এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ অক্টোবর : পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নয়,খোদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গনধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন হওয়া এক হিন্দু তরুনীর পরিবার ন্যায় বিচার পেলেন না । কলকাতা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রামের বাসিন্দা ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শিপ্রা ঘোষকে আটজন মিলে গনধর্ষণের পর দু’পা টেনে নাভি পর্যন্ত ছিঁড়ে, গলা কেটে তার লাশ পাশের মাঠে ফেলে পালিয়ে যায় নরপশুর দল । প্রাথমিক ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৯ জনকে। পরে প্রমাণের অভাবে দু’জনকে জামিন দেওয়া হয় এবং মামলা চলাকালীন মৃত্যু হয় আর একক অভিযুক্তের ৷ এই মামলায় ৩১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল কলকাতা নগর দায়রা আদালত । তার মধ্যে তিনজনের ফাঁসি এবং বাকি তিনজনের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত । কিন্তু শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট অভিযুক্ত আনসার আলি মোল্লা ও সইফুল আলি মোল্লার ফাঁসির সাজা মকুব করে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয় । আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি ফাঁসির পরিবর্তে তাকে খালাস করে দেওয়া হয় । মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বাকি তিন অভিযুক্ত ইমানুল হক,ভোলানাথ নস্কর ও আমিনুল ইসলামকে ।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে এই রায় ঘোষণার পর কামদুনিতে মৃতার বান্ধবী টুম্পা কয়াল এই রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অসুস্থ হয়ে পড়েন আরেক বান্ধবী মৌসুমী কয়ালও। বিগত ১০ বছর জন্য নিজেদের বান্ধবীর জন্য ন্যায় বিচার চেয়ে লড়াই করছিলেন এই দুজন । টুম্পা কয়াল বলেন,’আমরা এই বিচার চাইনি । রাজ্য সরকারের উকিল বিক্রি হয়ে গেছে । ওরা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে । মমতা ব্যানার্জি আমাদের বিচার দিতে পারল না । মমতা ব্যানার্জি বলেছিল ৩০ দিনে সাজা হবে । আজ রাজ্য সরকারের উকিল টাকার কাছে পুরো বিক্রি হয়ে গেছে৷ আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব । আমরা বিচার চাই । প্রত্যেককে ফাসিতে ঝোলাবো ।’ এমনকি তারা অভিযোগ তুলেছেন যে এরাজ্যের বিচারব্যবস্থাও পর্যন্ত বিকিয়ে গেছে ।
২০১৩ সালের ৭ জুনে কামদুনি কাণ্ডের নাম শুনলে আজও শিউরে ওঠে গোটা বাংলা । ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন ?
ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শিপ্রা ঘোষ বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে কামদুনি বিডিও অফিস রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন । সেই সময় তাকে অপহরণ করে একটি কারখানার ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে আটজন মিলে গণধর্ষণ করে । ধর্ষণ করার পর ওই আট নরপশু মিলে ধর্ষিতার দু’পা টেনেনাভি পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলে, গলা কেটে তার লাশ পাশের মাঠে ফেলে দেয় । রাত সাড়ে ৮ টার দিকে, তরুনীর ভাইরা রাজারহাটের খড়িবাড়ির আট বিঘা অঞ্চলে একটি ভেড়ির পাশে তাদের বোনের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেন ।
ওই তরুনীর উপর ঘটে যাওয়া মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত অত্যাচার দেখে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে গোটা এলাকা । রাত্রি ৯ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায় । রাত ২ টার সময় একটি বিশাল পুলিশ দল গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নিহতের মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য বারাসাতে পাঠায় ।
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিল আনসার আলি,
সাইফুল আলি,আমিনুর আলি,ভুট্টো মোল্লা,এনামুল মোল্লা,আমিন আলি,গোপাল নস্কর ও ভোলানাথ নস্কর । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ১৭ জুন কামদুনি পরিদর্শন করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি করা হবে এবং তার সরকার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করবে। কিন্তু তার সেই প্রতিশ্রুতি অধরাই থেকে গেল । কারন আসামিদের আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ অভিযুক্তদের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন ।।