সোমবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তুলে পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে । গ্রাহকের কাছে এটিএম কার্ড থাকা সত্ত্বেও ধৃত যুবক কিভাবে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাপিশ করে দিল তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ।
জানা গেছে,প্রতারিত কৃষক হলেন কাটোয়ার করুই গ্রামের বাসিন্দা পূর্নচন্দ্র দত্ত । একটি রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে কাটোয়ার মেজিয়ারি শাখায় কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের লোন অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার । তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্ক থেকে একটি মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হয় যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে এটিএমে ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে । কিন্তু সেই সময় এটিএম কার্ড তার বাড়িতেই ছিল । তাসত্ত্বেও কিভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হল জানতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাঙ্কের শাখায় ছোটেন । ব্যাঙ্ক থেকে তাকে অ্যাকাউন্ট ডিটেলস দেওয়া হলে তিনি জানতে পারেন যে শুধু ১০ হাজার টাকাই নয়,বরঞ্চ কয়েক ধাপে এটিএমের মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ২৫,৫০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে ।
জানা গেছে,পূর্নচন্দ্রবাবু প্রথমে থানায় একটি জেনারেল ডাইরি করেন। গত শুক্রবার এফআইআর দায়ের করা হয় । এই প্রতারণা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাটোয়া থানার এসআই সাইবার বিশেষজ্ঞ স্নেহাশিস চৌধুরীকে । স্নেহাশিসবাবু তদন্তের প্রয়োজনে মেজিয়ারির ওই রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায় গেলে কোন কোন এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়েছে,ব্যাঙ্কের তরফে তার বিষদ বিবরণ দেওয়া হয় । সেই বিবরণে তিনি জানতে পারেন যে প্রথমে গত ৩ সেপ্টেম্বর পূর্ব বর্ধমানের ছাতনি শাখার এটিএম,৫ সেপ্টেম্বর দাঁইহাটের এটিএম,গত ১৫ সেপ্টেম্বর কাটোয়া শহরের কাছারিরোডের একটি এটিএম এবং সর্বশেষ দাঁইহাটে একটি এটিএম থেকে ১০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে ।
পুলিশ সূত্রে খবর,এটিএমে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে তদন্তকারী আধিকারিক দেখেন এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে চড়ে এসে এটিএম থেকে টাকা তুলছে হিল্লাল শেখ । তারপর মোটরসাইকেলের নম্বর ধরে প্রতারকের সন্ধান চালাতে শুরু করেন স্নেহাশিসবাবু । তখন তিনি জানতে পারেন মোটরসাইকেলের মালিক হলেন মূর্শিদাবাদ জেলার সালার থানা এলাকার এক ব্যক্তি । স্নেহাশিসবাবু সেখানে হানা দিয়ে জানতে পারেন যে বাইকটি কিছুদিন আগে সালারের অন্য একজনকে বিক্রি করে দিয়েছেন । পুলিশ সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানতে পারে যে ওই ব্যক্তি হিল্লাল শেখকে বাইকটি কয়েকদিনের জন্য চালাতে দিয়েছিলেন । আর সেই সূযোগকে কাজে লাগায় ওই দুষ্কৃতী । অবশেষে রবিবার রাতে হিল্লালকে কাটোয়া থানার ভাটনা এলাকা থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ । এদিকে এটিএম ছাড়াই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনার কথা চাওড় হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ।।