এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,০৫ অক্টোবর : ‘হিন্দুরা খুব শান্তিপ্রিয় । তবুও বেশিরভাগ পশ্চিমা ভারতবিদদের হিন্দুদের প্রতি বিরূপ প্রচার করে । খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের মত ভুল বুঝিয়ে ধর্মান্তরিত করার মানসিকতা নেই হিন্দুদের । হিন্দুদের অনেক নির্যাতন করা হয়েছিল, তাদের উপর প্রচুর নৃশংসভাবে হামলা করা হয়েছিল,খুন করা হয়েছিল, নারী ধর্ষণ করা হয়েছিল যা ঘিরে আজও হিন্দুদের মধ্যে ভয়ের মানসিকতা রয়েছে । কিন্তু ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাদের সংখ্যালঘু হওয়ার মানসিকতা রয়েছে এবং তাদের নিজেদের মধ্যেই ভ্রাতৃত্বের অভাব রয়েছে ।’ এমনই মন্তব্য করেছেন ফরাসি লেখক,সাংবাদিক ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে ( François Gautier) । অতীত ইতিহাস থেকে হিন্দুদের শিক্ষা নিয়ে রুখে দাঁড়ানো উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ।’
মহারাষ্ট্রের পুনেতে নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠিত ‘ভারতীয় ইতিহাসের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ মিউজিয়াম’-এর জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে । তিনি মার্কিন রাজধানীতে আর্ট অফ লিভিং আয়োজিত বিশ্ব সংস্কৃতি উৎসব,২০২৩-এও যোগ দিয়েছিলেন । এক সাক্ষাৎকারে ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে বলেন,’অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে হিন্দুদের লড়াই করা উচিত । আজও পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ যাই হোক না কেন, বিশ্বের সর্বত্রই হিন্দুধর্মের উপর আক্রমণ চলছে, খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা ধর্মান্তরিত করা হোক, যা এখন ভারতে, বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্য ও পাঞ্জাবে একটি বড় সমস্যা,এছাড়া টিভির মাধ্যমে পাশ্চাত্যকরণের প্রচেষ্টা চলছে ভারতে ।’
তিনি বলেন,’বেশিরভাগ পশ্চিমা ভারতবিদদের হিন্দুদের প্রতি বিরূপ মনোভাব রয়েছে ।এরা এমন লোক যারা বলে থাকে যে হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের মতোই বিপজ্জনক, যা মোটেও সত্য নয় । দক্ষিণ আমেরিকায় খ্রিস্টান ধর্ম যেমনটি করেছিল এবং অন্যান্য সভ্যতাগুলিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল বা মিশরে যেমন ইসলাম করেছিল এবং মিশরীয় সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করেছিল, তেমনি হিন্দু ধর্ম বিশ্ব জয় করতে ভারতের বাইরে যায়নি ।’
ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে বলেন,’হিন্দু ধর্ম কখনই কারও উপর নিজেকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেনি, আসলে আজও হিন্দুরা কখনও বলে না যে আপনি ধর্মান্তরিত হোন বা আমি আপনাকে ধর্মান্তরিত করতে মিশনারি পাঠাব ।
ফরাসি রাজনৈতিক লেখক তথা সাংবাদিক ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে ১৯৭১ সাল থেকে ভারত ও ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ে গবেষণা করছেন । তখন থেকেই ভারতে বসবাস করছেন তিনি । পাশাপাশি জেনেভা এবং ফ্রান্সের লে ফিগারোতে একটি সংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসাবে কাজও চালিয়ে গেছেন । তিনি ‘ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালচারাল টাইজ’ প্রতিষ্ঠা করেন যা বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করে এবং পুনে মিউজিয়ামও প্রতিষ্ঠা হয় তাঁর হাত ধরেই ।
গওতিয়ে বলেন,’হিন্দুরা খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার ভারতে হিন্দুরা ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ এবং হিন্দু ধর্ম বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। তবুও তাদের সংখ্যালঘু হওয়ার মানসিকতা রয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। এমনকি ভারতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সংখ্যালঘু হওয়ার মানসিকতা রয়ে গেছে ।’
শিবাজী মহারাজ জাদুঘর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে (শিবাজী মহারাজ) সম্মান করি কারণ তার সাহস এবং সেই সাহসের সাথে যে বুদ্ধিমত্তা ছিল তা অসাধারণ ছিল ।’ তিনি বলেন,’কিন্তু হিন্দুদের অনেক নির্যাতন করা হয়েছিল, তাদের উপর এত নৃশংসভাবে হামলা করা হয়েছিল, খুন করা হয়েছিল, নারী ধর্ষণ যে আজও হিন্দুদের মধ্যে ভয়ের মানসিকতা রয়েছে।’
তিনি ভারতে হিন্দু মৌলবাদের উত্থান নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে ক্রমবর্ধমান প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন,’হিন্দুরা বিশ্বের সবচেয়ে সহনশীল মানুষ ।’ তিনি বলেন,’প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব ধর্মের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে, আজও আমরা দেখতে পাই যে মোদী সকলের কাছে পৌঁছেছেন, সে মুসলিম, খ্রিস্টান বা পশ্চিমারা হোক না কেন । হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে ভারত বা ভারতের বাইরে অপপ্রচার রুখতেই আমি জাদুঘরটি তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছি। কারণ এটি ভারতের ধর্ম এবং প্রকৃত ইতিহাস দেখাবে ।’।