এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৭ সেপ্টেম্বর : উচ্চশিক্ষার নামে ইউরোপে গিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের মুসলিম যুবকরা । শুধু তাইই নয়,তারা গ্রিনকার্ডে গোটা পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছে ইউরোপে । তারপর ওই সমস্ত যুবক ও তাদের পরিবার মিলে বিস্তার করছে সন্ত্রাসবাদের জাল । সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩) রাতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেজবাহসহ আনসার আল ইসলামের ৬ সন্ত্রাসবাদীকে গ্রেফতার করেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) যৌথবাহিনী ।ঢাকার উত্তরা, বনানী, বনশ্রী ও যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় । ধৃতদের নাম মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে আবু মাসরুর (৫০), শেখ আশিকুর রহমান ওরফে আবু আফিফা (৪৯), সাদী মোহম্মদ জূলকার নাইন (৩৫), মোহম্মদ কামরুল হাসান সাব্বির (৪০), মোহম্মদ মাসুম রানা ওরফে মাসুম বিল্লাহ (২৬) ও সাঈদ মোহম্মদ রিজভী (৩৫) । ধৃতরা প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত ৷ ইউরোপে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া দুই পড়ুয়া সহ রয়েছে এক চিকিৎসকও রয়েছে ওই দলে । ধৃতদের কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ, ৬টি মোবাইল ফোন, সন্ত্রাসবাদের প্রচারের বই এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত ডায়েরি ও নোট বই উদ্ধার করা হয় । ধৃতদের জেরা করে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের শিকড়কে মজবুত করার পরিকল্পনার কথা জানতে পারে তদন্তকারীরা ।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে নেতাদের বক্তব্য দেখেও উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের কথা বলে ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তথাকথিত জিহাদের নামে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী করে তুলতো তারা।
এই উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদের তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে মসজিদ,ভাড়া বাড়ি বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো। বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার মিজবাহ ওরফে আবু মাসরুর দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০০৪ সালে ইউরোপের একটি দেশে যান এবং ফিন্যান্স এ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। ২০১০ সালে গ্রিনকার্ড স্কীমের মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে সপরিবারে ইউরোপে একটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি আশিক ওরফে আবু আফিফার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন এবং দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। মিজবাহ ওরফে আবু মাসরুর ইউরোপে অবস্থানের সময় সংগঠনের নাম না বলে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন এবং নতুন সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা করে উগ্রবাদে আগ্রহী করতেন।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবরে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে বাংলাদেশে এসে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম করতে থাকেন। তিনি ঢাকা, ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, লক্ষীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক বৈঠক, সভায় অংশগ্রহণ এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায় করতেন।
জানা গেছে,শেখ আশিকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএস উত্তীর্ণ, জূলকার নাইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার,কামরুল হাসান সাব্বির বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণ, সাঈদ মোহম্মদ রিজভী পেশায় একজন চিকিৎসক,মাসুম রানা স্নাতকোত্তর পড়ুয়া । বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তায় শেখ হাসিনা সরকার ।।
ছবি ও তথ্যসূত্র : অন্বেষণ ডট নিউজ ।