প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ মে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ও মেকি রাম ভক্ত সাজাটাই বিজেপির কাল হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । সেই সঙ্গে তাঁদের মতে, বাংলার মানুষ ফের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠনের পক্ষে রায় দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন এই বাংলা ধর্ম নিরপেক্ষতার পীঠস্থান । বাংলার মাটি তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্জয় ঘাঁটি । একই রকম জবাব দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভোটাররাও বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদি কিংবা অমিত শাহ-র ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতিতে তাঁদের সায় নেই । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ই রয়েছেন তাঁদের ভরসার কেন্দ্র বিন্দুতে । তাই পূর্ব বর্ধমান থেকেও বিজেপিকে অস্তাচলে পাড়ি দিতে হল বলে মনে করছেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ ।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনটা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ছিল দুর্গ দখলে রাখার লড়াই । সেই লড়াইয়ে প্রথম থেকেই তৃণমূলকে সব থেকে বেশী সাথ দিয়ে গিয়েছেন মহিলারা । এর অন্যতম কারণ ছিল রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি । এর ফলে গৃহিনী মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল । যার ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির আনা অনিয়ম ও কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ মহিলাদের এই ক্ষোভের কাছে ধোপেই টেকেনি । পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য যে যে উন্নয়ন কাজ করেছেন ও আগামীদিনে মহিলাদের জন্য যে যে উন্নয়ন কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেই বিষয়েও মহিলারা আস্থা দেখিয়েছেন ।
রাজ্যের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলাকে এক সময়ে বলা হত বামেদের দূর্গ। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পালা বদলের পর সেই বাম দূর্গ ভেঙে খান খান হয়ে যায়।তারপর থেকে জেলার গ্রাম গ্রামান্তর ,শহর, মফশ্বল সব জায়গা থেকে কাস্তে- হাতুড়ি- তারা কার্যত বিলিন হয়ে যায় । সেই জায়গার দখল নেয় ঘাস ফুল।মাঝে গত লোকসভা নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভাবেই এই জেলায় বিজেপি মাথা তুলে দাঁড়ায় । তারপর জেলায় বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি শিবিরে গা ভাসিয়ে দেন
অনেকেই । তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে জয়ী হওয়া সাংসদ সুনীল মণ্ডল তেমনই রয়েছেন তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে বিধায়ক হওয়া বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ও সৈকত পাঁজা। মোদি,অমিত শাহ ও নাড্ডাজীর হাত ধরে পূর্ব বর্ধমান সহ গোটা বাংলায় জুড়ে পদ্ম ফুটবে বলে দলত্যাগীরা প্রত্যয়ী থাকলেও বাংলার ভোটাররা তাতে পুরোপুরি জল ঢেলে দিয়েছেন তা ভোটের ফলাফলেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে ।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছে ,জনগন মনে করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যারা বিজেপিতে গিয়েছেন তাঁরাই ছিলেন তৃণমূলের ’পলিউশন’।সেই ’পলিউশান থেকে তৃণমূল মুক্ত হয়ে যাওয়াতেই বাংলার জনগন ’পলিউটেড’ হয়ে যাওয়া বিজেপিকে ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলকে আঁকড়ে ধরে । এছাড়াও অতি সন্তর্পণে আদি বিজেপি নেতা ও কর্মীরা নব্য বিজেপি নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার খেলা চালিয়ে যায় । আর এই সবের পরিপ্রেক্ষিতেই বাজিমাৎ করে ফেলে তৃণমূল ।’দলবদলু’ যাদের যাদের বিজেপি প্রার্থী করেছিল তাঁদের সবাইকে বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করাতেই এবারের বিধানসভা ভোটে ভরাডুপি হয়েছে বিজেপির ।আর আব্বাস সিদ্দিকিকে পরিত্রাতা ভেবে ভোটে লড়াইয়ে নামার চরম মাসুলও এবার গুনতে হল সিপিএম ও কংগ্রেসকে । সর্বশেষ ঘোষনা অনুযায়ী গোটা বাংলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যেমন জয়জয়কার তেমনই জয়জয়কার পূর্ব বর্ধমানেও। এই জেলার ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৬ টিতেই জয় নিশ্চিত করে দুর্গ অটুট রাখলো তৃণমূল ।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন ,“এই জয় বহিরাগত সাম্প্রদায়ীক শক্তির বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের জয় ।বাংলার মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা উন্নয়নের জয়।’।