এইদিন ওয়েবডেস্ক পূর্ব বর্ধমান,০৩ মে : ভোট গননা শেষ হতেই পূর্ব বর্ধমান জেলার ব্লকে ব্লকে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে । ভাঙচুর চালানো হয়েছে বাড়িঘর,দোকানপাট । এমনকি এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার গাড়ি আটকে ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁকে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে । রবিবার বিকেল থেকে সোমবার পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম,আউশগ্রাম ও কালনায় একের পর এক বিজেপি নেতা ও কর্মীদের তৃণমূলের হামলার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ ।
রবিবার ছিলে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গননা । যাবতীয় এক্সিট পোলের সমীক্ষাকে কার্যত ভুল প্রমানিত করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । ২১৩ টি আসন নিয়ে রাজ্যে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়তে চলেছে ঘাসফুল । এদিকে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি বিজেপি শিবির । বিজেপির প্রাপ্য আসন ৭৭ ।
রবিবার দুপুর থেকেই একের পর এক আসনে জয়ের খবর আসতেই রাজ্য জুড়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মী ও সমর্থককরা । অন্যদিকে কার্যত মুষড়ে পড়ে গেরুয়া শিবির । কিন্তু উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি বিজেপি নেতা ও কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে ।
ভোটের ফলাফল ঘোষনা হতেই ভাতারের ক্ষেতিয়া গ্রামের বাসিন্দা পার্থসারথি মাকড় নামে বিজেপির এক বুথ সভাপতির পারিবারিক দোকানে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে । পার্থসারথিবাবু ক্ষেতিয়া গ্রামের ২৪০ নম্বর বুথের বুথ সভাপতি । তাঁর ভাইপো দীপ্তিমান মাকড় এক সময়ে বাম ছাত্র নেতা ছিলেন । বিধানসভা ভোটের কিছু দিন আগে স্থানীয় বিজেপি নেতা সৌমেন কার্ফার হাত ধরে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন । এবারের নির্বাচনে দলের হয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গেছে পার্থসারথিবাবু ও তাঁর ভাইপো দীপ্তিমানকে ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ক্ষেতিয়া গ্রামের মূল রাস্তার এক প্রান্তে বাড়ি পার্থসারথিবাবুদের । ঠিক তার উলটো দিকে রয়েছে তাঁদের পারিবারিক মুদিখানার দোকান । দোকানটি ইঁটের দেওয়াল অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া । অভিযোগ,রবিবার রাত্রি প্রায় দশটা নাগাদ ১০০-১৫০ জনের একটি দল আচমকা পার্থসারথিবাবুদের মুদিখানা দোকানেতে চড়াও হয় । তারপর দোকানঘরের অ্যাসবেস্টসের চালে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি দোকানে লুটপাট চালানোর পর তালা ঝুলিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ । যদিও এদিন বিকেল পর্যন্ত এনিয়ে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে । তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের ভয়েই পার্থসারথিবাবুরা থানায় অভিযোগ জানাতে যেতে পারছেন না বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের । এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে পার্থসারথি বাবুরা ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ।
এদিকে বিজেপি নেতার দোকানে হামলার পাশাপাশি গ্রামে টাঙানো বিজেপির সমস্ত পতাকা খুলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে । সোমবার গ্রামের রাস্তায় সবুজ আবীর মাখা একদল লোকজনকে বিজেপির দলীয় পতাকার স্তুপে আগুন ধরিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায় । সেই সঙ্গে ক্ষেতিয়া গ্রামে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অল্পবিস্তর ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ ।
ভাতারের পাশাপাশি মঙ্গলকোটের সাগিরা,নিগন মাঝিগ্রাম, চাকুলিয়া প্রভৃতি এলাকাতেও বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে । সাগিরা গ্রামে বিজেপির একটি দলীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । মঙ্গলকোট এলাকার একাধিক গ্রাম মিলে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে । এছাড়া কেতুগ্রামের বিজেপি কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, শাসকদলের হামলার ভয়ে তাদের অনেক কর্মী ইতিমধ্যেই গ্রাম ছাড়া রয়েছেন ।
তবে বিজেপি নেতা কর্মীদের উপর সব থেকে বেশি হামলার খবর পাওয়া গেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থেকে । জানা গেছে,এদিন সকালে আউসগ্রাম এর শিবদা গ্রামের বাসিন্দা গৌতম ঘোষ নামে বিজেপির এক কাউন্টিং এজেন্টের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের লোকজন । অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বাঁচেন । ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে শিবদা বাসস্ট্যান্ডে গণেশ ঠাকুর নামে এক বিজেপি কর্মীর সেলুনেও । এছাড়া আউসগ্রাম এর নওয়াদা, বেরেণ্ডা, ভূয়েরাসহ একাধিক গ্রামে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের উপর হামলার পাশাপাশি তাঁদের বাড়িঘরে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গিয়েছে ।
অন্যদিকে পুর্ব বর্ধমানে বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সহ সভাপতি দেবব্রত রায় ওরফে খাদিমের রায়ের গাড়ি আটকে গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি বর্ষীয়ান ওই নেতাকে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমুলের বিরুদ্ধে । মন্তেশ্বরের বাসিন্দা খাদিমবাবু জানিয়েছে,রবিবার তিনি গননা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন । তখন ভোটের ট্রেন্ড মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল । তৃণমূল কর্মীরা খুব উচ্ছ্বাস করছিল । সেই সঙ্গে তাঁদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল তৃণমূল কর্মীরা । এরপর তিনি পুলিশের পরামর্শে গননা কেন্দ্র থেকে ফিরে আসছিলেন ।
খাদিমবাবুর অভিযোগ, ‘আমার নিজস্ব গাড়িতে চড়ে ৪-৫ জন মিলে বাড়ি ফিরে আসছিলাম । কিন্তু একটি স্করপিও গাড়ি ও একটি বাইক যে আমাদের পিছু ধাওয়া করছে সেটা নজরে পড়েনি । আমাদের গাড়ি কালনার লিচুতলার কাছে আসতেই ওরা পথ আটকায় । তারপর স্করপিও গাড়ি থেকে বাঁশ,লাঠি, থান ইঁট বের করে আমাদের উপর চড়াও হয় । আমার গাড়িতে ব্যাপক ভ্যাঙচুর চালায় । তারপর আমাকে গাড়ি থেকে বের করে ব্যাপক মারধর করে । স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে ওই দুষ্কৃতিরা পালিয়ে যায় ।’ তাঁর অভিযোগ,কুসুমগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি বাবুল খানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ খাদিমবাবুর । যদিও বাবুল খান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে খাদিম রায়কে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় । তাঁর হাত,পাঁজর, মুখে গুরুতর চোট লেগেছে বলে জানা গেছে । রাতেই এনিয়ে কালনা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিজেপি নেতা । পুলিশ অভিযুক্তদের সন্ধান চালাচ্ছে৷
খাদিম রায় জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মালডাঙ্গা-মেমারী রুটের বাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন । তাঁদের সংগঠনের অফিসটি রয়েছে মালডাঙ্গা বাস টার্মিনালে । মালডাঙ্গায় তৃণমূল প্রার্থী জিততেই এদিন সকালের দিকে তৃণমূলের লোকজন এসে ইউনয়নের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যায় বলে তাঁর অভিযোগ । যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ।।