এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২২ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতের রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) নিজেদের ‘রক্ষাকবচ’ বলে মনে করে । কংগ্রেসসহ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের লোভে তোষামদের রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ বাংলাদেশের হিন্দুরাও । তাই তারা মনেপ্রাণে চায় বারবার ভারতে ক্ষমতায় আসুক বিজেপি । তাদের এই মানসিকতার প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেল সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে । ভিডিওতে দেখা গেল আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয় কামনার পূণ্য কলস ও প্রদীপ জ্বেলে প্রার্থনা করছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সদস্যরা । পূণ্য কলসের সামনে হাত জোড় করে তাঁরা ঈশ্বরের কাছে আসন্ন নির্বাচনে বিজিপির জয়ের জন্য প্রার্থনা করেন । পাশাপাশি তাঁরা দাবি তোলেন যে বাংলাদেশে জিহাদি হামলা হলে হিন্দুরা যাতে প্রাণ বাঁচিয়ে ভারতে চলে আসতে পারে সেজন্য তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়া হোক । এদিকে আগামী নির্বাচনে বিজেপির জয় কামনা ও দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবি জানানোয় জিহাদিদের রোষের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের ওই হিন্দু সংগঠনটি ।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের(Gobindo Chandra Pramanik) উপস্থিতিতে একটা লম্বা টেবিলের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ । তাঁদের প্রত্যেকের সামনে একটি করে প্রদীপ জ্বলছে । টেবিলের মাঝ বরাবর রাখা হয়েছে একটি পিতলের কলস । গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিককে বলতে শোনা গেছে,’আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে নির্বাচন হতে চলেছে । একটা আলাদা দেশ,কিন্তু ওই দেশের সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত । সেখানে আমাদের সমস্ত তীর্থস্থান রয়েছে । আমাদের সকল আত্মীয়স্বজন সেখানে রয়েছে । আমরা বিপদে আপদে পড়লে সেখানে আশ্রয় নিই । ১৯৭১ সালে আমাদের প্রচুর মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে । তাই সেখানে ভালোমন্দ কিছু হলে, তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়ে ।’
তিনি বলেন,’এখন পাশের দেশে নির্বাচন হতে চলেছে । আমরা চাই ভারতের যে রাজনৈতিক দল আমাদের জন্য কল্যাণকামী,তারা যেন নির্বাচিত হয় । ইতিপূর্বে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আমাদের দেশের রমনাকালী মন্দির,ইসকনসহ বিভিন্ন মন্দিরের উন্নতিকল্পে শত দুই থেকে আড়াই’শ কোটি টাকা দিয়েছে এবং তারা বলেছে যে ভবিষ্যতে যদি তারা ফের ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদ বাড়াবে । আমরা আবেদন জানিয়েছি যে হিন্দুদের জন্য ভিসামুক্ত করা হয় । এই বিষয়গুলি তারা ধীরে ধীরে করবে বলে জানিয়েছে । এছাড়া বাংলাদেশের হিন্দুরা যাতে নিখরচার তীর্থ ভ্রমণ করতে পারে তার জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি ।’
গোবিন্দবাবু বলেন,’বাংলাদেশের রোগীরা,বিশেষ করে হিন্দুদের বিনা খরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি । সেই সঙ্গে আমরা দ্বৈত নাগরিকত্ব চেয়েছি । কোনো সময় বিপদ আপদ হলে আমরা যাতে রক্ষা পেতে পারি তার জন্য আমরা এই আবেদন জানিয়েছি । সেটাও বিবেচনাধীন রয়েছে । সেটা একমাত্র করতে পারে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার । কারন তারা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ।’
পাশাপাশি ভারতের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি তিনি বিষোদগার করে বলেন,’বাকি যারা আছে, তারা মুসলিম তোষামোদে ব্যস্ত । গত কালও দেখলাম রাহুল গান্ধী ঘোষণা করেছে যে তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে মসজিদ ও গির্জার বিদ্যুতের বিল ফ্রি করে দেবে । কিন্তু হিন্দুরা তীর্থে গেলে ট্যাক্স দিতে হবে ।’
তিনি বলেন,’সারা বিশ্বে হিন্দুত্বের নবজাগরণ হচ্ছে । বাংলাদেশ হিন্দুদের জন্য পবিত্র ভূমি । অনুকুল ঠাকুর,হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরসহ সমস্ত মহাপুরুষদের চরণধূলিতে ধন্য বাংলাদেশ । সেই কারনে এই দেশ আমরা ছাড়তে চাই না । এই দেশ যেন ফের ভারতের অংশ হয়,সেটাই আমরা চাই । আর সেটা পূরণ করতে পারে একমাত্র বিজেপি সরকার । তাই আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, নরেন্দ্র মোদীর সরকার শুধু এইবারই নয়,বারবার আসুক । আমরা ফের অখণ্ড ভারতের অংশীদার হতে চাই । তাই ভারতে বসবাসকারী আমাদের সকল আত্মীয়ের কাছে আমাদের অসুরোধ যে তারা যেন সকলে বিজেপিকে ভোট দেয় ।’
এদিকে এই ভিডিওতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের মুসলিমরা । রিয়াজ খন্ডকর নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছে,’ভিসামুক্ত করবে মানে ? এটা কি ইন্ডিয়ার বাপের দেশ..।’ সর্দার আহমেদ খশরু লিখেছে, ‘এদেরকে মৌলবাদী গোষ্ঠী বলে । দেশদ্রোহী,বাংলাদেশ এর শত্রু।’
আলি ভাই নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছে,’বাংলা দেশের মোনাফে মুসলমানেরা দেখ ।’ আরএ রাহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি লিখেছে,’দেশদ্রোহী, ভারতীয় এজেন্ট । বাংলাদেশের মানচিত্র মুছে ফেলে
বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য দেখতে চায় ওরা।’
মহম্মদ সাদ্দাম আলির প্রতিক্রিয়া, ‘এরা হচ্ছে বাংলাদেশের শত্রু ।’।