রোহিনী ও রূপম একে অপরকে খুব ভালোবাসে। ওরা দুজন দুজনার মত রঙিন স্বপ্নে ভেসে বেড়াতো।
বয়স কম,কলেজ পাশ করেছে। এখন ওরা এইসব আজেবাজে চিন্তায় সময় নষ্ট করতে চায় না। চুটিয়ে প্রেম করছে দুজনেই।
কিন্তু ওদের ভালোবাসার প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিত্ত, টাকাকড়ি! রোহিনী গরিবের মেয়ে, আর রূপম ধনী পরিবারের ছেলে!তবে ধনী গরিবের এই বৈষম্য তাদের ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি দেখা যায় না।
প্রথমে রূপমের পরিবার রোহিনীর সঙ্গে বিয়েতে একদমই রাজী ছিল না । কিন্তু রূপমের জেদের কাছে হার মানতে হয় । শুভ দিনে শুভক্ষণে রোহিনী ও রূপমের বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের পর রোহিনী কে একটি ছোট্ট ঘরে থাকতে দেওয়া হয় । রোহিনী কোন অসন্তোষ প্রকাশ করেনি। সে সেই ছোট্ট ঘর কেই সাজিয়ে গুছিয়ে স্বর্গ করে তোলে।
খুব শান্ত স্বভাব রোহিনীর, বিত্তশালী ঘরের বউ । সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজের লোক কাজ করলেও সে যতটুকু সম্ভব ওদের সঙ্গে রান্নার কাজে যোগ দিত।
কোন কথা নেই মুখে, কাজের লোক না করতো, বৌদিমণি তোমায় কিছু করতে হবে না। কিন্তু রোহিনী শুনতো না ! ওদের বলতো আমি তো কিছুই করছি না শুধু তোমাদের একটু দেখিয়ে দিচ্ছি, এতটুকু করতে দাও, নয়তো আমি হাঁপিয়ে যাব বসে বসে। মাঝে মাঝে শাশুড়ি ধনী-গরীবের তুলনা টেনে খুঁচিয়ে কথা বলতেন । কিন্তু রোহিনী কোনো কথা বলতো না মুখের উপর ।
একদিন রাতে রোহিনীর মাংস খেতে ইচ্ছে করছে না। শাশুড়ি মা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আসলে মাংস খেয়ে তো অভ্যাস নেই তাই ভালো লাগছে না । রোহিনী কিছু বলে না । চুপচাপ খেয়ে উঠে যায় । একদিন শাড়ি নিয়ে শুনিয়ে দিলেন, তুমি তো দামী শাড়ি পরে অভ্যস্ত নও, এখন আমাদের পরিবারে বিয়ে হয়ে এসেছো, ধীরে ধীরে সব অভ্যাস হয়ে যাবে।
এইভাবে প্রায় কথা শুনতে হতো রোহিনীকে । আরো অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়েছে ওকে। রোহিনীকে নিয়ে কখনো কোথাও ঘুরতে যেতেন না । ছেলের সঙ্গেও খুব একটা ঘোরাঘুরি করার অনুমতি ছিল না । এদিকে রূপম ছিল বড়লোকের বখাটে ছেলে। চরিত্র দোষ না থাকলেও নেশায় আসক্তি ছিল। সবসময় নেশা করে থাকতো । রোহিনীর সঙ্গে কী হচ্ছে সে জানতই না । রোহিনীও কিছু বলেনি কোনদিন। কারণ সে প্রেম করে নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছে, এখন দোষারোপ কাকেই বা করবে।
এইভাবেই দুবছর পর রোহিনী ও রূপমের ঘর আলো করে একটি ছোট্ট পরী এলো। মেয়ে দেখে শাশুড়ি মায়ের আবার মুখভার । নাতনির মুখে ভাত একদম সংক্ষেপে সারলেন ।
ধীরে ধীরে ছোট্ট পরী দুবছরের হয়ে উঠল । ঠিক সেই সময় হঠাৎ একদিন রূপমের শরীর খারাপ হয়ে গেল । এতো খারাপ হলো, যে কথা বন্ধ হয়ে গেল । ধীরে ধীরে শরীরের সব অঙ্গ বিকল হতে শুরু করলো । এবং কিছুদিনের মধ্যেই রূপম মারা গেল ।
কোনো বিত্তই কাজে লাগলো না । এখন শ্বশুর, শাশুড়ি সবাই ওই নাতনিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। একমাত্র ছেলের ওই একটিমাত্র মেয়ে । আদরের নাতনি। এখন রোহিনীও আদরের হয়ে উঠেছে । রোহিনীকে নিয়ে এখন শ্বশুর-শাশুড়ি ঘুরতে যান। ছেলেকে হারিয়ে বুঝতে পারলেন টাকা, পয়সা, সোনাদানা সব অর্থহীন জীবনের বিনিময়ে ।।