দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৪ অক্টোবর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক অর্পণা মুখোপাধ্যায়ের উদ্দ্যেশ্যে মাওবাদীর নাম করে দেওয়া হুমকি চিঠির পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর । আজ বুধবার সকালেই ভাতার হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম ( সিএমওএইচ) । তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী । তবে সিএমওএইচ এর সঙ্গে জেলার কোনো পুলিশ কর্তাকে দেখা যায়নি । সিএমওএইচ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘ভাতার হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কাছে মাওবাদীর নাম করে ৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে । চিঠির সঙ্গে একটা কার্তুজও ছিল । টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলাও হুমকি দেখানো হয়েছে । আজ টাকা দেওয়ার কথা । তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ফোন কল আসেনি । বিষয়টি গতকালই স্বাস্থ্য ভবন ও পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে ।’
উল্লেখ্য,ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভাতার ছাড়াও আশপাশের মঙ্গলকোট,মন্তেশ্বর প্রভৃতি ব্লক থেকেও প্রচুর রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন । ফলে প্রতিদিন আউটডোরে থাকে প্রচুর ভিড় । কিন্তু সেই তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে । মাত্র কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে হাসপাতালে মোতায়েন রাখা হয় । হাসপাতালে নেই সিসিটিভির ব্যবস্থা । এমনকি হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর খুব কম উচ্চতার এবং প্রাচীরের কোথাও কোথাও ধ্বসে পড়েছে বলে অভিযোগ । ফলে হাসপাতালের রোগী,চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদা প্রশ্ন থেকেই যায় । হাসপাতালের নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ একাধিক বিষয়ে বিএমওএইচ সঙ্ঘমিত্রা ভূমিকা নিয়েও চাপা ক্ষোভও আছে এলাকার মানুষের । মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে থাকে ।
ভাতার হাসপাতালের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিএমওএইচ বলেন,’আগে হাসপাতালে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকতো । গত কালকের ঘটনার পর সিভিক ভলান্টিয়ারদের পাশাপাশি একজন এএসআইকে রাখা হয়ে । এর বাইরে আমরা কিছু ইমপ্লিমেন্ট করতে যাচ্ছি । হাসপাতালে সিসিটিভি লাগানো ও নিরাপত্তা বাড়ানোর হবে । পাশাপাশি হাসপাতালে আগতদের জন্য ভিজিটিং কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে,যাতে হাসপাতালে আগতদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় । আগে সিসিটিভি ছিল না, ইনস্টল করার জন্য বিএমওএইচকে বলেছি, আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে ইনস্টল হবে ।’
প্রসঙ্গত,মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক অর্পণা মুখোপাধ্যায়ের হাসপাতালের বহির্বিভাগের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দরজার সামনেই একটি চিঠি পড়ে থাকতে দেখেন । চিঠি খুলে তিনি দেখেন,নিজেকে মাওবাদী পরিচয় দিয়ে জনৈক তপন মাহাতোর স্বাক্ষর করা লাল কালি দিয়ে লেখা ওই চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে যে বুধবার পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। না হলে চিকিৎসকের গোটা পরিবারের প্রাণ সংশয়ের হুমকি দেওয়া হয়েছে চিঠিতে । টাকা নির্দিষ্ট জায়গাতেই দিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে চিঠিটি পেয়েই আতঙ্কিত দন্ত চিকিৎসক প্রথমে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানান । পরে তিনি ভাতার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । পাশাপাশি একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চিঠিটি শেয়ারও করা হয় । যদিও প্রাথমিকভাবে ভাতার থানার পুলিশের অনুমান যে মাওবাদীদের নাম করে কেউ এই কাজ করেছে।এর সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও সম্পর্ক নেই । পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে ।।