দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),০৪ অক্টোবর : কয়েকদিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে । তার ওপর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার উপদ্রপ । এদিকে দিন রাত মশার উপদ্রপে অতিষ্ট হয়ে আজব কান্ড ঘটিয়ে ফেললেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার খুর্তুবা গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলি শেখ নামে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি । পেশায় কৃষক ওই ব্যক্তি আজ বুধবার সকালে একটি পলিথিনের ব্যাগে জীবিত ও মৃত মিলে শ’দেড়েক মশা ভরে সটান চলে আসেন মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালে । হাসপাতালের আউটডোরে থাকা চিকিৎসককে মশা ভর্তি পলিথিনের ব্যাগ দেখিয়ে বলেন,’আমি চিকিৎসা করাতে আসিনি, স্যার । মশার উপদ্রব আর সহ্য হয় না । কোথাও একটু দাঁড়ালেই ছেঁকে ধরছে । একদিকে মশার বিষাক্ত কামড়ের যন্ত্রণা, তার ওপর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় তো রয়েছেই । মশার উপদ্রপ থেকে যাতে রেহাই পাই তার জন্য কিছু একটা করুন,স্যার ।’
এদিকে ওই ব্যক্তির এই প্রকার কান্ডকারখানা দেখে হেঁসে লুটোপুটি খান চিকিৎসক জুলফিকার আলিসহ উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা । জুলফিকার আলী বলেন, ‘বর্তমানে লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে একথা সত্য । তবে সাপে কাটলে সেই সাপ ধরে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসতে দেখেছি । কিন্তু এভাবে কাউকে মশা ধরে হাসপাতালে আসতে দেখেনি । বিষয়টি খুবই অদ্ভুত লেগেছিল আমাদের কাছে ।’
কিন্তু খুর্তুবা গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলি শেখের মশা ভরে হাসপাতালে আনার বিষয়টি আজব হলেও মশার লার্ভা ধ্বংসের বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও স্বাস্থ্যদপ্তরের যে যথেষ্ট গাফিলতি আছে তা স্পষ্ট । রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । তবে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ না থাকলেও, শহর এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক । গত শনিবারেও দক্ষিণ দমদমের বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যু হয় ডেঙ্গি মশার কামড়ে । তার ঠিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণ দমদম পৌরসভা ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাঙুর শ্যামাপ্রসাদ কলোনির বাসিন্দা এক প্রৌড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । বর্তমানে রাজ্য জুড়ে ৪৫,০০০ এর বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বলে খবর । এদিকে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা ও গাফিলতিকে দায়ী করে কলকাতা হাইকোর্টে মঙ্গলবার দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
যদিও গাফেলতির প্রসঙ্গে মমঙ্গলকোট ব্লকের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জুলফিকার আলি বলেন,’আমরা মশার লার্ভা নিধনে এলাকায় পদক্ষেপ করছি। পাশাপাশি মানুষদের সচেতন করছি। তবে এই কাজে সবার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ।’ যদিও প্যাকেটে মশা ভরে নিয়ে আসা মনসুর আলী শেখের দাবি,আজ পর্যন্ত তাদের গ্রামে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়নি । এলাকায় নোংরা আবর্জনা পরিষ্কারের বিষয়েও পঞ্চায়েতের মধ্যে তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়না । যেকারণে মশা মাছির উপদ্রব বর্তমানে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ।।